৫৫ বছর পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলরুট চালু

শাহিনুর রহমান, নীলফামারী
 | প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:৫৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠকের মাধ্যমে নীলফামারী জেলার চিলাহাটি ও ভারতের কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি হয়ে ভারত বাংলাদেশ রেল যোগাযোগ আবার চালু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ওই বৈঠক শুরু হয়।

পরে দুই নেতার ভাষণের পরপরই বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ৫৫ বছর পর এই রেলসংযোগের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।

পরে বেলা ১২ টা ৪৬ মিনিটে চিলাহাটি স্টেশন থেকে ৩২টি ওয়াগনের একখানা পণ্যবাহী ট্রেন ভারতের উদ্যেশ্যে যাত্রা করে। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বাঁশি বাঁজিয়ে ও পতাকা নেড়ে ওই ট্রেনের যাত্রা শুরু করেন।

এসময় চিলাহাটি স্টেশন থেকে হলদিবাড়ি সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রেললাইনের দুই ধারে হাজারো উৎসুক জনতা ভিড় করেন। এ কারণে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় ক্ষেপন করে রেলের ওই বহরটি দুপুর দেড়টার দিকে হলদিবাড়ি সীমান্ত এলাকায় পৌঁছে। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে ট্রেনটি সীমান্ত অতিক্রম করে।

দীর্ঘ ৫৫ বছর পর রেলপথে দুই বাংলার সংযোগ স্থাপনের ওই মাহেন্দ্রক্ষণ উপভোগ করতে চিলাহাটি স্টেশন থেকে সীমান্ত রেখা পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার নারী পুরুষ ও শিশুর আগমন ঘটে।

স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় স্থাপন করা হয় এক হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতার বিশাল আকারের প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের ভেতরে স্থাপন করা হয় ৫টি বড় পর্দা এবং প্যান্ডেলের বাইরে দুইটি বড় পর্দা। এসব পর্দায় মহেন্দ্রক্ষণের সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করেন দূর দূরান্তের প্রায় ১০ সহস্রাধিক নারী পুরুষ ও শিশু।

একই অবস্থা বিরাজ করে সীমান্তের শূন্য রেখা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রেল লাইনের দুই ধার।

চিলাহাটি রেল স্টেশনের পাশে করা প্যান্ডেলে সরাসরি ভার্চুয়াল বৈঠকটি সম্প্রচার করা হয়।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন- রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, নীলফামারী-১ আসনের সাংসদ আফতাব উদ্দিন সরকার, নীলফামারী-৪ আসনের সাংসদ আহসান আদেলুর রহমান, সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ রাবেয়া আলীম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, রেলের মহাপরিচালক মো. সামসুজ্জামান, পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ, জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, ৫৬ বিজিরিব অধিনায়ক লে. কর্নেল মামুনুল হক, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল লিংক লাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আব্দুর রহীম, নীলফামারী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, বিএমএর সভাপতি মমতাজুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (সমাজকল্যাণ) সরকার ফারহানা আক্তার প্রমুখ।

সূত্র মতে, ব্রিটিশ আমল থেকে অভিভক্ত ভারতের যোগাযোগের অন্যতম রেলপথ ছিল চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুট। এই পথ দিয়ে নিয়মিত চলাচল করত দার্জিলিং থেকে খুলনা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত একাধিক যাত্রিবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন।

১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর পথটি বন্ধ করে দেওয়া হলে স্থবির হয়ে পড়ে নীলফামারীসহ আশপাশ জেলার ব্যবসা বাণিজ্যের। সে থেকে ব্যবসায়ীসহ এলাকার মানুষের দাবি ছিল, আবার রেলপথ চালুর। এমন দাবিতে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে দীর্ঘ ৫৫ বছর পর পথটি আবার চালুর উদ্যোগ নেয় দুই দেশের সরকার।

নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্ত পর্য়ন্ত বাংলাদেশ অংশের ৬ দশমিক ৭২ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ৮০ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ের ওই প্রকল্পে রেল লাইন স্থাপন ছাড়াও বসানো হয়েছে চার কিলোমিটার লুপ লাইন, আটটি লেভেল ক্রসিং ও নয়টি ব্রিজসহ অন্যান্য অবকাঠামো। সকল নির্মাণ কাজ শেষে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়েছে বাংলাদেশ অংশে। এরপর চিলাহাটি রেল স্টেশনকেও আধুনিক সাজে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশের পাশাপাশি বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারত হলদিবাড়ি থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করে।

রেলওয়ে সূত্র মতে, উদ্বোধনের পর চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে পণ্যবাহী একটি ট্রেন ছেড়ে যায় ভারতের হলদিবাড়ির উদ্দেশ্যে। ওই রেল বহরে রয়েছে ভারতীয় ৩২টি খালি ওয়াগন। আর রেলবহরটিকে টেনে নিয়ে যায় বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি ইঞ্জিন।

পণ্যবাহী রেলের বহরে ছিলেন, রেলের গার্ড আফজাল হোসেন, সহকারী গার্ড সহিদুল ইসলাম, চালক সহিদুল আলম, সহকারী চালক সাইফুল ইসলাম, কমল সরকার ও শাহাজাহান আলী।

চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল লিংক স্থাপনের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রহীম বলেন, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর এ পথটি বন্ধ হয়। এরপর বর্তমান সরকার ২০১৫ সালে বন্ধ থাকা রেল লিংক আবার চালুর উদ্যোগ নেয়। সে লক্ষ্যে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল লিংকটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয় ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বর্তমান রেলপথমন্ত্রী এবং ভারতীয় হাইকমিশনার। উদ্বোধনের পর এ পথে বাংলাদেশ থেকে ভারত, নেপাল, ভুটান পর্যন্ত যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ঢাকা থেকে ভারতের দার্জিলিং যাওয়ার জন্য এটি একটি বেস্ট রুটে পরিণত হবে। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী ২৬ মার্চ থেকে এ পথে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করা হবে।

জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের মধ্যদিয়ে দুই দেশের রেল যোগাযোগের সূচনা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ৫৫ বছর পর পুনরায় এ পথে ভারত-বাংলাদেশ রেল যোগাযোগের সূচনা ঘটেছে। আগামী ২৬ মার্চ এই পথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন হবে। যাত্রীবাহী ওই ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছেড়ে এসে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাবে। পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এ পথে আমাদের সেভেন সিস্টারে আমরা পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারব।

(ঢাকাটাইমস/১৭ডিসেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :