এভাবেই সবাই ‘লাশ’ হয়ে যায়

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ
 | প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:২৯

আবদুস সামাদ চৌধুরী মারা গেলেন। তাঁর জানাজার নামাজ পড়তে গেলাম। আবদুস সামাদ চৌধুরী কোটিপতি। অনেক নাম-ডাক। সামাদ চৌধুরী হিসেবে দেশের বেশিরভাগ মানুষ তাঁকে চেনেন। কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন বটে, কিন্তু ভোগ করে যেতে পারলেন না। ভাবছিলাম- চুরি, ডাকাতি, লুটতরাজ, ঘুষের মাধ্যমে এদেশের হাজার হাজার রক্তচোষা মানুষ রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। মৃত্যুর আগে তারা কি এই বিশাল সম্পদের ভাণ্ডার ভোগ করে যেতে পারবে? আমার হিসাবে সম্ভব নয়। তাহলে কেন এই অযথা সম্পদ লিপ্সা?

সে যাক, তাঁর বাড়ির পার্কিং লটে ঢুকে দেখলাম, তাঁর বেশ কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী ইতিমধ্যে জড়ো হয়েছেন। সবাই ছোট ছোট দল বেঁধে গল্প করছেন। কিছু গল্প সামাদ চৌধুরীকে নিয়ে, কিছু দেশের হাল অবস্থা নিয়ে। এরি মধ্যে কে যেন বলে উঠলেন, লাশ নিচে আনা হবে কখন? তাকিয়ে দেখলাম প্রশ্নকর্তা সামাদ চৌধুরীর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

সামাদ চৌধুরীকে তিনি সবসময় সামাদ বলে ডাকতেন এবং তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল ‘তুই’ পর্যায়ের। একটু ভাবলাম- এত ঘনিষ্ঠ বন্ধু কেন ‘সামাদ’ না বলে তাঁকে ‘লাশ’ বলে সম্বোধন করলেন! বুঝলাম- এটাই নিয়ম। কেউ মরে গেলে তার আর নাম থাকে না। যত বড় হোক বা যত ছোট হোক না কেন, মরে গেলে সবাই লাশ হয়ে যায়। এটাই তার পরিচয়। একসময় আমরা সবাই নাম বিসর্জন দিয়ে ‘লাশ’ হয়ে যাব।

কিছুক্ষণ পর ‘লাশ’ নিচে নামানো হলো, গোসল দেয়া হলো, তারপর তিন টুকরো ধবধবে সাদা কাফনের কাপড় দিয়ে তাঁর নিধর দেহটিকে মুড়ে দেয়া হলো, মাথার ওপর ও পায়ের নিচে কাপড়ের রশি দিয়ে লাশটি বেঁধে ফেলা হলো। আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা জানাজার নামাজ পড়লেন এবং নামাজ শেষে লাশ খাটে রেখে ট্রাকে তুলে শেষ যাত্রায় কবরস্থানে রওনা হলেন। এরপর একটি অভিজাত কবরস্থানে যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হলো। এখানে তাঁর জীবনের প্রথম পর্ব শেষ হলো।

তাঁর দ্বিতীয় পর্বের জীবন ও হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে আমরা কেউ কিছু জানব না। বিচার দিবসের হিসাব নিকাশ সম্পর্কে জানবেন শুধু সামাদ চৌধুরী এবং তাঁর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ গাফুরুর রহিম। সামাদ চৌধুরী চলে গেলেন ‘লাশ’ উপাধি নিয়ে।

আমরাও একদিন লাশ হয়ে আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে যাব। এই ফিরে যাওয়ার জন্য আমরা কি প্রস্তুত? আমাদের সবার হিসাব-নিকাশ ঠিক আছে তো? না থাকলে ইহজগতে আমলনামা সামনে নিয়ে সবার একটু বসার দরকার। যোগ-বিয়োগ-পূরণ-ভাগগুলো এখুনি ঠিকঠাক করে ফেললে মঙ্গল। তাহলে আমাদের সবার শেষ যাত্রা শুভ, সার্থক ও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

লেখক: প্রফেসর, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :