চট্টগ্রামে চার সাংবাদিকসহ নয়জনের নামে দুর্নীতি মামলা

প্রকাশ | ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:১৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

প্লট নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে চট্টগ্রামের চারজন সাংবাদিক ও তাদের তিনজনের স্ত্রীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২৫ নভেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক আবু সাঈদ এ মামলা করেন।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের ১৯৯৪-৯৭ মেয়াদের সভাপতি মাহাবুব উল আলম, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, নিজামের স্ত্রী হোসনে আরা, কোষাধ্যক্ষ শহীদ উল আলম, শহীদের স্ত্রী তসলিমা খানম, যুগ্ম সম্পাদক নির্মল চন্দ্র দাস, নির্মলের স্ত্রী তপতি দাস এবং বহিরাগত মো. সেলিম ও মোছাম্মৎ হুমায়রা ওয়াদুদ।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের একটি মামলা (নম্বর ৫২/২০১৮) অনুসন্ধান করতে গিয়ে থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। সাংবাদিক নেতাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি কবরস্থানের জায়গাও। সরকার কর্তৃক লিজকৃত জায়গা শুধু সাংবাদিকদের নামে বরাদ্দ দেয়ার কথা। কিন্তু তৎকালীন কমিটিতে পদপ্রাপ্ত হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীদের নামে সুকৌশলে প্লট বরাদ্দ নিয়ে অন্যত্র বিক্রিও করা হয়েছে।

সরকার ১৯৮২ সালে বর্তমান বায়েজিদ থানাধীন শেরশাহ কলোনির পাশেই উচটিলাতে ১৬ একর খাস জায়গা লিজ দেয়। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (চউক) ১০৯টি প্লট ক্রমিক উল্লেখ ও চিহ্নিত করে রাস্তা, মসজিদ, কবরস্থানের জায়গাসহ আবাসনের অপরিহার্য জায়গা চিহ্নিত করে নকশা অনুমোদন দেয়।

এদিকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সিডিএর নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি খাস জমিসহ ১১০, ১১১, ১১২ ও ১১৩ নম্বর প্লট সৃষ্টি করে মোট ১১৩টি প্লটের একটি নকল নকশা তৈরি করে এবং এখান থেকে পরবর্তীতে বরাদ্দ দেয়।

সব সদস্য পাঁচ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ পেলেও তিনটি প্লটকে জালিয়াতির মাধ্যমে নকশা তৈরি করে নিজ স্ত্রীদের নামে বরাদ্দ দেন অভিযুক্ত সাংবাদিকরা। আবার বরাদ্দকৃত জায়গা মোটা অংকে বিক্রি করেন। এই জায়গা কেনেন উত্তর বন বিভাগের সাবেক ডিএফও আব্দুল ওয়াদুদের স্ত্রী মোছাম্মৎ হুমায়েরা ওয়াদুদ।

ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন খাগড়াছড়ির বাসিন্দা মো. সেলিম নামে এক ব্যক্তি। দুদক কর্মকর্তা জানান, সরেজমিন অনুসন্ধান করে তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় এ মামলা করা হয়।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাও আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল ও আদেশের বিরুদ্ধে মাহাবুব উল আলম গংরা সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট ডিভিশনে ২০০৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রিট আবেদন করেন। ২০০৫ সালের ৯ জুলাই অনুষ্ঠিত সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তে ওই রিট মামলা সমিতিকে পক্ষভুক্ত করে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়।

এছাড়াও রিট মামলার নিষ্পত্তি সাপেক্ষে সমিতির দোষী অপরাধী সদস্যদের সদস্য পদ বাতিল সংক্রান্ত কার্যকরী কমিটির প্রস্তাব অনুমোদন হয় এবং সমিতির তিনটি প্লটের অবৈধ বরাদ্দ সংক্রান্ত সৃজিত ইজার দালিল গ্রহিতা সমিতির সদস্য হিসেবে ভুয়া পরিচয় দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা ও দলিল বাতিলের মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

হাইকোর্ট এই রিট আবেদন ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর খারিজ করে দিয়ে আবেদনটি নিষ্পত্তি করেন। ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় অভিযুক্তদের কাছে থাকা বেআইনি বরাদ্দ পাওয়া তিনটি প্লট উদ্ধার বিষয়ে ১৫৬ সদস্যের উপস্থিতিতে এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও আসামিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে দুদকের মামলায় নয়জন আসামির মধ্যে চারজন সাংবাদিক গত ২০ বছর ধরে কোনো গণমাধ্যমেও কর্মরত নেই। ৩ নম্বর আসামি শহীদ উল আলম কয়েকবার চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও একবার বিএফইউজের সহসভাপতি ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/৩ডিসেম্বর/কেএম)