বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে লক্ষ্যমাত্রা পুরণ না হওয়ার শঙ্কা

প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৫৯ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:৩৬

বেনাপোল প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বেনাপোল বন্দর দিয়ে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি বাংলাদেশ-ভারতের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। ফলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে রাজস্ব আদয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও বাড়ছে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। শুধু নভেম্বরেই বেড়েছে আহরণ প্রবৃদ্ধি ৪৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে রাজস্ব ফাঁকি আর নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সাত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর এ কাস্টম হাউসের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৫০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে এক হাজার ৫০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছর একই সময়ের তুলনায় ২৫৭ কোটি ২০ লাখ টাকা বেশি। পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

অন্যদিকে গত অর্থবছরে নভেম্বর মাসের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আদায় হয়েছে ৩৭৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের নভেম্বর মাসের তুলনায় বর্তমানে ১১৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বেশি। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ৪৬ দশমিক ৪০ শতাংশ।

কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম জানান, বেনাপোল কাস্টম হাউস রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে বদ্ধ পরিকর। আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি ও শুল্ক ফাঁকি রোধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। করোনার কারণে এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ কমে গেছে। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আমদানি-রপ্তানি, বাড়ছে রাজস্ব আদায়।

তবে সুযোগসন্ধানী একশ্রেণির অসাধু আমদানিকারক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহায়তায় রাজস্ব ফাঁকি দিতে সব সময় তৎপর। বিশেষ করে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে এ রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা হয়। যদিও ফাঁকি রোধে তৎপরতা বাড়িয়েছে বেনাপোল কাস্টম হাউস। ইতোমধ্যে দেড় মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক আমদানিকারকের মিথ্যা ঘোষণার অতিরিক্ত পণ্য আটক, অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়, জরিমানা ও অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে।

গত পাঁচ মাসে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় ছয়টি সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। চার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়েছে। বাতিল করা এজেন্টগুলো হলো- রিমু এন্টারপ্রাইজ, তালুকদার এন্টারপ্রাইজ, এশিয়া এন্টারপ্রাইজ, সানি ইন্টারন্যাশনাল, মদিনা এন্টারপ্রাইজ, মুক্তি এন্টারপ্রাইজ ও রিয়াংকা এন্টারপ্রাইজ।

অন্যদিকে, বেনাপোল কাস্টম হাউসে বাজেয়াপ্ত অনিলামযোগ্য ৫৬ টন পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। ধ্বংস করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে-আতশবাজি, মদ, সিগারেট, ওষুধ, প্রসাধনী প্রভৃতি। এনবিআরের স্থায়ী আদেশ অনুযায়ী ২ অক্টোবর পৃথকভাবে এসব পণ্য ধ্বংস করা হয়। আহ্বায়ক কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার ড. মো. নেয়ামুল ইসলামসহ অন্যান্য সব সদস্যের উপস্থিতিতে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। বেনাপোল কাস্টম হাউসের ইতিহাসে সর্বপ্রথম এত বেশি ঝঁকিপূর্ণ পণ্য ধ্বংস করা হয়।

অন্যদিকে আমদানি-রপ্তানি গতিশীল ও সহজতর করতে হাউসের কার্গো শাখার এন্ট্রি গেটে একটি পয়েন্টে ওয়ান স্টপ এন্ট্রি কার্যক্রম চালু করা হয়। কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিজিবি আলাদাভাবে এন্ট্রি করার কারণে সময় বেশি লাগত; যা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হতো। বিগত প্রায় ১০ বছর যাবত এভাবে চলছিল। দফায় দফায় আলোচনা করে এ সমস্যা সমাধান করা হয়। আমদানি-রপ্তানি গতিশীলকরণে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে রাজস্ব আহরণ বাড়ছে। রাজস্ব ফাঁকি রোধে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, যাতে দৃশ্যমান ফল পাচ্ছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি লাইসেন্স বাতিল ও আমদানিকারককে জরিমানা, অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে। ফলে অসাধু আমদানিকারক-সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কাছে কঠোর বার্তা গেছে।

তিনি বলেন, আমদানিকৃত পণ্য বন্দরে প্রবেশের পর এর ব্যবস্থাপনা করার দায়িত্ব বন্দর কর্তৃপক্ষের হলেও এ নিয়ে বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা দেখা যায়।কোন পণ্য কোন শেডে রাখা হবে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম ছিল না, ফলে শেড ভিত্তিক একটি অসাধু সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে।  অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বেনাপোল কাস্টম হাউস বিষয়টি তদারকি করায়  বন্দরে শৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১২ডিসেম্বর/কেএম)