যে ফুল ফল হয় না, সে ফুল ফুটে লাভ কি
প্রকাশ | ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:২৩ | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:২৬
‘যে ফুলে ফল হয় না; সে ফুল ফুটে লাভ কি!’
আমার মাথার মগজের খাজানায় যে দিন থেকে
এই প্রশ্নের ঘুণপোকারা কূট কূট করে কামড়াতে শুরু করলো,
সেদিন থেকে বলা যায়
অফিশিয়ালি আমার বিষয়-বুদ্ধি গজিয়েছে।
এ রকম ফুল ফোটা এখন কেবল অহেতুকই নয়; বরং বেআইনি।
পরাগায়নের খোঁড়া যুক্তি আমার মন জয় করতে পারে না।
কারণ, হাজার বছর ধরে পরাগ রেণুর হোলি খেললেও
কোনো ফল কি ফলাতে পারবে জবা ফুল?
বরং আমি ডুমুরের প্রতি অতি প্রসন্ন;
ফুলের তোয়াক্কা না করেই ফল ফলিয়ে এরা বনস্পতি।
আর ডুমুর ফুল, ডুমুরের ফুল হয়েই থেকে যায় মুখে মুখে।
ফল ফলাতে-পারা ফুলকে
ফল ফলানোর বাসর থেকে নানান খেয়ালি অজুহাতে
জোর করে তুলে নিয়ে, কিংবা
কারবারিদের কাছ থেকে কিনে এনে
কারো খোঁপায় গুঁজে দেয়ার মতো মনবিহারিপনায়
কিসের বাহাদুরি? হায় রে!
অন্যের মন পেতে ফুলের মন ভাঙে রসিক নাগর!
ফুলের আনুষ্ঠানিকতার বাহারি পাথরে
এভাবেই চাপা পড়ে থাকে কত্তো মনের গভীর চুপকথা,
ফুলের সমাধির খনিতে সেই মণি মাটি হয়ে পড়ে থাকে।
আমি বুদ্ধির বাটি চালান দিয়েও ধরতে পারিনি
আবেগের ঘোড়-সওয়ারিরা মনের খোরাক কাকে বলে ?
মনের কি জঠর যকৃত কিছু আছে?
মনের পেট নেই, পেটের জ্বালাও নেই।
দেহের পেট আছে,পেটের জ্বালাও আছে।
ফুল নয়, ফলই জঠর জ্বালা মেটায়।
বুদ্ধির চাষে ফল-ফসল ফলে; গোলা ভরে, পেট ভরে।
আত্মার চাষে ফুল ফোটে; চিত্ত ভরে, মন ভরে।
(যদিও এই বেফজুল কথার ভাত নেই বাস্তবতার সতিনের ভিটায়।)
আমার ‘খাই খাই’ ভাবটা কেনো আপনাকে
এতোটা ভাবনায় ফেলে দিলো, জানিনা।
ভাবুন তো! এই যে পরিযায়ী পাখিরা অকারণ উল্লাসে
উদাস আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়,
তাতে আপনার কী লাভ?
আপনার খাবার টেবিলের প্লেটে প্লেটে
এই তেলতেলে পাখিদের চিত হয়ে পড়ে থাকার দৃশ্যটা
একবার ভিজুয়ালাইজ করুন তো!
কিংবা, বনে জঙ্গলে হরিণের বাচ্চাগুলো হেসে-খেলে দলবেঁধে
গোল্লাছুট খেললে আপনার কী লাভ?
এই সোনার হরিণগুলোর নাদুস নুদুস শরীর যদি
আপনার সেবায় খাবার টেবিলে এসে আপনার খাদ্য হয়;
সেই দৃশ্যটা একবার ভিজুয়ালাইজ করুন তো!
কি বললেন, বীভৎস? বিকৃত রুচি? অমানবিক? এজিদ?
আপনি তো সাহেব আবেগি প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন,
জিহ্বার আবদার আর আপনার পেটের অধিকারের কথাটা
একবারও ভাবলেন না আপনি?
হ্যাঁ, আমি সে সব ভাবি বলেই আমি বুদ্ধিমান,
আপনি সে সব ভাবতে পারেন না বলেই আপনি বুদ্ধু।
আর আপনার সমস্যাটা এমন প্রকট যে,
বানান আর উচ্চারণে কাছাকাছি বলে
আপনি ‘বুদ্ধু’ আর ‘বুদ্ধিমান’র মধ্যে তেমন ফারাক দেখেন না।
আপনি বলছেন, ‘মন ও মগজ মিলেই মানুষ,
পশুর মন থাকে না, কেবল মগজ থাকে।’
ঠিক আছে, ঠিক আছে, কথা বাড়িয়ে লাভ নেই,
লাভের বোধ যার নেই,তাকে লাভের লোভ দেখিয়ে লাভ নেই।
মন-ময় মানুষ বোধিবৃক্ষের ছায়ায় বসে মনুশাস্ত্র ঘাঁটুক,
মগজ-ময় সারমেয় স্বর্গচ্যুত ভূচরের বুদ্ধির ঘট চাটুক।