কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতায় চরম ভোগান্তিতে ছিন্নমূল মানুষ

মমিনুল ইসলাম বাবু, কুড়িগ্রাম
 | প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:২৪

দেশের উত্তরের সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষ। করোনা আর শীতের প্রভাবে নিম্ন আয়ের মানুষজনের নাভীশ্বাস উঠছে।

জমিজমা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সরকারি জায়গায় বস্তার বেষ্টনি দিয়ে তাবু টাঙিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। কনকনে তীব্র শীত উপেক্ষা করে দিন-রাত পার করছেন এই বস্তা দিয়ে টাঙ্গানো ঝুপড়ি ঘরেই। কেউ অর্থাভাবে চকি বা খাট কিনতে না পেরেই মাটিতে খড়ের বিছানা পেতে কাটাচ্ছেন রাত। এই বস্তার ঘরেই ছোট্ট সংসার।

ধরলা নদীর তীরবর্তি শহর রক্ষা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধেও আশ্রিত অনেকে। হিম ঠান্ডা উপেক্ষা কোনো রকমে দিনাপাতিত করছেন। গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা পরায় ঘরের ছাউনি বেয়ে টোপায় টোপায় পানি পড়ে ভিজে যায় বিছানা। প্লাস্টিক দিয়ে কোনো রকমেই তীব্র ঠান্ডা মোকাবেলা করতে হচ্ছে এসব ছিন্নমূল মানুষের।

দেশের দারিদ্রপীড়িত জেলায় এমন হাজারো নিম্ন আয়ের মানুষজনকে শীত মোকাবেলা করতে হচ্ছে কষ্ট করে। করোনার প্রভাবে শীত মোকাবেলায় দিন-মুজুর ও খেটে খাওয়া মানুষকে নাকাল হতে হচ্ছে। ঠিক মতো কাজ না জোটায় সংসার চালানো দায় সেখানে শীতবস্ত্র ক্রয় কিছুটা স্বপ্ন দেখার মতো। করোনা আর শীতে শ্রমজীবী মানুষের বেড়েছে চরম দুর্দশা। আয় কমে যাওয়ায় হতদরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষ পুরাতন কাপড় অথবা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা। দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের দেখা মেলে না। দিনের বেলাতেও কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে প্রকৃতি। রাত বাড়ার সঙ্গে বাড়ে শীতের তীব্রতা। ফলে ঘন কুয়াশায় দিনের বেলায়ও হেড লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন।

দেশের বৃহৎ নদনদীময় এই জেলায় রয়েছে প্রায় পাঁচশতাধিক চরাঞ্চল। শহরের তুলনায় শ্রমজীবী এসব চরাঞ্চলবাসী শীত, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

মজনা বেগম বলেন, শীতের প্রভাবে নাতি নাতনিকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে শীত মোকাবেলা করতে হচ্ছে। নদীর ভাঙনে জায়গা জমি হারিয়ে এখন নিঃস্ব রিকশাচালক ইব্রাহিম আলী। তিনি এখন রেলস্টেনের পাশের একটি খোলা জায়গায় বস্তা দিয়ে টাঙানো ঝুপড়ি ঘরে ছেলে-মেয়ে নিয়ে দিন কাটছে তার।

রিকশাচালক ইব্রাহিম আলী জানান, মেম্বার চেয়ারম্যান কাইয়ো খোঁজ-খবর নেয় না। রিকশা চালিয়ে যেটুকু আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। হামাক যেন সরকার জায়গা ঘর করি দেয়।

যাত্রাপুর ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান রহিম আহমেদ রিপন বলেন, প্রতিবছরই কুড়িগ্রামে শৈত্য প্রবাহ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সরকারিভাবে যেসব শীতবস্ত্র দেয় সেটিও অপ্রতুল। মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত মানুষদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে শীতবস্ত্রের দাম রাখার দাবি জানান তিনি।

জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, ৩৫ হাজার পিচ কম্বল নয়টি উপজেলায় বিতরণ হয়েছে। এছাড়াও মন্ত্রণালয় থেকে ছয় লাখ করে নয়টি উপজেলায় ৫৪ লাখ টাকা শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শুকনা খাবার বরাদ্দ মজুদ রয়েছে নয় হাজার প্যাকেট এবং শীত মোকাবেলায় হতদরিদ্রের জন্য আরো এক লাখ কম্বল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :