নিরাপদ পানির অভাবে ভোগান্তিতে সাতক্ষীরার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

বেলাল হোসাইন, সাতক্ষীরা
 | প্রকাশিত : ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:২৮

নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে নানা সমস্যায় ভুগছেন সাতক্ষীরার সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ২৪ গ্রামে পিছিয়ে পড়া দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ পরিবার। দলিত সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক বিকাশ চন্দ্র দাস বলেন, ‘জনগোষ্ঠীর নিরাপদ সুপেয় পানি প্রকটের সমস্যার সমাধানের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।’

‘দলিত’ সংস্থাটি সমাজের পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠীকে আচরনগত পরিবর্তনে এগিয়ে নিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে সচেতনতা সৃষ্টিমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এবং জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে ধারাবাহিকভাবে সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে। নিরাপদ পানি ও নিরাপদ পায়খানা ও সাবান ব্যবহারের উপর সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গু প্রতিরোধেও কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে দলিত এনজিওর ওয়াশ এসডিজির ওয়াই বাংলাদেশ সাব-প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে নিরাপদ পানি ১৩টি গ্রামের ৩৯০টি পরিবারের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছে। আর বাকি ১১টি গ্রামে দলিত সংস্থা ওয়াশ ক্যাম্পেইনের কাজ শুরু করেছেন এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে দলিত সম্প্রদায়ের বাড়ি বাড়ি যেয়ে প্রচার চালাচ্ছে।

এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ঝাউডাঙ্গা ও বল্লি ইউনিয়নের মধ্যে গভীর নলকূপের তেমন কোনো ব্যবস্থা নাই। উক্ত ইউনিয়নের ওয়ারিয়ার কায়পুত্রপাড়া, বলাডাংগা কারিকর পাড়া, মুকুন্দপুর কলোনী পাড়া, ছয়ঘরিয়া দাসপাড়া ও আখড়াখোলা কারিকর পাড়ায় ১৫০ পরিবারের মধ্যে দলিত সম্প্রদায়ের অধিকাংশ পরিবার কেনা পানি পান করেন। আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের মধ্যে বাবুলিয়া দাস পাড়া, ইন্দিরা কায়পুত্র পাড়া, চুপড়িয়া দাস পাড়া, রামেরডাংগা ভগবেনে পাড়া, কাশেমপুর হাজামপাড়ার ১৫০ পরিবারের মধ্যে দলিত জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ পরিবারের এলাকাতে গভীর নলকূপ নেই। কিন্তু দলিতের আচারণগত পরিবর্তনের উপর বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে তারা উদ্বুদ্ধ হয়ে কেনা পানি পান করছে।

এছাড়া, বল্লী ইউনিয়নে তিনটি গ্রামের মধ্যে কাঠালতলা দাসপাড়া, মুকুন্দপুর কারিকর পাড়া ও রাইপুর ভগবেনে পাড়ায় ৯০ পরিবারের মধ্যে কোন গভীর নলকূপ নেই। তারাও কেনা পানি পান করছে।

অনেকে বলছেন, যেহেতু এ এলাকায় গভীর নলকূপ সাকসেস না সেক্ষেত্রে নিরাপদ পানির ব্যবহার নিশ্চিতকরনের স্থায়ী সমাধানের জন্য রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেমের মত কোন প্রযুক্তি স্থাপন করা প্রয়োজন। যেটা একমাত্র সরকারের পক্ষেই সম্ভব। ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে সর্বাগ্রে দলিত জনগোষ্ঠীর নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হবে বলে তারা জানান।

অন্যদিকে, আগরদাড়ি ইউনিয়নের প্রায় ২৫২টি পরিবার, বল্লী ইউনিয়নের ১৭৫টি পরিবার, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ৩০৪টি পরিবার নিরাপদ পানি পাচ্ছে না। পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি তারা ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, হাপানীসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব এলাকায় অধিকাংশ মানুষ অগভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করেন।

এসব এলাকার অধিকাংশ পরিবারের অন্যের ক্ষেতে খামারে মজুরী খেটে দিনাতিপাত করতে হয়। গ্রাম থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে ঝুড়ি ডালা বুনে অনেকেরই সংসার চালাতে হয়। গরিব শ্রমজীবী এসব মানুষের পক্ষে নিরাপদ পানি কিনে পান করা দু:সাধ্য। দলিত জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোর নিরাপদ পায়খানা ও পানি বিনামূল্য ব্যবহারের বিষয়ে সরকারের একটি পরিকল্পণা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

তবে সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা যায়, নিরাপদ পানি ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থায় যথেষ্ঠ অগ্রগতি অর্জন করেছে এ উপজেলা। খোলা স্থানে মলত্যাগের হার প্রায় শূন্যের কোঠায় এসেছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১ডিসেম্বর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :