মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি পণ্য

জরিমানার তথ্য এনবিআরে পাঠাতে কাস্টমস হাউজের গড়িমসি

প্রকাশ | ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:০৪ | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:২০

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির অভিযোগে করা জরিমানার তথ্য চেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জাতীয় বাজেট প্রণয়নের পর দুবার এই তথ্য চাওয়া হলেও অধিকাংশ কাস্টমস হাউজ থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি। যে কারণে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে এনবিআরের উদ্যোগ কার্যত কাজে আসছে না। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় কাস্টমস অ্যাক্টের কিছু ধারায় পরিবর্তন আনা হয়। অর্থ আইনের (৯নং আইন) এর অনুচ্ছেদ ১১ তে বলা হয়েছে─ Such person shall be liable to a penalty at least twice but not exceeding four times the amount of the tax evaded in respect of which such offence is committed and such goods shall be liable to confiscation; অর্থাৎ দি কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯ এর ৩২ ধারায় অপরাধ সংঘটিত হলে সর্বনিম্ন দুইশ শতাংশ জরিমানার বিধান রয়েছে।

অর্থাৎ কোনো আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করলে সর্বনিম্ন দুইশ শতাংশ এবং সবোর্চ্চ চারশ শতাংশ জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু কিছু কাস্টমস হাউজ এই আইনের বাস্তবায়ন করলেও অধিকাংশ হাউজে গড়িমসি বিদ্যমান। এতে বড় অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

সূত্র জানায়, এনবিআর থেকে ৩২ ধারায় করা জরিমানার তথ্য চাইলেও অধিকাংশ কাস্টমস হাউজ এই তথ্য এনবিআরে পাঠাতে গড়িমসি করছে। সর্বশেষ ১ ডিসেম্বর এই সংক্রান্ত চিঠি কাস্টমস হাউজগুলোর কাছে পাঠায় এনবিআর। তবে এখন পর্যন্ত একটি কাস্টমস হাউজ ছাড়া বাকিগুলো এই তথ্য দেয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, কিছু কিছু কাস্টমস হাউজে এই আইনের বাস্তবায়ন হলেও অধিকাংশ হাউজে চলছে গড়িমসি। অসাধু ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে এই আইনের প্রয়োগে তাগিদ নেই অনেকের। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতে তথ্য প্রদানের জন্য একাধিকবার পত্র দেয়া হলেও দেশের সবচেয়ে বড় কাস্টমস হাউজ চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ এবং ঢাকা কাস্টমস হাউজ এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য এনবিআরকে দিচ্ছে না। নানা বাহানায় সময়ক্ষেপণ চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের শুল্ক নীতির সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া সত্যতা স্বীকার করে ঢাকা টাইমসকে বলেন, তথ্য চেয়েছি এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, পত্রিকার বিষয় না।

এনবিআরের একটি সূত্র বলছে, জরিমানার তথ্য খুবই স্পর্শকাতর। কারণ জরিমানার ক্ষেত্রে কাউকে সুবিধা দিলে অ্যাকশনে যাবে এনবিআর। আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণে যদি সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়। সেক্ষেত্রে এনবিআরের কাছে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। তাই কিছু কাস্টমস হাউজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।

আর কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে জরিমানা বাবদও সরকারের শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি সংঘটিত হচ্ছে। যেখানে দুইশ ভাগ জরিমানা করার বিধান সেখানে হয়ত ৫০ শতাংশ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র জরিমানা করা হয়েছে। আর এসব কারণে বিষয়টি নিজেদের কাছে রাখতে চান মাঠ পর্যায়ে কাস্টমসের শীর্ষ কিছু কর্মকর্তা।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, এখন পর্যন্ত একটি কাস্টমস হাউজের তথ্য ছাড়া আর কোনো হাউজের তথ্য এনবিআরে আসেনি।

সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র বলছে, ৩২ ধারায় এর আগেও একবার চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। এবারও তেমন হতে পারে। কারণ এসব তথ্য এনবিআর যাচাইবাছাই করলে আরও অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। যার কারণে তারা এসব তথ্য দিতে চাচ্ছেন না।

সূত্র আরও জানায়, দেশের ছয়টি কাস্টমস হাউজকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির অভিযোগে যেসব পণ্য চালানে জরিমানা করা হয়েছে তার তথ্য চেয়েছে রাজস্ব বোর্ড। এর মধ্যে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ ছাড়া বাকি পাঁচটি কাস্টমস হাউজ এনবিআরের এই চিঠি আমলে নেয়নি। মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্য চালানের তথ্য দিতে গড়িমিসি করছে তারা।

সূত্র মতে, এসব পণ্য চালান এনবিআর পর্যালোচনা করলে হয়ত কারো কারো সুবিধা দেয়ার বিষয়টি উঠে আসবে। বিশেষ করে যেসব পণ্য চালানে অনিয়ম হয়েছে অর্থাৎ ৫০ শতাংশ বা কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র জরিমানা করে পণ্য চালান খালাস করা হয়েছে। সেসব বিষয় এনবিআরের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে চলে আসবে। এ কারণে এসব পণ্য চালানের তথ্য দিতে গড়িমসি করছে কাস্টমস হাউজ।

তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তারা বলছেন, গত পাঁচ মাসের তথ্য কম্বাইন্ড করে দিতে হয়। যার কারণে একটু সময় লাগছে। তবে দেশের অন্যতম দুটি কাস্টমস হাউজের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কাস্টমস হাউজগুলো আইন থাকার পরও কেন তারা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে না এটা এনবিআরকে দেখতে হবে। প্রথমত দেখতে হবে যথানিয়মে কাস্টমস কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন কি না।’

ইফতেখার বলেন, ‘কাস্টম কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এটা হয়েছে কি না নইলে সে প্রশ্নও উঠবে। হয়তো তাদের সৎসাহস নেই। একারণে এনবিআরের চিঠি পেয়েও তারা রেসপন্স করছে না। কিন্তু দেশের রাজস্বের ফাঁকি রোধে এনবিআরকে চুপ করে থাকলে চলবে না। আইন অনুযায়ী এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/ডিএম)