শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা: সাফাই সাক্ষী দিলেন রিজভী

প্রকাশ | ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:৪৯

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার অন্যতম আসামি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির জেষ্ঠ্য যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবীরের আদালতে তার জবানবন্দি ও জেরা শেষে ৬ জানুয়ারি আলোচিত এই মামলার যুক্তিতর্কের দিন ধার্য করা হয়।

সাফাই সাক্ষ্য দিতে এসে রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টায় তিনি নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের ৫ম তলায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি সভায় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার বিএনপি নেতা ও সাংসদ হাবিব। জুমার দিন তাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত সভা চলেছিল।

রাষ্ট্রপক্ষের জেরাকালে রুহুল কবীর রিজভি ওই দিন সভায় উপস্থিতির হাজিরা, রেজুলেশন ও নোটিশ দেখাতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিএনপি কার্যালয়ের নিচে অতিথিদের আগমন ও বহির্গমনের রেজিস্টার ও রেজিস্টার নিয়ন্ত্রণে  কোন দায়িত্বশীল লোক ছিল কিনা তা জানতে চাইলে এ ধরনের কোন নিয়োগকৃত লোক ছিল না বলে তিনি আদালতকে অবহিত করেন। একপর্যায়ে সাংসদ হাবিব বিভিন্ন মামলায় পলাতক আসামি হিসেবে বিএনপি অফিসে গিয়ে  অবস্থান করতেন এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, পলাতক আসামি হিসেবে নয়, দলীয় নেতা হিসেবে সেখানে হাবিবুল ইসলাম হাবিব মাঝেমাঝে যাতায়াত করতেন।

রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি, সহকারী এটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা ও সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি আব্দুল লতিফ, সাবেক পিপি এসএম হায়দার আলী,  সাবেক পিপি তপন কুমার দাস, সাবেক পিপি ওসমান গনি, অতিরিক্ত পিপি ফাহিমুল হক কিসলু, সাবেক অতিরিক্ত পিপি আজাহার হোসেন, শহীদুল ইসলাম পিন্টু, মোস্তাফিজুর রহমান শাহানাজ, নাজমুন্নাহার ঝুমুর, তামিম আহম্মেদ সোহাগ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সদর হাসপাতালে আসেন। তিনি মাগুরায় ফেরার পথে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কলারোয়া বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়ি বহরে হামলা ও ভাঙচুর চালান তৎকালীন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ নেতাকর্মীরা। হামলায় শেখ হাসিনাসহ তার গাড়ি বহরে থাকা লোকজন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন লোক আহত হন। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে উপজেলা যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত ৭০/৭৫ জনের নামে থানায় ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি বিভিন্ন আদালত ঘুরে পরে হাইকোর্টের নির্দেশে এক যুগ পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৭ মে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০ জনকে স্বাক্ষী করে পেনাল কোর্ড, অস্ত্র আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক তিনটি অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ সফিকুর ইসলাম। সাতক্ষীরা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন পেনালকোর্ডের মামলাটি নয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর এবং সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন অস্ত্র আইনে ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে চলমান মামলা দুটির কার্যক্রম যথাক্রমে ২০১৭ সালের ৯ ও ২৩ আগস্ট আসামিপক্ষ হাইকোর্টে স্থগিত করেন।  উচ্চ আদালত চলতি বছরের ২২ অক্টোবর  পেনাল কোর্ডের মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নথি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে  সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিমকে নির্দেশ দেন। গত ১৭ ডিসেম্বর অপর দুটি মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিম্ন আদালতে বিচার কার্যক্রম চালু করার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার আদালতে ৩৪ জন আসামি হাজির ছিলেন।

সে অনুযায়ী ২০ জন সাক্ষী ও চারজন সাফাই সাক্ষীর জবানবন্দি শেষে ৬ জানুয়ারি পেনাল কোর্ডের মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেন সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবীর। তবে ৬ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষ করা না গেলে পরদিন ওই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও একই আদেশে বলা হয়।

(ঢাকাটাইমস/৩১ডিসেম্বর/এলএ)