ফাল্গুনী হাফিজ-এর একগুচ্ছ ছড়া
বাহাদুরি
এই দুনিয়ায় জিতবে না কেউ
আমার হবে জিত,
যেভাবেই হোক করবো পূরণ
আমার মনের জিদ।
কে বড়ো আর আমার চেয়ে
আমি একাই বড়ো,
চললে পথে সবাই যেন
বলে সরো সরো।
মাছ বাজারে ভিড়ের মাঝে
গায়ে ছোঁয়া দিলে,
উচ্চৈঃস্বরে ধমক দেবো
গরিব দুঃখী পেলে।
শক্তিশালী কেউ বা যদি
লাগায় ধাক্কা গায়ে,
ফ্যালফেলিয়ে বলবো স্যরি
ধরবো গিয়ে পায়ে।
বাসায় ফিরে বউয়ের উপর
ঝাড়বো সেসব রাগ,
বললে কিছু বউ পিটিয়ে
ফেলবো পীঠে দাগ।
কলিগ বন্ধু ছেলে মেয়ে
সবার সাথে পাল্লা,
চাষি-তাঁতী কামার কুমোর
কুলি মাঝি মাল্লা।
মিউ করে যে বিড়ালটা আর
কুকুর করে ঘেউ,
আমার মতো যোগ্যতম
এরাও নয়তো কেউ।
একলা আমি এই জগতে
সবার চেয়ে যোগ্য,
আমিই রাজা সবাই প্রজা
সবাই আমার ভোগ্য।
তাঁতী
সিলিং ধরে ঘরের কোনে
জাল বুনেছে কে?
রেখাগুলো নিখুঁত সোজা
যায়নি তো বেঁকে।
হিয়ান নুহান অবাক হয়ে
মাকড়সা দেখে,
কারিগর এই জীব জাতিটার
দিন কাটে জাল এঁকে।
প্রকৌশলী
কার্ণিশে এক মৌমাছি ঝাঁক
সুন্দর করে বানালো চাক।
অল্প দিনের মাঝে তারা,
অপরূপ এক নজর কাড়া
এমন প্রকৌশল হয় না
হলে তারা অলস।
এই কারণে এই জগতে
তাদের এতো নাম যশ।
উপহার
শতের ভোর ঘাসের উপর
জমেছে শিশির বিন্দু,
রূপের আকর সবুজ আসর
চোখ জুড়ানো সিন্ধু।
সোনালি রোদ রূপালি জলদ
করলো মধুর মিতালি,
সন্ধ্যায় নামলো জ্যোস্না জোয়ার
গাইলো সবাই গীতালি।
সৃষ্টি করলো এসব যিনি
ভুলে রইলাম তারে,
ভুল গলাতে ফুল দিয়ে যে
জড়াই উপহারে।
নিবেদন
লাল নীল প্রজাপতি
আমার ঘরে এসো,
জ্যোস্না রাতে আমার সাথে
তুমি খেলতে এসো।
দখিন ঘরে জানালা খুলে
থাকবো বসে একা,
হঠাৎ এসে হেসে হেসে
দেবে আমায় দেখা।
বলবো আমি ভালোবেসে
আমার পাশে বসো।।
ফাগুন রাতে দুজন মিলে
নেবো ফুলের ঘ্রাণ,
মিষ্টি সুরে গাইবে গান
ভরাবে এই প্রাণ।
এই জীবনে প্রতিক্ষণে
ফুলকে ভালোবেসো।।
অপরিণামদর্শী
ব্যালকোনিতে চারা গাছে
ফুটলো প্রথম ফুল,
ভ্রমর এলো মধু নিতে
করলো না তো ভুল।
জীবন গেলো যৌবন গেলো
মরলো ফুলের চারা,
পালিয়ে গেলো গভীর বনে
ভ্রমর হতচ্ছাড়া।
কাঁচা চারা জীবন দিয়ে
দিলো ভুলের মাশুল।।
চারা যদি পড়ালেখা
শিখে বড়ো হতো,
আসতে কাছে ভ্রমরগুলো
কাঁদতো অবিরত।
ঐ ফুলবৃক্ষ হতো পক্ক
নড়তো না একচুল।।