প্রথম পুলিশ সপ্তাহের ঐতিহাসিক দলিল: বঙ্গবন্ধু ও আমার প্রস্তাব (ভিডিওসহ)

এস. এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার
| আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:৪৬ | প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:১৭

‘আজ স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। যতদিন বাংলার স্বাধীনতা থাকবে, যতদিন বাংলার মানুষ থাকবে, ততদিন এই রাজারবাগের ইতিহাস লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। ২৫ মার্চ রাত্রে যখন ইয়াহিয়া খানের সৈন্যবাহিনী বাংলাদেশের মানুষকে আক্রমণ করে, তখন তারা চারটি জায়গা বেছে নিয়ে তার ওপর আক্রমণ চালায়। সেই জায়গা চারটি হচ্ছে-রাজারবাগ, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর আমার বাড়ি। একই সময়ে তারা এই চার জায়গায় আক্রমণ চালায়। রাজারবাগের পুলিশেরা সেদিন সামান্য অস্ত্র নিয়ে বীর বিক্রমে সেই সামরিক বাহিনীর মোকাবেলা করেন। কয়েক ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ করেন। তারা এগিয়ে আসেন বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে।’

১৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর পুলিশ সপ্তাহের এই অংশ যখন পড়ি, তখনই ভালোবাসা আবেগতাড়িত করে, রক্তক্ষরণ হয় বারবার। কলম হাতে নেই, কিন্তু অজানা কারণে আবার কলম থেমে যায়। রক্তক্ষরণ চলতেই থাকে আর বেঁচে থাকার তাগিদে মুক্তির পথ খুঁজি নিরন্তর। কিন্তু অদৃশ্য সীমাবদ্ধতা আমাকে নিরবে সীমিত করে রাখছে দিনের পর দিন। সীমিত জ্ঞানে সীমাবদ্ধতার কারণ খোঁজার চেষ্টা করি। আত্মকর্ষণ করি, অতঃপর ছোট একটা জবাব পাই। যাকে তুমি ভালোবাসো, কতটুকু জানো তাঁকে? আর সে যদি হয় তোমার জাতির পিতা- তোমার কলম তো থমকে যাবেই! আত্মজিজ্ঞাসায় ফিরে যাই পুনরায়। জবাব মেলে ঠিক এভাবে, মুক্তির পথে এগুতে চাইলে একটিই পরামর্শ তোমার জন্য, আর তা হলো কলমের কালি নয় বরং ভালোবাসার আবেগ থেকে কালি সংগ্রহ করে রক্তজবার রঙে নাম লিখ তোমার অস্তিত্বে বহমান মহান জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

চাকরির সুবাদে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে কিছু সিনিয়র অফিসারদের কথপোকথন শোনার সুযোগ পেয়েছিলাম। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল কততম পুলিশ সপ্তাহ এবার? কোনো তথ্য-উপাত্ত না থাকায় বিগত বছরগুলোর আমন্ত্রণপত্র দেখার সিদ্ধান্ত হলো। জুনিয়র অফিসার হিসেবে আমার কথা ধোপে টিকবে না বুঝে কিছু বললাম না। আমরা তখনও পর্যন্ত আমাদের জন্ম হিসেবটা এভাবেই করতে শিখেছি। বিষয়টা আমাকে ব্যথিত করেছে। ভেতরে ভেতরে অনুভব করি নিদারুণ হাহাকার আর ভাবি কত সিএসপি কত বিসিএস স্কলারগণ এই প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু বামপাতার হিসেব কষে তাঁরাও পুলিশ সপ্তাহ পালন করেছে যার যার মতন করে। অথচ, জাতির পিতা রাজারবাগে ৭৫ এর ১৫ জানুয়ারিতে কি কষ্ট অন্তরে নিয়েই না বলেছিলেন ‘আজ আপনাদের কর্তব্য অনেক। যেকোনও সরকারের, যেকোনও দেশের সশস্ত্র বাহিনী গর্বের বিষয়। আমার মনে আছে যেদিন আমি জেল থেকে বের হয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসি, সেদিন দেখেছিলাম আমাদের পুলিশ বাহিনীর না আছে কাপড়, না আছে জামা, না কিছু। অনেককে আমি ডিউটি করতে দেখেছি লুঙ্গি পরে। একদিন রাত্রে তারা আমার বাড়ি গিয়েছিল। তাদের পরনে ছিল লুঙ্গি, গায়ে জামা, হাতে বন্দুক।’ পাঠান্তে মনে অজানা এক ঝড় বয়ে গেল। খোঁজা শুরু করলাম জাতির পিতা পুলিশ সপ্তাহের জন্ম সংক্রান্তে কোন চিরকুট রেখে গেছেন কি না!

প্রথম পুলিশ সপ্তাহ কবে কোন সালে হয়েছে, এমনকি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহ কে উদ্বোধন করেছেন তিনি আমাদের উদ্দেশে কী বলেছেন? নানামুখী চিন্তা আমাকে আরও বেশি আবেগতাড়িত করল, আমি ছুটতে শুরু করলাম। গান-বাজনা করার সুবাদে বিটিভিতে যোগাযোগ করলাম, কিন্তু সুনির্দিষ্ট তারিখ না বলতে পারলে ওদের পক্ষে সাহায্য করা খুব কঠিন। বই পুস্তকের সন্ধানে নেমে ছোট ভাই সাব্বির আহমেদ (বর্তমানে উপসচিব) কে বললাম আমাকে একটু সাহায্য করতে। পরে তার সাহায্যে সচিবালয় থেকে একটি বই সংগ্রহ করলাম। 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ' এম. এ. ওয়াজেদ মিয়ার লেখা বইটি পড়া শুরু করলাম।

বইয়ের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল সন আর তারিখ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর বিশেষ বিশেষ ঘটনা, স্মৃতি, বক্তব্য ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি বিন্যাসিত করে সংকলন করা। ৭২ থেকে শুরু করে ৭৫ পর্যন্ত এগুতেই পেয়ে গেলাম সুদীর্ঘ বছর ধরে অন্ধকারে ঢেকে থাকা মহামূল্যবান ঐতিহাসিক দলিল ১৯৭৫ এর ১৫ জানুয়ারি প্রথম পুলিশ সপ্তাহে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।

মুক্তিযুদ্ধে রাজারবাগে পুলিশের কীর্তিগাঁথা স্মরণ করে তৎকালীন পুলিশের দুঃখ-দুর্দশা এবং আগামীতে বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক রুপরেখা বিবেচনায় রেখে সুদীর্ঘ বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা। অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদেরকেও নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি। প্রসঙ্গক্রমে পুলিশের মধ্যে জন্ম নেওয়া র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান জন্মের ৪ বছরের মাথায় স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হলো একটা ইউনিট হিসেবে।

টনক নড়ে প্রগতিশীল চেতনার কিছু অফিসারদের। বর্তমান আইজিপি তদানীন্তন ডিএমপি কমিশনার শ্রদ্ধেয় ড. বেনজির আহমেদ স্যার ও বর্তমান ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি তদানীন্তন ডিসি হেডকোয়ার্টার হাবিবুর রহমান স্যারের পরিকল্পনা ও ভাবনায় শুরু হলো লেখালেখি, খোঁজাখুঁজি। রচিত হলো গীতিনৃত্যনাট্য 'স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা', মান্নান হিরার রচনায় মঞ্চনাটক 'রাজারবাগ ৭১' যার সূচনাসঙ্গীতটি আমার। গীতিকার, সুরকার এবং কন্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ করি এবং পরিষদের নিজস্ব শিল্পীদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকি দীর্ঘ সময়। পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ পরিকল্পনা ও তথ্য সংগ্রহের কাজটিও চলছে সমানভাবে। মোস্তাক স্যারের প্রাণন্তকর চেষ্টায় নির্মিত হলো সিনেমা 'নক্ষত্রের রাজারবাগ'। সেই সাথে উদ্দীপন, দুরন্ত বিভিন্ন রকমের ম্যাগাজিন ছাপানো আর রাজারবাগ কেন্দ্রিক মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী পুলিশ সদস্যদের কবর খুঁজে বের করা ইত্যাদি।

নানাবিধ কাজের সাথে গণমাধ্যমকর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন রকম প্রতিবেদন উপস্থাপন করানো, এমনকি শুরু হলো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাথে যৌথভাবে বাংলাদেশের সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদের নিয়মিত ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে প্রদীপ প্রজ্বলন অনুষ্ঠান উদযাপন। আর বাঘা বাঘা মন্ত্রী, এমপি এবং দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গকে নিমন্ত্রণ করে এ বিষয়গুলোকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করানো হলো। শিল্পী হিসেবে এমন জাতীয় অনুষ্ঠানে আমি গাইতে শুরু করলাম জহির বাবু’র রচনায়- 'আজও কেঁদে যায় পদ্মা, মেঘনা, বুড়িগঙ্গা নদী/বুড়িমা আজো পথ চেয়ে বসে/ ছেলেটা তাহার মা মা করে ফিরিয়া আসিত যদি/......তবে আজো কেন রবে এ মাটির বুকে/যুদ্ধ অপরাধী, ওরা যুদ্ধাপরাধী'--।

যুদ্ধপরাধীদের বিচারের স্বপক্ষে গানটি দেশ-বিদেশে জনমত তৈরিতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে এবং সমসাময়িক চিন্তাভাবনার মানুষের কাছে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অবিরত চেষ্টার এক পর্যায়ে সদাশয় সরকার বাংলাদেশ পুলিশকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করলেন ২০১১ সালে। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজীবন প্রশংসিত হবেন।

প্রশ্ন হলো, এত দেরিতে কেন? সম্ভবত, বাংলাদেশ পুলিশ এবং সরকারের কোনো সংরক্ষণাগারে তখনও পর্যন্ত এই ঐতিহাসিক দলিলটি যথাযথভাবে সংরক্ষিত ছিল না বলেই। আবার বঙ্গবন্ধুমতের নীতি আদর্শ ও আওয়ামী লীগ রাজনীতির দর্শনবিরোধী যারা সরকার পরিচালনা করেছেন, তারা এটিকে মুছে ফেলার যথেষ্ট করেছেন, তা সহজেই অনুমেয়।

যাই হোক, অবশেষে খুঁজে পেলাম প্রথম পুলিশ সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ এবং এটিই ছিল স্বাধীনতা-উত্তর পুলিশ সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া প্রথম ও শেষ ভাষণ। কারণ তারিখটা ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি। আর, এ কারণে দলিলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয় সম্পদ। অতঃপর বিটিভিতে পরিচিত অফিসার এসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর মাহফুজারকে বললাম ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারির আর্কাইভ আমার প্রয়োজন। তিনি বললেন, স্যার দুএকদিন সময় লাগবে, ধুলোবালি ঝেড়ে খুঁজে বের করতে হবে। পরিশেষে পাওয়া গেল ক্যাসেটটি। চালু করে ছবি পাওয়া গেল, কিন্তু শব্দ নেই। একটু করে পুলকিত হচ্ছি, এমন সময় মাহফুজার বললেন বর্তমানে দেশে কোন কনভার্টার মেশিন নাই। পাশের দেশ ভারতে আছে। তবুও আমি দেখি কি করা যায়।

ভাবলাম বাংলাদেশ পুলিশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের ব্যানারে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগ্রহ করেই এটি ভারতে পাঠাবো। কিন্তু কাজটি তো ঝুঁকিপূর্ণ। আমি হাবিবুর রহমান স্যারের সাথে দেখা করে শেয়ার করলাম। স্যার একটু বিস্মিত হলেন। এবার মাহফুজার বললেন, স্যার আমি নতুন পুরান এক্সপার্ট দিয়ে দেখিয়েছি, বস্তুতই শব্দ মুছে দেয়া হয়েছে। তা হতেই পারে। যে দেশে জাতির পিতার হত্যার বিচার করা যাবে না মর্মে ইন্ডেমনিটি পাস করা হয়, সে দেশে সবই সম্ভব! তখন ডিএমপিতে এডিসি মিডিয়ার দায়িত্ব পালন করছিলাম। কয়েকদিন নির্বাক, কি করব এখন? হঠাৎ মাথায় এলো বাংলাদেশ বেতারে রেকর্ডস থাকতে পারে । আমি এডি সালাহ উদ্দীন সাহেবের সাথে কথা বলে অনুরোধ করতেই তিনি বিনীতভাবে কয়েক দিন সময় চাইলেন। এক সপ্তাহের মাথায় ফোন করে বললেন- পেয়েছি, তবে মাত্র ৩ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ভয়েস পেয়েছি। প্রায় ১৭ মিনিটের বক্তব্য, আরেকটু খোঁজাখুঁজির অনুরোধ রেখে পুলিশ ইন্সপেক্টর শফিকুর রহমান সাবুকে পাঠিয়ে নিজ সংগ্রহে নিলাম।

বিটিভি থেকে ভিডিও ফুটেজ আর বেতার থেকে ভয়েস সংগ্রহ করে এডিট প্যানেল থেকে ৪ মিনিট ১২ সেকেন্ডের একটা ডকুমেন্টারি তৈরি করলাম। ভালোবাসার টানে হাবিব স্যারের কাছে নিয়ে গেলাম, সম্ভবত এডিশনাল এসপি নিজাম ছিল। হাবিব স্যারের নির্দেশনায় তাকে বললাম- একটা কপি রেখে দাও কম্পিউটারে। হূলুস্থুল অবস্থা! দেখতে দেখতে ওই বছরে পুলিশ সপ্তাহ সন্নিকটে চলে এলো। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি মহোদয় সে বছর যত বক্তব্য রাখলেন কোটেড বক্তব্যগুলো দেখলাম এই সংগ্রহ থেকেই নেওয়া, এমনকি রাজারবাগ অডিটোরিয়ামে দেয়ালে সাঁটানো প্যানাতে লেখাটুকুও এই সংগ্রহ থেকেই কোট করা। শুধু তাই নয়, সন্ধ্যাপরবর্তী একটি অনুষ্ঠানে যে ডকুমেন্টারি চালানো হলো, দেখলাম আমার কপির আগে ও পরে পুলিশের কিছু কর্মকাণ্ড জুড়ে একটু বেশি পরিসরের ডকুমেন্ট বানানো হয়েছে।

কৃতজ্ঞতায় অনেকের মধ্যে আমার নামটি রাখা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু গুরুত্ব বহন করার মত অবস্থানে নয়। তবুও ধন্যবাদ কর্তৃপক্ষকে, কিন্তু প্রকৃত কৃতজ্ঞতার দাবিদার ডিএস সাব্বির আহমেদ, এডি সালাহ উদ্দীন, ইন্সপেক্টর শফিকুর রহমান সাবু যাঁরা আমার কাজটি পূর্ণাঙ্গ কাজে পরিণত করতে সহযোগিতা করেছে।

যেহেতু জাতির পিতা ১৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছিলেন, তাই ওই দিনটিকে জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ হিসাবে ঘোষণা করা যেতেই পারে। আমাদের চাওয়া, বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান ড. বেনজির আহমদ স্যারের মাধ্যমে প্রস্তাবনা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ হলে কাজটা সহজ হতে পারে। আর তা যদি হয়, তাহলে তিনি যেমন আজীবন সমাদৃত হবেন, তেমনি পুলিশ বিভাগের অর্জনে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে ১৫ জানুয়ারির বঙ্গবন্ধুর মধুমাখা স্মৃতি জড়িয়ে আছে, তাই দিবসটি 'জাতীয় দিবস' হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি লালন করা আমাদের কর্তব্যর মধ্যেই পরে।

বঙ্গবন্ধু সেদিন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন- 'একটা কথা আপনাদের ভুললে চলবে না, আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ নন-জনগনের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। আপনাদের বাহিনী এমন যে, এর লোক বাংলাদেশের গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। আপনাদের নিকট বাংলাদেশের মানুষ এখন একটি জিনিস চায়। তারা যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে। তারা আশা করে চোর, বদমাইশ, গুণ্ডা, দুর্নীতিবাজ যেন তাদের ওপর অত্যাচার করতে না পারে। আপনাদের কর্তব্য অনেক।'

জাতির পিতার সেদিনের আদেশ বাংলাদেশ পুলিশ যথার্থ স্মরণ রেখেছে বিধায় করোনায় মৃত ব্যাক্তির লাশ যখন রাস্তায় পড়েছিল, নিজ সন্তান পিতার লাশ রেখে পালিয়ে গেলেও পুলিশ যথাযথ ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে লাশটি দাফন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করেনি। ৭১ এর রণাঙ্গনে যেমন বাংলাদেশ পুলিশ বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিল, তেমন বীরত্বের পরিচয় দেখিয়েছে করোনাকালীন জাতীর দুর্যোগ মুহূর্তেও। সেদিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ পুলিশকে একুশে পদকে ভূষিত করা যেতেই পারে।

লেখক: পুলিশ সুপার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :