বাউফলে বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে দালালদের দৌরাত্ম্য

কৃষ্ণ কর্মকার, বাউফল (পটুয়াখালী)
 | প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৫৪

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদী বেস্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য সাড়ে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নেয়া প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আগামি ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাউফল জোনের আওতায় এই কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এদিকে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন ও সংযোগ তার টানার মধ্যেই দালালরা গ্রাহকদের দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পাইয়ে দিতে নিয়মের বাইরে টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, জরিপ অনুযায়ী চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার গ্রাহক রয়েছে। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই গ্রাহকদের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য ২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২৬ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদীর তলদেশ দিয়ে লাইন নেয়ার জন্য এক কিলোমিটার সাবমেরিন কেবল লাইন স্থাপন করতে হবে।

এছাড়া চন্দ্রদ্বীপের জন্য বাউফলের গোসিংগা সাব-স্টেশন থেকে ভিন্ন একটি গ্রিড লাইনও নির্মাণ করা হচ্ছে। গত জুলাই মাস থেকে শুরু করে ইতিমধ্যেই শতকরা ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২১ সালের ১৭ মার্চ বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনের উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পটুয়াখালী থেকে বাউফল পর্যন্ত গ্রিডের সাব স্টেশন করা না হলে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটতে পারে।

বাউফল পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্র জানিয়েছে, চন্দ্রদ্বীপের জন্য কোনো অভিযোগ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা এই প্রকল্পের মধ্যে ধরা হয়নি। ফলে বাউফল থেকে প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদী পাড়ি দিয়ে চন্দ্রদ্বীপে কাজ করতে হবে। এটি গ্রাহক এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে বিদ্যুৎ লাইনের কাজ শুরু হতেই গ্রাহকদের ঘর ওয়ারিং ও দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগে দেয়ার নাম করে পাঁচ থেকে ছয় হাজার করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহাবুদ্দিন ওই টাকা আদায় করছেন বলে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের অনেক গ্রাহক জানিয়েছেন। বিষয়টি বাউফল পল্লী বিদ্যুৎ অফিস জানার পর চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে মাইকিং করে দালালদের খপ্পরে না পরার জন্য গ্রাহকদের অনুরোধ করা হয়েছে।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহাবুদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন স্থাপনের খবরে বাউফলের মূল ভূখন্ড থেকে একাধিক ইলেকট্রিশিয়ান চরে এসে গ্রাহকদের ঘর ওয়ারিং করার প্রস্তাব দেন। তারা গ্রাহকদের থেকে বেশি টাকা দাবি করেন। এই প্রেক্ষিতে চন্দ্রদ্বীপের গ্রাহকদের সুবিধার জন্য আমি মাত্র ২৩ জনের থেকে পাঁচ হাজার করে টাকা নিয়েছি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, অনেক গ্রাহকের কাছ থেকেই টাকা নেয়া হয়েছে। তারা ভয়ে মুখ খুলছেন না। চন্দ্রদ্বীপের মানুষ তাদের কাছে জিম্মি। শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আরো কয়েকজন দালালও রয়েছেন।

এ বিষয়ে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক আলকাচ মোল্লা জানান, গ্রাহকদের ঘর তারা নিজেরাই ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে ওয়ারিং করিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বাউফল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার একেএম আজাদ জানান, চন্দ্রদ্বীপের গ্রাহকদের থেকে টাকা আদায়ের খবরে আমরা দালালের খপ্পরে না পরার জন্য মাইকিং করিয়েছি। এর পরেও গ্রাহকরা কাউকে টাকা দিলে সেটা তাদের দায়িত্ব। প্রতি গ্রাহকের ঘর ওয়ারিং এবং মিটারসহ বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে দুই হাজার টাকা লাগতে পারে।

তিনি জানান, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য বাউফলে গ্রিড সাব স্টেশন করার প্রস্তাব অনেক আগেই দেয়া হয়েছে। এটি এখন মন্ত্রণালয়ে আছে।

(ঢাকাটাইমস/২৮ডিসেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :