সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় অনিয়মের অভিযোগ
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলায় ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। সেইসঙ্গে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। তবে, হাসপাতালটিতে আগত ও ভর্তি থাকা রোগীরা সেবার বদলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঠিকমতো সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনরা।
তারা জানান, সেবার বদলে হাসপাতালে ভোগান্তিই বেশি হচ্ছে তাদের। বেশির ভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।
হাসপাতালটিতে গত সাতদিনে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৫৪ জন এবং নিমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ১০৪ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। ইতোমধ্যে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে মারা গেছে পাঁচজন শিশু।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। ওয়ার্ডের বেডে জায়গার না হওয়ায় মেঝেতেও রোগীর চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে জনবল সংকটসহ কাজে আসছে না উন্নত মানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি। শিশুদের ভর্তি করানো স্বজনরা হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন।
‘সরকারি হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে ভর্তি হলে টাকা কম লাগবে মনে করেছিলাম এখন দেখি, ভর্তি হওয়ার পর থেকে শুধু ওষুধই কিনে আনতে হয়। মেয়েটা এখনো সুস্থ হয়নি। ডাক্তারও মাত্র দিনে একবার সকালে এসে দেখে যায় আর আসেন না।’
কথাগুলো বলছিলেন সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের আমিন মিয়া।
আমবাড়ী এলাকার বাসিন্দা নুর আলী বলেন, এই সরকারি হাসপাতালে আমাদের যে রকম সেবা পাওয়ার কথা তা পাচ্ছি না। সেবার বদলে এখানে ভোগান্তিই বেশি হচ্ছে। ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু আমার ছেলের হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় হাত ফুলে যাচ্ছিল। পরে বিষয়টি নার্সকে বললে, সে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে।
জগাইরগাঁও গ্রামের লিটন মিয়া বলেন, সরকারি হাসপাতালে মেয়েকে শুধু স্যালাইন দিচ্ছে। আর বাকি ওষুধের জন্য কাগজ লিখে দেয় বাইরে থেকে আনার জন্য। হাসপাতালে ওষুধ নেই। জিজ্ঞেস করলেই খারাপ ব্যবহার করে। তাই লিখে দেয়া ওষুধ আমি বাইরে থেকে কিনে নিয়ে এসেছি।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে রোগীদের সঙ্গে আসা মবিনুর হোসাইন, মুসাসহ অনেকেই প্রশ্ন তুলেন, সুনামগঞ্জ জেলার এতবড় হাসপাতালে শিশুদের দেয়ার মতো কোনো ওষুধ নেই, তাহলে সরকার থেকে যে ওষুধ দেয়া হয় সেগুলো কোথায় যায়?
তবে এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন শামস উদ্দিন বলেন, ‘সদর হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে, তবে ইডিসিএল’র কিছু ওষুধের ঘাটতি রয়েছে। খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ আমি পাইনি। পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় যে পাঁচজন শিশু মারা গেছে তার জন্য ডাক্তারদের অবহেলা বা ওষুধের সংকটের কোনো কারণ নেই।’
(ঢাকাটাইমস/২৫ডিসেম্বর/পিএল)