বন্দিদশার অবসান চায় বেনাপোল বন্দরের ৬৫ পরিবার

বেনাপোল প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২১, ২২:৫০ | প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারি ২০২১, ২২:০৩

বেনাপোল বন্দরের ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালের পশ্চিম পাশে সুরক্ষা প্রাচীরের কারণে এক প্রকার বন্দিদশায় বসবাস করছে ৬৫টি পরিবারের পাঁচ শতাধিক মানুষ। চলাচলের পথ না রেখেই প্রাচীর দেয়ায় বিপাকে পড়েছে পরিবারগুলো। এরই মধ্যে প্রাচীরের স্থানে স্থানে ভেঙে চলাচলের পথ তৈরি করেছেন তারা। তবে, এভাবে যাতায়াত করতে ভোগান্তিতে পড়েন অসুস্থ মানুষ, রোগী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের। জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১১ই নভেম্বরের আগে এই জায়গাটি ছিলো উন্মুক্ত। পরে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরকে সু-রক্ষিত রাখার জন্য গ্রামের পাশ দিয়ে নির্মাণ করে উঁচু প্রাচীর। রাখা হয়নি চলাচলের পথ। পরে আটকা পরিবারগুলো বন্দর কর্তৃপক্ষের বাধার মুখেও প্রাচীর কয়েক জায়গায় ভেঙে যাতয়াত শুরু করেন। তবে এভাবে যাতায়াতে ভোগান্তির যেন শেষ নেই।

এছাড়াও ট্রাকের মালামাল লোড-আনলোডের বিকট শব্দ ও কালো ধোঁয়ায় তাদের এখানে বসবাস করাই কঠিন হয়ে গেছে এসব পরিবারের। ভুক্তভোগীরা বলেন, রাত হলেই শুরু হয় ভারত থেকে আমদানিকৃত লোহা ও লৌহ জাতীয় পণ্যের লোড আনলোডের বিকট শব্দ। যে শব্দের কম্পন শুরু হয় সারা এলাকা জুড়ে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ও ছোট শিশুরা থাকে ভয়ে-আতংকে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী কয়েকবার বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে বিষয়টির সমাধান চেয়ে মানবিক আবেদন করলেও তা কোনো কাজেই আসেনি। প্রাচীর সরাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী কয়েকবার।

এ ব্যাপারে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বন্দি বসবাসকারীদের পক্ষে তাদের আশু সমাধান চেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করলেও তার ফল মেলেনি। কবে নাগাদ এর সমাধান হবে তা নিশ্চিত জানেন না তারা।

স্থানীয় ইসরাইল সর্দার অভিযোগ করেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাকের ইঞ্জিনের কালো ধোঁয়ায় বায়ু দূষণ, শব্দদূষণ তো নিত্য দিনের ঘটনা। এ দিকে বন্দরে ভারী জাতীয় মালামাল ও লৌহজাত পণ্য সামগ্রী লোড আনলোডের ফলে বসবাসকারীদের বাড়ি ঘরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনিসহ উচ্চ শব্দের সৃষ্টি হয়।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এনামুল হক লিটন বলেন, এলাকা ছেড়ে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। বাড়িতে এখন আর ভাড়াটিয়ারা থাকতে চায় না। অনেক বাড়ি ভাড়াটিয়ার অভাবে খালি পড়ে আছে। তবে জনস্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে ও বন্দরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই এলাকার জমি অধিগ্রহণ করলে সকল সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন তিনি।

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানান, ওই এলাকার অতিরিক্ত শব্দ ও অন্যান্য দূষণ মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ক্রমাগত দূষণে সেখানকার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশীদ বলেন, বন্দি জনগণ ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ইতিমধ্যে একটি তদন্ত টিম কাজ শুরু করেছে। বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, এলাকাবাসীর সমস্যা ও অভিযোগ আমরা ইতিমধ্যে আবেদনের মাধ্যমে পেয়েছি। বন্দরর উপরমহলে বিষয়টি জানিয়েছি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের সুপারিনটেনডেন্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী বলেন, বন্দরের (টিটিআই) পশ্চিম পাশে ৬৫টি পরিবারের প্রায় পাঁচ শতাধিত মানুষের সমস্যার কথা আমরা জেনেছি। বন্দরের প্রাচীর নির্মাণের ফলে তারা আটকা পড়েছেন। এ এলাকার সমস্যা সমধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/০২জানুয়ারি/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :