চাঁপাইনবাবগঞ্জে তীব্র শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

জহুরুল ইসলাম জহির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ২৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:৪৪

সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত সপ্তাহ ধরে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। ঠান্ডা বৃদ্ধি পাওয়ায় ছিন্নমূল মানুষসহ বয়স্ক ও শিশুরা কষ্টে রয়েছে। গত তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। হঠাৎ সুর্যের দেখা মিললেও কনকনে ঠান্ডা রয়েছে সকাল-সন্ধ্যা। অতিরিক্ত কুয়াশায় মাঠে কাজ করতে পারেনা সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষকরা।

হঠাৎ ঠান্ডা বেশি ও তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশু ও বৃদ্ধদের দেখা দিচ্ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগ। বর্তমানে শীতের প্রকোপে নিম্ন আয়ের মানুষরা পড়েছেন বেশ দুর্ভোগে। অভাবী ও ছিন্নমূল মানুষেরা শীতের গরম কাপড়ের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

২৫০ শয্যা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মমিনুল হক জানান, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শিশু ও বয়স্করা। তারপরেও আছে মহামারী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা।

তিনি জানান, পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত ১ সপ্তাহে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে প্রায় ৩ শতাধিক রোগী ভর্তি ও বহিঃর্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে।

গৃহিনী সুমাইয়া আক্তার তুলী জানান, তীব্র শীতে বৃদ্ধ ও শিশুরা মোটেও ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না। এর ফলে লেগে আছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। চলতি সপ্তাহে পরপর দুদিন দেখা মেলেনি সূর্যের। বুধবার সূর্যের দেখা মিললেও কমেনি শিতের তীব্রতা। বেলা ফুরাবার আগেই শুরু হয় হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা।

দুঃখের কথা জানালেন শিবগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, শীতের তীব্রতার কারণে মাঠে কৃষক পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে একা একা শীতকালীন সবজি লাগানো ও দেখাশোনা করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। যদিও কৃষক পাওয়া যায়, তবে এতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমানে মুজরি লাগছে।

রহিমা বেগম জানান, এতো শীতে কিভাবে বাঁচবো বুঝে উঠতে পারছি না। কারণ একটাও শীতের গরম কাপড় নাই। একটা চাদর শরীরে দিয়ে শীত কাটাচ্ছি। আমাদের দেখার কেউ নাই। আমি সরকারের কাছে একটা হলেও শীতের পোশাক দিবে।

বাসের ড্রাইভার মতি জানান, আমরা প্রতিদিন বাস চালিয়ে রহনপুর নাচোল ও ভোলাহাট যাতে হয়। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে সামনে দিকে দশ হাত দূর দেখা যায় না। এজন্য দিনের বেলাও গাড়ির হেডলাইট জালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। তা না হলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে।

খবির আলী জানান, তীব্র শীতের জন্য গরম পোশাকে শীত নিবারণ করতে না পারাই আমরা আগুন জালিয়ে হাত-পায়ে তাপ দিচ্ছি। যাতে শীত কম লাগে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানায়, গত কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রা রেকর্ড ৯-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠানামা করছে। এছাড়াও তিনি বলেন, অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে শীতকালীন শাক-সবজির চাষীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঘন কুয়াশাতে বর্তমানে ধানের বীজতলা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন কৃষকরা। কিন্তু কৃষকদের শীতকালীন শাক-সবজি ও ধানের বীজতলা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

জেলার বিভিন্ন গার্মেন্টস ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে গরম কাপড় কেনার হিড়িক চলছে। যার যার সামর্থ অনুযায়ী লোকজন লেপ-কম্বল এবং শীতের গরম কাপড় কিনছে। আবার কেউ হস্তশিল্পীর কাছ থেকে বানিয়ে নিচ্ছে পোশাক। এতে লাভ হয়েছে বিভিন্ন লেপ তোষকের দোকানির।

শীতকালকে ঘিরে জমজমাট ব্যবসা করছেন বিভিন্ন কসমেটিক্স বিক্রেতারা। শরীরের স্বাভাবিক রাখতে কিনছে হরেক রকমের ক্রিম লোশনসহ বিভিন্ন কসমেটিক্স পণ্য।

নিউমার্কেটের এক দোকানি জানান, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে যখন বিশ্বব্যাপী লক-ডাউন তখন সবাই বাড়িতে ছিল। এখন শীতের কারণে সবাই শপিং করতে আসছেন। বিশেষ করে শীতকালীন পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক একেএম তাজকির-উজ-জামান জানান, শীত নিবারণের জন্য পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ২২ হাজার কম্বল ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে এবং আগামীতে আরো ৩০ লাখ টাকার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।

এদিকে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে কম্বল বিতরণ নিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন; এখনো কম্বল বিতরণ শুরু করেননি।

(ঢাকাটাইমস/২৩ডিসেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :