বিলুপ্তির পথে সিনেমার ব্যানার পেইন্টিং

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:৫৮

বিলুপ্তির পথে বাংলাদেশের পাবলিক আর্টের অনন্য অধ্যায় সিনেমার ব্যানার পেইন্টিং। একটা সময় ছিল যখন চলচ্চিত্রের প্রচারণা আর সাধারণ মানুষকে হলমুখী করার অন্যতম একটা মাধ্যম ছিল সিনেমার ব্যানার পেইন্টিং। কিন্তু এখন এগুলোর চল নেই বললেই চলে। তাই অভাব আর অনিশ্চিতায় দিন পার করছে এ কাজে নিয়জিত শিল্পীরা।

এক সময়কার রমরমা শিল্প ভাষার কোনো অস্তিত্বই আজ নগরে চোখে পড়ে না। প্রেক্ষাগৃহের সামনে কাপড়ের বিশাল ক্যানভাসে উজ্জল রংয়ের এই শিল্পভিত্তিক পোট্রেট শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখার তাগিতও নেই কারো মধ্যে। উজ্জল সব রংয়ে সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অতিরঞ্জিত পোট্রেট গত ৫০ বছর ধরে বয়ে ভেড়াচ্ছেন শিল্পীরা। ঢাকা যখন পূর্ব পাকিস্তান, সেই সময়ে শহীদের রক্তে করা এই শিল্পের সুদিন ফুরিয়েছে প্রায় দেড় যুগ।

শহরকেন্দ্রিক এ শিল্প ভাষার সূচনা কবে হয়েছিল তার সঠিত তথ্য না থাকলেও বাংলাদেশে প্রধানত দুটি শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল এই সিনেমা ব্যানার শিল্প। একটি শোয়েতপুর অন্যটি ঢাকা। গেল শতকের ৫০ থেকে আশির দশকের রমরমা এই শিল্পটি শত দারিদ্র্য কাজের অপ্রতুলতাকে সাথে নিয়ে পর্দার আড়ালের কিছু শিক্ষিত শিল্পীরা এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন।

রঙিন ক্যানভাসের এই শিল্পটি নিয়ে নির্মাতা অমিতাভ রেজা নির্মাণ করেছেন ‘রিকশা গার্ল’ নামে একটি সিনেমা। এ ধরনের ব্যতিক্রমী গল্পে ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা কেন করলেন? জানতে চাইলে নির্মাতা বলেন, সিনেমা কখনোই সাফল্যের কথা মাথায় রেখে নির্মিত হয় না। ভালো গল্প, চিত্রনাট্য কিংবা সিনেফ্রেমে ছবিটি দেখতে কেমন লাগবে, তার ওপর ভিত্তি করেই পরিচালক ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন।

তিনি জানান, এ ছবি নির্মাণের প্রস্তাব যখন আসে তখন মনে হয়েছে রিকশা পেইন্টিং নিয়ে মিডিয়াতে আগে সেভাবে কোনো কাজ হয়নি। এছাড়াও রিকশা পেইন্টিং আর্ট আমাদের দেশে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই মিতালি পারকিনসের এ উপন্যাসটি নিয়ে যখন কাজ করার প্রস্তাব আসে, সানন্দে রাজি হই। আরেকটা ব্যাপার হলো, কোন ধরনের গল্পে সিনেমা হিট হবে তা নিয়ে অতটা চিন্তিত নই। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে গল্প বলতে চাইছি তা সঠিকভাবে বলতে পারছি কি না। এছাড়া এমন কিছু নির্মাণ করতে চাই, যা শিল্প ভুবনে কিছুটা হলেও আঁচড় কাটতে পারে।

সিনেমার ব্যানার শিল্পী মোহাম্মদ শোয়েব জানান, ১৯৬৫ সাল থেকে তিনি আর্ট পেশায় জড়িত। জীবনে অসংখ্য সিনেমার ছবি-পোস্টার এঁকেছেন। কিন্তু ২০০৬ সালে ডিজিটাল প্রিন্ট আসার ফলে তাদের এই শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। এই কর্মশালার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের শিল্পকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

এ প্রসঙ্গে শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দ বলেন, গবেষক হিসেবে উপলব্ধি হয় সিনেমা ব্যানার পেইন্টিং ভাষা তৈরি হয়েছে একটি ব্যবহারিক প্রয়োজনে। সিনেমার প্রচারণার জন্য। জনগনের সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক আছে। সিনেমা ব্যানার শিল্পীরা এক সময় থাকবেন না, তারা বেঁচে থাকতে তাদের শিল্পের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সমন্বয় ঘটিয়ে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।

সিনেমা ব্যানার পেইন্টিং ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় চিত্রভাষা মাধ্যম হিসেবে প্রতীয়মান। এর সূত্রপাত ঘটেছিল সিনেমা হলের প্রচার কাজের মাধ্যম হিসেবে। এই অঞ্চলে চলচ্চিত্র শিল্পের প্রসার ও প্রচার এই সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের উৎপত্তি ও বিকাশে প্রধান ভূমিকা রেখেছে।

সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের উৎপত্তি খোঁজ করতে গেলে পাওয়া যায়, ১৯ শতকের শেষ ভাগে করা রাজা রবি বর্মার পশ্চিমা শৈলীতে ভারতীয় বিষয়বস্তু নিয়ে আঁকা চিত্রকলা ও জনপ্রিয় ছাপাই ছবির সন্ধান। সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের অনন্য সাধারণ চিত্রভাষা ও নন্দনতাত্ত্বিক ভঙ্গি নির্মাণে নন-একাডেমিক শিল্পীদের অবদান অনেক বড়। তাদের শিল্পবোধ ও নান্দনিক চেতনা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে এক নতুন জীবন-যাপন ঘনিষ্ঠ চিত্রভাষার জন্ম দিয়েছে।

ঢাকাটাইমস/০৪ডিসেম্বর/এলএম/এএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :