‘অদম্য শেখ হাসিনা’

শেখ হাসিনার পক্ষে একটি রাজনৈতিক সাক্ষ্য

স্বরলিপি
| আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:০৪ | প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:০২

বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা কখনো নীতি নির্ধারক আবার কখনো নীতি নির্ধারকের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী। সম্প্রতি শেখ হাসিনা যতোভাবে আলোচিত হয়েছেন তিনি নীতি নির্ধারক হিসেবে আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছেন। কিন্তু তিনি কি আদৌ ক্ষমতার বাইরে ছিলেন! এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে আগ্রহী হয়ে ওঠা খুব স্বাভাবিক। যখন আলোচনার বইটি হয় ‘অদম্য শেখ হাসিনা’। একটি মাত্র গল্প তো নয়, এখানে অনেক অনেক গল্প। বাংলাদেশের আলোচিত সব লেখকের লেখা গল্প, গদ্য, মুক্তগদ্য, ইতিহাসের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা স্মৃতিকথা। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনাকে পাওয়া যায় সংগ্রামরত, ক্ষমতাসীন মমতাময়ী, এবং সাহিত্যিক রূপে। তবুও তাকে পরিপূর্ণরূপে পাওয়া গেলো না!

ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা লেখকের কলমে স্থান পেয়েছেন যতোটুকু, ততোটুকু স্থান পায়নি বিরোধী দলে থাকাকালীন তার বলিষ্ঠ ভূমিকা। ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র নীতিও কোনো লেখক আলোচনার প্রধান বিবেচ্য করে তোলেননি। সব কথা বাদ দিয়ে যদি ভাবা যায়, তাহলে বলতে হয়- বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার যে বলিষ্ঠ ভূমিকা তা যদি বিস্তারিত উঠে আসতে পারতো।

আরিফুর রহমান দোলনের সম্পাদনায় ‘অদম্য শেখ হাসিনা’ গ্রন্থটিতে প্রধান হয়ে উঠেছে-

’৭৫-পরবর্তী রাজনীতির বড় বাঁকবদল। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে। প্রায় প্রতিটি লেখায় শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের কথা প্রাধান্য পেয়েছে তবে ম্যাচিউর পরিণতি দেখতে পাওয়া যায় স্বদেশ রায়ের লেখায়।

‘সেদিন আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতা চাননি শেখ হাসিনা দলের সভাপতি হোন।…১৯৮৬ সালের পার্লামেন্ট থেকে ’৮৮ সালে পদত্যাগ করে শুধু রাজপথে এসে বিএনপির পুনরায় প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হাসিনার মোটেও ইচ্ছা ছিল না। এই ইচ্ছে না থাকাটাই ছিল সঠিক রাজনীতি। কিন্তু শেখ হাসিনা সেদিন দলের একশ্রেণির নেতার চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন’ (পৃষ্ঠা-১৬৮)।

ক্ষমতাসীনদের পক্ষে মেদহীন আলোচনা, মোহবিযুক্ত ইতিহাস সামনে নিয়ে আসে। সামনে চলে আসে জাসদের উত্থানের গল্প। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগে যারা প্রধান হয়ে উঠেছিলেন শেখ হাসিনার উপস্থিতির পর তাদের ভূমিকা কি হয়েছিল তারও মোটামুটি ধারণা পাওয়া যাবে।

এ গ্রন্থ পাঠের পর, প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তি মার্কিন, সৌদি ও পাকিস্তানকে কীভাবে মোকাবিলা করেছিলেন শেখ হাসিনা- তার রূপরেখা জানার আগ্রহ পাঠকের প্রবল হতে পারে। বইটিতে সিমিলার ঘটনা নিয়ে অনেক লেখকের লেখা আছে। থাকতেই পারে। সাম্প্রতিক ঘটনাও পেয়েছে প্রাধান্য। কোভিড-১৯ এর সময়ে শেখ হাসিনার নীতি নির্ধারণ এসেছে আলোচনায়। এতে ধরে নেয়া যায় এ গ্রন্থের সম্পাদক লেখকদের সমসাময়িক লেখা যুক্ত করেছেন। কাউকে কাউকে হয়তো বিষয়ও নির্ধারণ করে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তি মোকাবিলায় শেখ হাসিনা- বিষয়ে কোনো লেখা যুক্ত করতে পারতেন অনায়াসে।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনা জ্বালাও পোড়াওয়ের রাজনীতি করতে পারেন বলে তখন একটি সংশয় তৈরি হয়েছিলো বাংলাদেশের রাজনীতির অন্দরমহলে। কিন্তু তিনি তা করেননি। কীভাবে সে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন ইতিহাসের পরিপূর্ণ পাঠের জন্য এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ লেখার উপস্থিতি দরকার ছিলো এ গ্রন্থে।

প্রভাষ আমিনের লেখায় ভারসাম্যপূর্ণ সমালোচনা আছে। তবে সে দিকটি তুলে ধরার জন্য প্রভাষ আমিন অক্ষরে অক্ষরে কিছুটা পথ কাঠখড় পুড়িয়ে তারপর গিয়ে লিখেছেন ‘যিনি পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেন সাধারণ আদালতে, বিচার পেতে বছরের পর বছর ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেন, তাঁর আমলে অবাধ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড… মানতে বড় কষ্ট হয়। (পৃষ্ঠা-২৫০)

‘ক্রসফায়ার’-এর মাধ্যমে বিচার সংস্কৃতি চলাকালীন বাংলাদেশের বিপক্ষ রাজনীতির হাল হকিকত কি? এ নিয়ে সমালোচনায় সুশীলরা কতটুকু এগিয়ে। এ নিয়মের বিপক্ষে কোনো সংগঠন, কোনো গণ-আন্দোলন হচ্ছে না কেন, মিডিয়া কি ভূমিকা রাখছে- সেটা জানা বা সে বিষয়ে বর্ণনা দরকার ছিল।

প্রভাষ আমিনের লেখায় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ও ব্যক্তি শেখ হাসিনা মুখোমুখি ছায়া ফেলেছে। যখন বলা হচ্ছে, ‘যার দিনের শুরু হয় ফজরের নামাজ আদায় আর কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে, তাঁকেই কি না শুনতে হয় ‘নাস্তিকদের নেত্রী’। আামি জানি, তিনি ধর্মনিরপেক্ষ, সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক; তবুও ভোটের রাজনীতির বিবেচনায় তাঁকে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার পাশাপাশি রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখতে হয়।…আমি জানি, ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে এমন অনেক কিছু করতে হয়। (পৃষ্ঠা-২৫১)

স্বকৃত নোমানের লেখায় শেখ হাসিনার সব কাজের প্রতি সমর্থন আসে দ্য প্রিন্স, নিকোলো ম্যাকেয়াভেলির উদ্ধৃতি উপস্থাপনের মাধ্যমে। ‘রাজ্যরক্ষার ক্ষেত্রে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হোক না কেন, তা রাষ্ট্রনায়ককে গ্রহণ করতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে যদি সেটা অসৎ পদক্ষেপও হয়, তাহলেও আপত্তি নেই।’

ড. বদরুল হাসান কচির লেখায় প্রাধান্য পেয়েছে সংবিধান, আইনের শাসন। উল্লেখ করা হয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচারের মধ্যে দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ।...জঙ্গিবাদ দমনে দক্ষ নেতৃত্বের ফলে শেখ হাসিনার প্রতি জনগণের আস্থা আরও বেড়েছে।

এ সংকলন গ্রন্থটি পাঠ পর্যালোচনা একজন পাঠকের ধারণা দেবে শেখ হাসিনার যেসব সিদ্ধান্ত আপাতদৃষ্টিতে গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক সেগুলো টিকে থাকার শক্তি আসলে কোথায়!

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন ব্যাপক প্রশংসিত। ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী উল্লেখ করেছেন, ১০টি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। পদ্মা সেতু, ঢাকার মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ উল্লেখযোগ্য ঘটনা’।

বেবী মওদুদ লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

শেখ হাসিনা সংস্কৃতিমনা, মমতাময়ী এর উৎস কোথায় সে বিষয় উঠে এসেছে সেলিনা হোসেনের লেখায়। ’তার শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে নাড়ির যোগ, প্রাণের স্পন্দন। সংস্কৃতির শেকড়ে যুক্ত থাকার অবিচল সাধনা’। (পৃষ্ঠা-৬৭)।

আনোয়ারা সৈয়দ হকের লেখায় শেখ হাসিনার যাপিত জীবনের নিরাপত্তাহীনতা দারুণভাবে প্রতিপাদ্য হয়ে উঠেছে। বাংলার মানুষের জন্য তিনি এ বার্তা দিয়ে রাখলেন যে ‘বারবার তাকে শারীরিকভাবে মেরে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে, কোনো ধরনের চক্ষুলজ্জা বা আইনের ভয় না করে। এ এক আশ্চর্য দেশ! অথচ আমাদের দেশের বর্তমান ও অতীতের যতটুকু সম্মান ও সমৃদ্ধি অর্জন হয়েছে তার ভেতরে শেখ হাসিনার সিংহভাগ অবদান। (পৃষ্ঠা-৪১)

‘দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক রাজনীতিতে শেখ হাসিনার তুলনীয় আন্তর্জাতিক সাফল্য অর্জনকারী আর কোনো নেতার সাক্ষাৎ আমরা পাইনি। (শামসুজ্জামান খান, পৃষ্ঠা-৩৯)

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন: রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিযোগিতা হবে অর্থ ও সামাজিক কর্মসূচি নিয়ে। আন্দোলন হবে সমাজ সংস্কারের।

‘এ দেশ হবে সত্যিকারের সোনায় যেন গড়া/ কন্যা তো নয়, কন্যা স্বপ্নের পরম্পরা।।’ সৈয়দ শামসুল হকের এ শব্দরা মিথ্যে নয়। কিংবা হাবীবুল্লাহ সিরাজী যখন লেখেন, ‘তার চোখ কথা বলে/ যেন চলে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’।

একবাক্যে বলতে গেলে, শেখ হাসিনার ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দৃঢ়তায় পথচলার সাক্ষ্য বহন করছে, ‘অদম্য শেখ হাসিনা’ গ্রন্থটি।

লেখক: কবি ও গল্পকার।

[email protected]

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :