সবুজের বুকে যেনো হলুদের আলপনা

এম বেলাল হোসাইন, সাতক্ষীরা
| আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:৩৮ | প্রকাশিত : ২৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:৫৪

চারিদিকে শুধু হলুদ আর হলুদ। হেমন্তের ফসল তুলতে না তুলতেই শীতের আগমনে সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে সাতক্ষীরার মাঠ। চির সবুজের বুকে এ যেনো কাঁচা হলুদের আলপনা। মনে হয় পৃথিবী বুঝি তার রঙ হারিয়েছে। শুধু কালের বিবর্তনে হলুদ রঙটা যেন এখনও টিকে আছে।

এবার জেলার নয় হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে হলুদের সমারোহে সজ্জিত সরিষার প্রতিটি ফুলে দুলছে এক লাখ ৮০ হাজার ৫৪০ জন কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে হেক্টর প্রতি ১৩৫ মেট্রিকটন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলার সাত উপজেলার এক লাখ ৮০ হাজার ৫৪০ জন কৃষকের ১১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ১৫ হাজার ৫২৫ মেট্রিকটন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে চার হাজার ৯৯৫ মেট্রিকটন, কলারোয়ায় পাঁচ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে সাত হাজার ৪৩৯ মেট্রিকটন, তালায় ৪৬০ হেক্টর জমিতে ৬২১ মেট্রিকটন, দেবহাটায় এক হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে এক হাজার ৫২৫ মেট্রিকটন, কালিগঞ্জে ৪৫০ হেক্টর জমিতে ৬০৮ মেট্রিকটন, আশাশুনিতে ১৯০ হেক্টর জমিতে ২৫৬ মেট্রিকটন ও শ্যামনগরে ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৮১ মেট্রিকটন।

কিন্তু নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমে সাতক্ষীরা সদরে তিন হাজার ৫২০ হেক্টর, কলারোয়াতে এক হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমে তিন হাজার ৭০০ হেক্টর, দেবহাটায় ১৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমে ৯৫০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমে ৩৫০ হেক্টর ও শ্যামনগরে কৃষিবিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাঁচ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমে ৫৫ হেক্টর জমিতে এবার সরিষার চাষ হয়েছে।

তবে জেলার সাত উপজেলার ভিতরে পাঁচ উপজেলা সরিষা চাষে কৃষিবিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় পিছিয়ে থাকলেও বাকি দুইটি উপজেলা তালা ও আশাশুনিতে কৃষি বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৪৬০ ও ১৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে জেলা কৃষি অফিস আট হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। তবে সাতক্ষীরায় সরিষা চাষ লাভজনক ফসল হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয় নয় হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে। পরবর্তীতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ বেশি হয়ে মোট চাষাবাদ হয় নয় হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় কয়েকশ হেক্টর জমিতে আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়। তবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বিগত অর্থ বছরের তুলনায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ কমে যেয়ে নয় হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে।

বিগত বছরের তুলনায় এবছর চাষাবাদ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে অসময়ের বৃষ্টি, জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন কারণকে দায়ী করছে কৃষি বিভাগ। এ বছর সরিষার চাষাবাদ কম হলেও কলারোয়া, সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায়, কৃষকদের আবাদকৃত জাতের মধ্যে রয়েছে বারি ৯, ১৪, ১৫ ও ৪, টরি-৭ ও স্থানীয় জাত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বারি-১৪ ও ১৫ জাতের সরিষার চাষ।

সরিষার জমিতে ফুলে ফুলে মৌমাছি মধু আহরণ করছে। চারিদিকে প্রকৃতির বুকে সুন্দরের আগুন। প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সৌন্দর্যের নান্দনিক রূপে। রাস্তার দুপাশে সরিষার হলুদ ফুলে ভরা দিগন্তজোড়া মাঠ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে আসে। মন চায় সেই হলুদের মাঝে হারিয়ে যেতে। মাঠ ভরা সরিষা ক্ষেতের হলুদ মাঠে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে মৌমাছিরা মনের আনন্দে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত।

হলুদের মাঠে কৃষকের স্বপ্ন খেলা করছে এখন। সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিরা এখন ঝুঁকে পড়ছেন সরিষা চাষে। কেউবা সরিষার বীজ তৈরি করেও লাভবান হচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সাতক্ষীরায় সরিষার চাষে ভালো ফলনের আসা করছেন কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় সরিষা চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। তবে একদিকে করোনার সংক্রমণ, অন্যদিকে চলতি বছরে বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে কৃষকদের মূলধন কমে যাওয়ায় নয় হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। তবে অল্প সময়ে উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষে অধিক ফলন পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে দিনে দিনে লাভজনক ফসল হিসেবে সরিষার কদর বেড়েছে জেলার কৃষকদের কাছে।

নুরুল ইসলাম বলেন, অনুকূল আবহাওয়া ও নিবিড় পরিচর্যার কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা সরিষার ভালো ফলন পেয়েছেন। বিঘা প্রতি ছয়-আট মণ সরিষা পাচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়া প্রায় তিন হাজার মৌ বক্স স্থাপন করায় ১৫-২০ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৫ডিসেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :