মহামারিতে বিদায়ী বছর

খালেদা জিয়ার মুক্তি ছিল বিএনপিতে ‘বড় স্বস্তি’

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৫৪ | প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৩৫

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর ঘর গোছাতে মনযোগী ছিল বিএনপি। সে ধারাবাহিকতা বজায় ছিল বিদায়ী ২০২০ সালেও। তবে করোনার কারণে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেমে গেলে অনেকটা নিয়মবাঁধা ছোট কর্মসূচি আর ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানেই বছর পার করেছে দলটি।

তবে করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে মানবিক দিক এবং বয়স বিবেচনা করে শর্তসাপেক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয় সরকার। দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে ৭৭৬ দিন পর দলপ্রধানের মুক্তি ছিল বিদায়ী বছরে বিএনপির জন্য এটাই ছিল সবচেয়ে বড় স্বস্তির খবর।

করোনার মধ্যে বিভিন্ন দিবসকেন্দ্রিক ভার্চুয়াল সভা, সেমিনার দোয়া মাহফিল, কালো পতাকা মিছিল, মানববন্ধন আর ভার্চুয়াল আলোচনা সভার বাইরে তেমন দলীয় কার্যক্রম না থাকলেও প্রেস ক্লাবভিত্তিক মানববন্ধন এবং আলোচনায় সরব ছিলেন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া ঢাকার পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় আর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপি।

এদিকে করোনা মহামারি শুরুর আগে বিদায়ী বছরের শুরুতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। এ নির্বাচনকে ঘিরে বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠিছিল দলটি। তবে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে দলটি ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে হরতাল পালন করে। ২০২০ সালে এটাই ছিল বিএনপির একমাত্র হরতাল পালন। এছাড়া বছরজুড়ে একটি মাত্র বড় সমাবেশ করেছিল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্বের দুই বছর উপলক্ষে নয়াপল্টনে আয়োজিত ওই সমাবেশে বিপুল নেতাকর্মীকে জড়ো করেছিল দলটি।

করোনার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা একর্থে না চললেও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নিজেদের সাধ্যমতো সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা ছিল। এসব দিক থেকে কিছুটা স্বস্তিতে কাটলেও বছরজুড়ে দলের অভ্যন্তরীণ কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে বিব্রত হতে হয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডকে। এছাড়া ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টকে নিয়েও বেকায়দায় পড়তে হয়েছে দলটিকে।

গতি ছিল না সংগঠন গোছাতে

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয়ের পর নতুন করে দল গোছানোর দিকে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করেও মহামারির কারণে তা খুব একটা এগোয়নি দলটির। অন্যদিকে দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি করেও পুনর্গঠন করতে পারেনি তৃণমূলের কমিটি। সারাদেশে ৮০টি সাংগঠনিক কমিটির মধ্যে মাত্র ৩৪টি পূর্ণাঙ্গ কমিটি, ২৩টি আহ্বায়ক কমিটি এবং ১৬টি আংশিক কমিটি রয়েছে। বাকি জেলাগুলোয় মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া কমিটিই দায়িত্ব পালন করছে। অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটে কমিটি করতে একাধিকবার সময় বাড়িয়েছে দলটি।

অনিশ্চিত কাউন্সিল

তৃনমূলের মতো কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। ৪০টির বেশি পদ শূন্য হয়ে আছে। ২০১৯ সালের ১৯ জুন দুটি শূন্যপদে সিনিয়র নেতা সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে নিয়োগ দিলেও স্থায়ী কমিটির তিনটি পদ বখেনো ফাঁকা।

এদিকে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল হয়েছে। সে অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হয়েছে বেশ আগে কিন্তু কবে নাগাদ কাউন্সিল করা হবে- তা এখনো ঠিক করতে পারেননি দলের শীর্ষ নেতারা। তবে পুনর্গঠন শেষ না হওয়ার আগে কাউন্সিল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে ছাত্রদল-যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে নতুন নেতৃত্ব আসলেও ঢাকার দুই মহানগরে মেয়াদ পার হয়েছে বিএনপির মূল কমিটির। যদিও এখনো আংশিক রয়ে গেছে কমিটি। তবে অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ কমিটি হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব

বছরজুড়ে বড় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও বিএনপিকে সামাল দিতে হয়েছে বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। এসব দ্বন্দ্ব নিয়ে বেশ সমালোচনায়ও পড়তে হয়েছে তাদের। ঢাকা-১৮আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১২ সেপ্টেম্বর চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার ঘিরে সংঘর্ষ হয়। এই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন এবং কফিল উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের অনেকে আহত হন।

যদিও এই ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কার করায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিএনপিতে। এরজেরে গত ১০ অক্টোবর মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের কর্মী ও সমর্থকরা মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উত্তরায় বাসার সামনে বিক্ষোভ করেন। এসময় বিক্ষুব্ধরা মহাসচিবের বাসায় ইটপাটকেল ও ডিমও ছুঁড়ে মারেন।

জোটেও অস্বস্তি

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির দূরত্বের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ জোটের বৈঠক। মাঝে ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ। শুধু তাই নয়, শরিক দলের নেতাদের কেউ কেউ আবার বিএনপির পক্ষ থেকে মূল্যায়ণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

এছাড়াও নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের অংশ হিসেবে জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াত, এলডিপি ও কল্যাণ পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিএনপির টানাপড়েন বাড়ে। এ দলগুলোকেও সন্দেহের তালিকায় রেখেই চলছে বিএনপি।

দ্বন্দ্ব-অবিশ্বাস থামেনি

এদিকে বছরজুড়ে বিএনপির অভ্যন্তরে চলছে নানা মতবিরোধ। অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে সৃষ্ট এসব বিরোধের জের পড়েছে দলীয় কর্মসূচি পালনেও। আর এজন্যই সরকার হটানোর আন্দোলনে সফল হতে পারেননি বলে শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেন।

বছরের শেষ সময়ে বিএনপির একাধিক ভাইস চেয়ারম্যানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সমালোচনা করায় অস্বস্তি শুরু হয়। সবশেষ দুজনকে শৃঙ্খলা ভঙের অভিযোগে শোকজ দেয়া হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দল ছাড়ারও হুমকি দিয়েছেন তারা।

(ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

বাংলাদেশে একদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবেই, তখন আ. লীগ থাকবে না: আমিনুল হক

উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তৃণমূল আ.লীগে বাড়ছে দ্বন্দ্ব

সরকারের এমপিরা ঘোষণা দিয়ে লুটপাট শুরু করেছে: এবি পার্টি

বদরের চেতনায় লড়াই অব্যাহত রাখার আহ্বান ছাত্রশিবির সভাপতির

আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ফখরুলের

বিএনপির ভারত বিরোধিতা মানুষের কষ্ট বাড়ানোর নতুন সংস্করণ: নাছিম

ভোট ডাকাত সরকারকে সমর্থনকারী দেশের পণ্য বর্জন ন্যায়সঙ্গত: রিজভী

১১ মামলায় আগাম জামিন পেলেন বিএনপি নেতা বকুল

বর্তমান সরকার ভারতের অনুগ্রহে ক্ষমতায় বসে আছে: সাকি

জিয়াউর রহমান উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে: ওবায়দুল কাদের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :