৮ কোটি পুরস্কারের অর্ধেক অন্য প্রতিযোগীদের দিলেন 'গ্রাম্য শিক্ষক'

প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৫৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নারীশিক্ষা প্রসারে অদম্য উদ্যোগের জন্য গ্লোবাল টিচার প্রাইজ ২০২০ জিতেছেন ভারতের মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রনজিৎ সিনহা দিসালে। এই পুরস্কার বাবদ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা পেয়েছেন তিনি।

তবে পুরস্কার পেয়ে যতটা না আলোচনায় এসেছেন তিনি, তারচেয়ে পুরস্কারের অর্থ ভাগের বিষয়ে বেশি প্রশংসিত হচ্ছেন। তিনি পুরস্কার জিতলেও ফাইনালে তার সঙ্গে প্রতিযোগী ছিলেন বিশ্বের নানা প্রান্তের আরও ৯ জন। তিনি সেই নয়জন ফাইনালিস্টকে প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেক ভাগ করে দিতে চেয়েছেন। গত ছয় বছর ধরে এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে, তবে পুরস্কারের অর্থ এমন ভাগাভাগির ঘটনা এই প্রথম। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার

বিশ্বের ১০জন প্রতিযোগীদের মধ্যে তিনি সেরা হয়েছেন। শুরুটা যদিও এমন চমত্‍কার কিছু ছিল না। ২০০৯ সালে পারিতেওয়াড়িতে জেলা পরিষদের প্রাথমিক স্কুলে পড়াতে যান, তখন স্কুল বলতে একটি গোশালা ও একটি স্টোর রুম। তাতে দমে না থেকে নিজের উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা করানোর নতুন দিশা খুলে দেন। স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ভাষাগত সমস্যা থাকার কারণ নিজে বইয়ের অনুবাদ করে সেই বই তাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। শুধু তাই নয়, নিজেও ভাষা আয়ত্তে আনার জন্য রীতিমতো প্রশিক্ষণ নেন। পাশাপাশি কিউআর কোড দিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উন্নতির বিকাশের ক্ষেত্রও বাড়িয়ে দেন।

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজে থেকে কবিতা, ভিডিও শুনতে ও দেখতে পায়। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও স্কুলে যেতে শুরু করে। নিজের উদ্যোগে নারীশিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে ওই এলাকায় বাল্যবিবাহ প্রথা রোধ করেন। এলাকার প্রায় একশো শতাংশ মেয়েই স্কুলে পড়াশোনা করে। নাবালক অবস্থায় বিয়ের ঘটনা ওই গ্রামে হয় না বললেই চলে।

তার এই অভিনব প্রযুক্তির পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের সামনে এলে ২০১৭ সাল থেকে রাজ্যে সব স্কুলেই সেই ব্যবস্থা চালু হয়ে যায়। পাশাপাশি দেশেই নয়, বিদেশের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা ও বিতর্কসভারও আয়োজন করেন লেটস দ্য বর্ডার্স প্রোজেক্টের মাধ্যমে।

এখনও পর্যন্ত এই প্রোজেক্টের আওতায় রয়েছেন প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থী। সেই কাজেরও স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন।

এই পুরস্কারের পর দারুণ উচ্ছ্বসিত রনজিত্‍। তার কথায়, করোনা মহামারিতে কীভাবে অনলাইনে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়, তা দেখিয়ে দিয়েছে। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েও অন্যভাবেও শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষা দেওয়া যায়। আর সেই সুযোগটাই শিক্ষকরা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই কঠিন পরিস্থিতিতে শিক্ষকরাই ছাত্রছাত্রীদের জীবনে পরিবর্তন এনে চমক তৈরি করতে পারবেন। আমি এতে খুব খুশি হয়েছি। তবে আমার প্রাপ্ত পুরস্কারের অর্ধেকা টাকা বাকি ফাইনালিস্টদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চাই। আমার বিশ্বাস, একসঙ্গে সকলে মিলে কাজ করলে এক উন্নত ভবিষ্যত গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

ঢাকা টাইমস/০৫ডিসেম্বর/একে