একই রুটিনে দিন কাটছে ‘ঘরবন্দি’ খালেদা জিয়ার

প্রকাশ | ২২ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:০৫ | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:১৬

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

শর্তসাপেক্ষে কারামুক্তি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ‘ঘরবন্দি’ প্রতিদিনই কাটছে প্রায় একই রুটিনে। অসুস্থতাজনিত শারীরিক জটিলতার কারণে অন্যের সহযোগিতা ছাড়া তিনি চলাফেরাই করতে পারেন না। প্রতিদিনই একজন চিকিৎসক ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও ছুটে যান বিএনপি নেত্রীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে। আর লন্ডন থেকে শাশুড়ির চিকিৎসার দেখভাল করছেন পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান।

দুর্নীতির মামলায় ২৫ মাস সাজা ভোগের পর ‘মানবিক বিবেচনায়’ সরকারের নির্বাহী আদেশে গত ২৫ মার্চ শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ সেপ্টেম্বর তার সাজার কার্যকারিতা আরও ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে সরকার। ২৫ মার্চ মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাড়ি ফিরোজায় ওঠেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

মুক্তির পর থেকে ঢাকার গুলশানের ‘ফিরোজা’ভবনে গত নয় মাস ধরে বসবাস করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও কৌতূহল কেমন কাটছে বিএনপি প্রধানের দিনকাল। পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ভাষ্য কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও শারীরিক জটিলতা আগের থেকে কমেনি। এখনো তিনি অন্যের সহযোগিতা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না।

বিএনপি সূত্র বলছে, পরিবারের আগ্রহ ছিল সরকারের অনুমতি নিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর। কিন্তু আইনি জটিলতার সঙ্গে সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনার প্রকোপ। যে কারণে লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের কাছে থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরিকল্পনাও আপাতত থমকে গেছে। যদিও যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সরকারের অনুমতি পেলে তার ভিসা পেতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

কারাবন্দি হওয়ার আগে নিয়মিত দলীয় কর্মসূচিতে দেখা গেলেও দুই বছর হতে চলছে তাও পুরোপুরি বন্ধ। আর চলতি বছরের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে মুক্তির পর থেকে নির্ধারিত লোকের বাইরে কাউকে সাক্ষাৎও দিচ্ছেন না খালেদা জিয়া।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় খালেদা জিয়ার কারাজীবন। কারাবন্দি অবস্থায় তার সাজা হয় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও। এর বাইরেও অসংখ্য মামলা চলছে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে।

২৫ মাসেরও বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর চলতি বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া করোনাকালে পরিবারের আবেদনে ‘মানবিক বিবেচনায়’ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। এরপর আরও এক দফায় তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হলেও বাসা ছেড়ে বের হননি তিনি। মাঝে দলের পক্ষ থেকে স্থায়ী জামিনের দাবি উঠলেও তা আর গতি পায়নি।

শারীরিকভাবে যেমন আছেন

নানা রোগে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও বাতের ব্যাথার সমস্যা বেশি কষ্ট দিচ্ছে তাকে। ফলে এ থেকে পরিত্রাণ পেতে নিয়মিত থেরাপি নিতে হচ্ছে। বিশেষ করে জয়েন্টের ব্যথার কারণে এখনো অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারছেন না তিনি। এছাড়া ডায়বেটিকস ও চোখের সমস্যাও ভোগাচ্ছে তাকে। সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য বাসায় স্থায়ীভাবে কাজ করছেন দুজন নার্স। চিকিৎসকের নির্দেশনা মতো তারা সবকিছু দেখভাল করছেন।

জানা গেছে, প্রতিদিনই একজন চিকিৎসক ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করছেন খালেদা জিয়ার। এছাড়াও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও প্রয়োজনে ছুটে যান তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে। তবে লন্ডন থেকে পুরো চিকিৎসার দেখভাল করছেন পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান।

বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি। এখনো কাউকে না ধরে চলাচল করতে পারেন না। শীতে আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় বেশি কষ্ট পাচ্ছেন।

চিকিৎসা তদারকির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডা. জোবায়দা রহমানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে। আমরা কয়েকজন সহযোগিতা করছি। কিন্তু তার উন্নত চিকিৎসা জরুরি।

জানা গেছে, কম ঘুম হওয়ায় দীর্ঘ রাত জাগতে হয় খালেদা জিয়াকে। তবে এর বাইরে তিনি নিয়মিত নামাজ কালাম পড়ার পাশাপাশি দিনভর গণমাধ্যমের খবর দেখেন। আর লন্ডনে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলে সময় কাটান বিএনপিনেত্রী।

বোন সেলিনা ইসলাম জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খুব বেশি উন্নতি নেই। চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। তবে খাওয়াদাওয়া স্বাভাবিক আছে। মাঝেমধ্যে তার পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে যাওয়া হয়।

সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন কারা

রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি করোনার সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। শুধু ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরাই তার সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া প্রয়োজনে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও আইনজীবীরা দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

গত ঈদের সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা শুভেচ্ছা বিনিময় করার সুযোগ পেয়েছিলেন। পরিবারের সদস্য ছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আইনজীবীদের মধ্যে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, চিকিৎসকদের মধ্যে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনকে প্রয়োজনে ডেকে পাঠান বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, কারাগার থেকে মুক্তি মিললেও খালেদা জিয়া এখন ঘরবন্দী আছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু করোনার কারণে তাও সম্ভব হচ্ছে না।

(ঢাকাটাইমস/২২ডিসেম্বর/ডিএম/জেবি)