অভাবে চিকিৎসা থেমে যাচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমার
জামালপুর জেলার একমাত্র আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমা। জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকা দিঘলাকোনা গ্রামের এ মুক্তিযোদ্ধা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত। এদিকে অভাবের কারণে তার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারছে না পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে তার চিকিৎসা সহায়তার প্রতীক্ষায় আছে পরিবারটি।
স্ত্রী মিলন দাংগো ও ডিগ্রি ২য় বর্ষে পড়ুয়া ছেলে জয় দাংগোকে নিয়ে তার সংসার।
জয় দাংগো বলেন, ‘চলতি বছরের জুন জুলাইয়ের দিক থেকে বাবা পেটে ব্যাথা অনুভব করতে শুরু করে। আমরা এখানে কিছুটা চিকিৎসা করাই। এই চিকিৎসায় কাজ না হলে গত ৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকরা বাবাকে ঢাকায় রেফার্ড করে। পরে সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে নেওয়া হলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাবার লিভার ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা বাবাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের গরিবের সংসার। মাত্র ২৫ শতাংশ কৃষি জমি আছে। এটা চাষাবাদ করেই চলি। বাবা যে ভাতা পায় সেটা দিয়েও চলে না। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমরা টাকা কোথায় পাবো। একবার ইউএনও ম্যাডাম এসে ২০ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। মাঝে মাঝেই তিনি খবর নেন। সেটা দিয়ে কিছুদিন ওষুধ কিনে খাওয়াইছি। এখন আর কোনো টাকাই নাই। ওষুধ তো দূরের কথা ভাত খাওয়ার টাকাই আমাদের নেই।’
জয় দাংগো বলেন, বিজয়ের মাসে সারা দেশ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে। আমার বাবাও এই দেশকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করেছেন। আমার বাবাকে কেউ স্মরল করে না। কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা আমার বাবার চিকিৎসার জন্য সহায়তা করলে আমাদের খুব উপকার হত।’
এবেন্দ্র সাংমার স্ত্রী মিলন দাংগো বলেন, ‘জয়ের বাবার অবস্থা খুব খারাপ। হাটা-চলা করতে পারে না। কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে। খুবই কম খায়। এখন আঙ্গর কাছে টাকাউ নাই যে একটু চিকিৎসা করমু। কেউ যদি একটু সাহায্য করতো, অনেক উপকার হইতো।’
৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশে যখন যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করে, তখন বাবা জাংবান মারাকের কাছে অনুমতি নিয়ে ভারতে চলে যান ১৯ বছরের কিশোর এবেন্দ্র সাংমা। সেখানে প্রশিক্ষল শেষে অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। প্রথমে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলা এবং পরে জামালপুর জেলার ঐতিহাসিক কামালপুরে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।
বকশিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুন মুন জাহান লিজা জানান, এ জেলার একমাত্র আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমা। তার চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একবার ২০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার ছেলে জয় দাংগোর সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ করা হচ্ছে। তার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ ও ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমার চিকিৎসা চলাকালীন উপজেলা প্রশাসন তাকে সার্বিক সহায়তা করেছে। উপজেলা প্রশাসন সবসময় তার পাশে আছে বলে জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/৩১ডিসেম্বর/পিএল)