করোনা দুর্যোগ তাদের দেখাল নতুন উদ্যোগের পথ

আল-আমিন রাজু, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:২২ | প্রকাশিত : ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৩৮

কলেজ শিক্ষার্থী মুরশিদা মুমু স্বাভাবিক সময়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন করে নিজের খরচ চালাতেন। গেল মার্চে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে বিপাকে পড়ে যান এ তরুণী। কারণ তার টিউশনও বন্ধ হয়ে যায়। নিজের ও পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খান তিনি। তবে ভেঙে না পড়ে অনলাইনে ব্যবসা করার পরিকল্পনা করেন মুমু।

গত জুলাইয়ে ‘বিরাম’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ খুলে টাঙ্গাইলের চমচম ও শাড়ি বিক্রি শুরু করেন। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে অনলাইন ব্যবসায় নেমে দুই মাসের মাথায় বিনিয়োগও বাড়ান মুমু। আর ছয় মাসে তার ব্যবসা এখন ছাড়িয়ে গেছে মাসে লাখ টাকার লেনদেনে।

জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মুরশিদা মুমুর স্বপ্ন তার ব্যবসাকে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া। এরইমধ্যে দেশের ক্রেতাদের পাশাপাশি প্রবাসে থাকা অনেক বাংলাদেশিও তার থেকে পণ্য নিচ্ছেন বলে জানান মুন্সীগঞ্জের মেয়ে মুমু।

তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হতাশাকে পেছনে ফেলে বিরামকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখছি। আমি এখন ৬৪ জেলার বিখ্যাত সব পণ্য নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে সহায়তা পেলে এ স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাবো।’

মুরশিদা মুমুই নন, করোনাভাইরাসের দুর্যোগে পড়ে জীবন-জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়া অনেক তরুণ-তরুণীই অনলাইনে ব্যবসায় নেমেছেন। নিষ্টা আর পরিশ্রমের পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মান রক্ষা করায় তাদের অনেকেই মাত্র কয় মাসেই উদ্যোক্তা হিসেবে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন।

করোনাকালে কাজ না থাকা অনেক তরুণ-তরুণীই উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। নতুন নতুন পণ্য দিয়ে নিজেদের আলাদাভাবে চিনিয়েছেন। আয়ের পাশাপাশি অন্য বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে তাদের প্রতিষ্ঠান।

ই-ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী করোনাকালীন সময়ে দেশে এক লাখেরও বেশি অনলাইনভিত্তিক ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তারা মূলত তৈরি পোশাক, ঘরে তৈরি খাবার, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের পণ্য তুলে দিচ্ছেন ক্রেতাদের হাতে। ক্রেতার আস্থা অর্জন করে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন সফলতার পথে।

তেমনই একজন পারভেজ হাসান সুমন। করোনার আগে একটি প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করতেন সুমন। প্রতিষ্ঠানের বিক্রি হওয়া পণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেয়া ছিল তার কাজ। কিন্তু করোনার প্রকোপের মধ্যে কাজটি হারান এ তরুণ। বেকার হয়ে পড়ে পণ্য পৌঁছে দেয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চিন্তা করলেন তিনি।

এরপর নিজেই শুরু করেন অনলাইনে পণ্য বিক্রয়কারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কুরিয়ারের কাজ। গড়ে তোলেন ‘বঙ কুরিয়ার’ নামে ছোটখাটো একটি প্রতিষ্ঠান। অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে সামান্য টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা সুমন এখন মোহাম্মদপুরে তিন কক্ষের একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে অফিস করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানে ১০ থেকে ১৫ জন কর্মী কাজ করছেন। সুমন জানান, প্রতিদিন অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রি হওয়া দেড়শরও বেশি পণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিচ্ছে তার বঙ কুরিয়ার।

দেশে অনলাইন উদ্যোক্তাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, করোনাকালে এক লাখেরও বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক উদ্যোক্তা ই-ক্যাবের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে জানিয়ে তমাল বলেন, ‘অনলাইনভিত্তিক ব্যবসাটি শুরু করার পর অনেকে টিকে থাকেন আবার অনেকে হারিয়ে যান। হারিয়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম একটি কারণ ব্যবসা পরিচালনার জন্য যথেষ্ট জ্ঞান না থাকা। যেহেতু এটি একটি নতুন ধরনের ট্রেন্ড তাই এখানে মানিয়ে নিতে হবে। এই সকল ঝুঁকি এবং উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃ্দ্ধিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। পাশাপাশি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলেও আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছি।’

(ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :