সরকারি আবাসনে ৪৫০ পরিবারের মানবেতর জীবন
প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৪১
ঝালকাঠির উত্তর কিস্তকাঠি আবাসন প্রকল্প নির্মাণের পর একযুগ পেরিয়ে গেলেও সংস্কার না করায় অধিকাংশ ঘরই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব ঘরের টিনের চালাগুলো মরিচা পড়ে ঝাঝরা হয়ে গেছে। চালার ছিদ্র দিয়ে দেখা যাচ্ছে আকাশ।
বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায় ঘরের মালামাল। কনকনে শীতে ভাঙা বেড়া দিয়ে হু হু করে ভিতরে প্রবেশ করে ঠান্ডা বাতাস। এখানকার বেশিরভাগ শৌচাগার ও গোসলখানাগুলো বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী। রাস্তাঘাট ভাঙা থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বসবাসকারীরা।
২০০৭ সালে ঝালকাঠি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৫ একর খাস জমিতে স্থাপন করা হয় উত্তর কিস্তাকাঠির এই আবাসন প্রকল্পটি। তিনটি ব্যারাকে নির্মাণ করা হয় ৪৫০টি ঘর। এই ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়া হয় ৪৫০টি ভূমিহীন নিম্ম আয়ের পারিবারকে। সংস্কার না হওয়ায় প্রকল্পের ৪৫০টি পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। টিনের চালা এবং বেড়ায় সৃষ্টি হওয়া ছিদ্র পলিথিন দিয়ে ঢেকে পানি ও শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে বাসিন্দারা।
প্রতি দশটি পরিবারের জন্য দুটি শৌচাগার ও দুটি করে গোসলখানা রয়েছে এখানে। শৌচাগারগুলো এখন ব্যবহারের অযোগ্য। পয়নিস্কাশনের জন্য ব্যারাকে কোনো ড্রেন না থাকায় ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানি যাচ্ছে এখানকার একমাত্র পুকুরটিতে। আর দূষিত হচ্ছে গোটা পুকুরের পানি। এই পুকুরের পানি ব্যবহার করে বাসিন্দারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দুয়েকজন স্বচ্ছল বাসিন্দা নিজেরা ঘর মেরামত করে বসবাস করলেও নিম্নআয়ের অসহায় বাসিন্দারা সংস্কার না করেই দিনের পর দিন কষ্টে কাটাচ্ছেন।
ঝালমুড়ি বিক্রেতা খলিল সিকদার আবাসনের ২ নম্বর ব্যারাকের ১০ নম্বর ঘরে থাকেন। তিনি বলেন, বৃষ্টির দিনে মাঠের চেয়ে আমার ঘরে পানি বেশি ওঠে। পলিথিন টাঙিয়েও বৃষ্টি ঠেকানো যায় না। মুদী দোকানী শহিদ হাওলাদার ৩ নম্বর ব্যারাকের ২০/৫ নম্বর ঘরে পবিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। তিনি বলেন, ঘর প্রতি তিন বান টিনের প্রয়োজন। অথচ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অর্থাৎ গত দুই বছর আগে ঘর প্রতি দুটি করে টিন লাগিয়ে দিয়েছিল সদর উপজেলা প্রশাসন। ১২ বছরের মধ্যে এই সংস্কার খুবই সামান্য।
এখানকার চা বিক্রেতা নাসিমা বেগম ২২/৮ নম্বর ঘরে থাকেন। তিনি বলেন, এই শীত মৌসুমে চালের টিন বদল করা না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে যতো জায়গা থেকে পানি পরবে। সেই পানি ধরার জন্য ততোটি হাড়ি পাতিলও তার ঘরে নেই।
২১/৫ নম্বর ঘরে থাকেন নুপুর বেগম। তিনি শহর থেকে শাড়ি/কাপর কিনে এনে আবাসনে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে সংসার চালান। তার ঘরের চাল এমনভাবে ফুটো হয়ে গেছে বর্তমানে ভিতর থেকে আকাশ দেখা যায়। নুপুর বেগম বলেন, গত বর্ষায় তিনি অন্যত্র গিয়ে থেকেছেন। চালের টিনের যে অবস্থা তার চেয়ে তার ঘরের বেড়ার অবস্থা আরো খারাপ। যখন তখন তার ঘরের ভিতর সাপ ঢুকে পরে।
বাসিন্দারের দুর্দশা নিয়ে উত্তর কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্প সমবায় সমিতি-১ এর সাধারণ সম্পাদক মন্টু খলিফা বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় আবাসনের এসব সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অনেক সময় বিভিন্ন কর্মকর্তা এখানে পরিদর্শনে এসে সংস্কারের কথা বলে চলে যান। জরাজীর্ণ ঘরতো আছেই।
মন্টু খলিফা বলেন, এই আশ্রয়ন প্রকল্পে নেই ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, নেই গোরস্থান। দুর্যোগপুর্ণ আবহাওয়ায় আমাদের শহরে গিয়ে উঠতে হয়। এখানে বসবাসরত সাড়ে ৪০০ পরিবারের কোনো সদস্য মারা গেলে দাফনের জন্য যেতে হয় ছয় কিলোমিটার দূরে পৌর গোরস্থানে। সব মিলিয়ে বেশ দুর্দশায় আমরা আবাসনে বাস করি। এখানকার বসবাসকারীদের একটাই দাবি দ্রুত প্রতিটি ঘরের চালের টিন পরিবর্তন করে নতুন করে চালা তৈরি এবং শৌচাগার ও গোসলখানাগুলো সংস্কার করে ব্যারাকগুলো বসবাসের উপযুক্ত করতে হবে। অনেক বাসিন্দাই আশ্রয়ণ কেন্দ্র ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বাধ্য হয়ে যারা বসবাস করছেন তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্প অনেক পুরোনো। তাই প্রতিটি ঘরের চাল পরিবর্তন করে নতুন টিন না দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। ইতোমধ্যে সংস্কারের জন্য চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিকুন্নাহার বলেন, প্রকল্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ নিরসনের জন্য যথাসাধ্য কাজ করা হবে। তিনি ঝালকাঠিতে সদ্য যোগদান করেছেন বিধায় কিস্তাকাঠি আবাসন সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি অবগত ছিলেন না। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/কেএম)