টিএসসির গাছ ও খড়মতত্ত্ব

সৌমিত্র শেখর
| আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২১, ১২:৪০ | প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারি ২০২১, ১২:৩৬

কাজের চাপে সময় পাই না; গাছের চাপে পড়েছি! ফেসবুকেও বসতে পারি না। ওয়াইফাই-আওতায় থাকি বলে আলো জ্বলে আর পরিচিতজনেরা মাঝে মাঝে বলেন, ‘উত্তর দাও না কেন?’ কী করে বোঝাই!

সেদিন দুপুরের কথা। আমাদের এক ছাত্র নতুন এক পোর্টালে নাম লিখিয়েছে। সেখান থেকে নাকি বলা হয়েছে, টিএসসিতে গাছ কেটে সাফ্: কালই ভাঙা শুরু হবে। তুমি নিউজ করছো না কেন? সাংবাদিকতায় নতুন নাম লেখানো ছাত্রটি লজ্জায় পড়ে যায়। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ সে কি না শুনলো নিউজ এডিটরের মুখে! হায়, হায়! ফেসবুক থেকে তার মুঠোফোনে একটি ফটো দিয়ে বলা হলো ‘দ্যাখো, গাছগুলো মরে কেমন পড়ে আছে!’

একজন শিক্ষকের ‘কমেন্ট’ পড়ানো হলো। তিনি লিখেছেন: সেই কাঠ দিয়ে খড়ম বানানো হয়েছে এবং নানা কাজে সেটির ব্যবহার হচ্ছে। আর একজন তাকে তুষ্ট করে সঙ্গে যোগ করেছেন: ‘আমরা চামড়াতেই আছি, শুকনো কাঠে পা দেব না।’ অফিস থেকে ‘পাঠাও’ নিয়ে হাওয়ার বেগে ছাত্রটি প্রায় উড়ে আসে টিএসসিতে; পরে আমার বসবার ঘরে।

তখন গরম লাল-চা শেষ করতে করতে পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছিলাম। বেশ প্রশান্ত আমার মন। বললাম, ‘বস’। অসমাপ্ত পত্রিকাপাঠ শেষ করলাম। শুনলাম: এসে সে নাকি টিএসসির সামনেরটা খুব ভালো করে পরীক্ষা করেছে। আসলেই কাটাগাছের কোনো আলামত পাওয়া যায় কি না!

আমি জানি না, খড়মের সন্ধান সে করেছিল কি না। বলেনি। যে ফটোটি আপনারা দেখছেন, এটি সেই ছাত্র সামনে বসেই, ই-মেইল করে আমাকে পাঠাল। এই ফটোটি নাকি গত কয়েকদিন ধরে ‘ভাইরাল’ আর ‘গেল-গেল’ বলে রব উঠেছে নেট-দুনিয়ায়।

আত্মজিজ্ঞাসা: কে প্রথম এমন একটা মিথ্যে রটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে ছোট করল; এটি কি অপরাধ নয়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা ‘চিলে কান নেওয়া’তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে ‘ভাইরাল’মিছিলে কেন গেলেন? যারা কটুমন্তব্য করলেন, এখন তারা বলবেন কি, কী বলবেন?

কারণ: এটি অন্তত পাঁচ-ছয় বছর আগের ফটো। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে কড়ায় খাওয়া একটি গাছ গভীর রাতে উপড়ে গিয়েছিল। রাতের ঘটনা বলে লোকক্ষয় হয়নি। দিনে হলে, সবাইতো বুঝতে পারছেন। হতাহত রোধ করা যেত না। তবে পাঁচিল ভেঙেছিল (দেখুন, পাঁচিল ভাঙা বলে সাদা প্রাইভেট কারটি সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছে)।

যারা খড়মতত্ত্ব দিয়ে থাকে, এরা একটা ছোট গোষ্ঠীভুক্ত। এদের পরিধি একশ গজের মধ্যে। নিজেরা একসময় যার খড়ম বহন করে, পরে তাকেই আবার ‘খড়মপেটা’ করে এবং নিজে তার জন্য তৈরি হয়্। এরাই খড়ম চেনে ভালো। এদের নিয়ে না-ভাবা বুদ্ধির কাজ। বিরোধিতা করা সহজ, প্রস্তাব দেওয়া কঠিন। আসুন, প্রস্তাব দিই।

লেখক: শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকাটাইমস/২জানুয়ারি/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :