গ্রাহকদের ৬ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সমবায় সমিতি

শাহিনুর রহমান, নীলফামারী
 | প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:১৩

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার শাহীপাড়ার বাসিন্দা সালমা চৌধুরী। দ্বিগুণ মুনাফার আশায় ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ডোমার বাজার ভোগ্যপণ্য সমবায় সমিতিতে। সালমার মতো ছয় শতাধিক গ্রাহক অধিক মুনাফার আশায় ১০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা করে দিয়েছেন এ সমিতিতে। তবে, গ্রাহকদের প্রায় ছয় কোটি টাকা নেওয়ার পর কার্যালয়ে তালা দিয়ে লাপাত্তা সমিতির কমকর্তা-কর্মচারীরা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টাকা ফেরত পেতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করলেও, প্রশাসন থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

তারা জানান, ৪৫ দিন ধরে বিভিন্ন প্রলোভনে গ্রাহকদের থেকে টাকা নিয়েছে সমিতির সভাপতি মামুন হাসান মালিক ও কর্মকর্তা নূর আলমসহ কয়েকজন। টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রশাসনের দুর্বলতার কারণেই এ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন অনেকে।

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সুজনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কুদ্দুস আইয়ুব বলেন, ‘প্রশাসনের নাকের ডগায় কোটি কোটি টাকা তারা আত্মসাৎ করে নিয়ে গেল। অথচ প্রশাসন নিরব। এর নিশ্চয়ই রহস্য আছে।’

তবে পুলিশ বলছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনো কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে আসেনি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষনিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে, টাকা ফেরতের দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, বিভিন্ন লোভনীয় প্রস্তাবে সহাস্রাধিক নারীকে সংগঠনের কর্মী বানিয়ে ডোমার উপজেলা ভোগ্যপণ্য সমবায় সমিতি এসব টাকা হাতিয়ে নেয়। মাত্র দেড় মাসের মধ্যে কোটি টাকা নিয়েছে তারা। গত ১২ ডিসেম্বর সকালে ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে সংগঠনের ক্যাশিয়ার ও দুইজন ট্রেইনারসহ তিনজন পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে নারী কর্মীরা ডোমার সাহাপাড়া এলাকার সংগঠনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে কর্তৃপক্ষের কাউকে না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পরে দুপুরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও পরিচালক নিজেরাই থানায় গিয়ে বিষয়টি জানান। এদিকে, নারী কর্মীরা থানায় উপস্থিত হয়ে টাকা ফেরত চান। সবার টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক কোটি টাকার চেক ও নগদ ছয় লাখ টাকা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা নুরুজ্জামান খানের নিকট জমা ও মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান সংগঠনের সভাপতি মানিক হাসান মালিক ও পরিচালক মামুন রহমান। ছাড়া পাওয়ার পরদিন তারা কর্মীদের টাকা ফেরত দেওয়া কার্যক্রম শুরু করলেও সোমবার সকাল থেকে তাদের আর কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। পরে ভুক্তভোগী নারীরা তাদের পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছে।

জানা গেছে, ডোমারের স্বল্প ও অশিক্ষিত নারীদের টার্গেট করে প্রায় দেড় মাস আগে গড়ে উঠে বাংলাদেশ অনলাইন শপিং সার্ভিসেস। সেখানে ৮০ হাজার টাকা জমা দিলে সাত দিন পর একটি দেড় লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল ও ১৫ দিন পর জমাকৃত সেই ৮০ হাজার টাকাও ফেরত দেওয়া হবে বলে অফার দেওয়া হয়। এ রকম আরো অনেক লোভনীয় অফার দিয়ে অশিক্ষিত নারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা। এতে অসচেতন নারীরা হুমড়ি খেয়ে বিভিন্ন অফার গ্রহণ করে। হঠাৎ করে একসাথে এত নারীর উপস্থিতিতে এলাকাবাসী, পুলিশ ও সাংবাদকর্মীরা ওই সংগঠনের বৈধতার কাগজপত্র দেখতে উদগ্রীব হয়। অভিযোগ রয়েছে, সংগঠনটির কর্তৃপক্ষ কৌশলে কালক্ষেপন করে নাম পরিবর্তন করে গত ১ ডিসেম্বর সমবায় কার্যালয় থেকে ডোমার বাজার ভোগ্যপণ্য সমবায় সমিতি লিঃ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন করে। যার রেজি নম্বর-২৪। সংগঠনের প্রতারিত কর্মীদের অভিযোগ, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা নুরুজ্জামান কোন তদন্তই না করেই রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান জানান, সন্দেহ হওয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদের বার বার ওই সমবায় প্রতিষ্ঠানে টাকা দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কথা না শুনে উল্টো পুলিশের উপর চড়াও হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম জানান, ভুক্তভোগী নারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার সকল চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া, প্রতারকদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৯ডিসেম্বর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :