সন্তানের জন্য বেঁচে থাকার ইচ্ছাটার নামই মা
এক সময় খুব সাহসী ছিলাম। বাড়ির সীমানা প্রাচীরের ওপর হাঁটতাম, ব্যালেন্স রাখার জন্য পাখির ডানা মেলার মতো দুটি হাত মেলে। পা হড়কানোর ভয় কাবু করেনি কখনো। সিঁড়ির সিমেন্টের হাতলে কত ছেঁচড়ে নেমেছি। মেঝেতে পাউডার দিয়ে স্লিপ কেটেছি। স্বচ্ছ পানির আহ্বানে সাঁতার না-জানা এই আমি পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছি, হুড তুলে বেপরোয়া রিকশায় কত চড়েছি! কখনো ভয়ে কাঁপিনি!
যেদিন প্রেগনেন্সি স্ট্রীপে দুটি দাগ আসলো, সেদিন থেকেই আমার শরীরে ভর করেছে রাজ্যের ভয়। হেঁটেছি সাবধানে, অন্ধকারকে এড়িয়ে চলেছি, কর্মস্থলে যেতে-আসতে বাসের সবচেয়ে নিরাপদ সিটটিকে বেছে নিয়েছি, যাতে একটুও ঝাঁকুনি না লাগে। চটপটি, ফুচকা আর মুড়ি ভর্তার ভীষণ ভক্ত আমি একদিনের জন্যও বাইরের খাবার খাইনি। বেখেয়ালি আমি নিয়ম মতো চেকআপ করিয়েছি। আমি তো আসলে জানতাম, আমার ভেতরে বেড়ে উঠছিল দুটি স্ত্তা, একটি মা আর অন্যটি সে মায়ের সন্তান।
একদিন কোলজুড়ে এলো আদরের সন্তান। ভয় যেন আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে আরো জড়িয়ে ধরল। শুধু সংশয়, আমার কিছু হলে ওর কি হবে? মন খারাপ হলে কার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে, কে ওর অসংলগ্ন ও অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দিবে, কে ধৈর্য নিয়ে ওকে বানিয়ে বানিয়ে রাজ্যের গল্প বলবে? কার সাথে ও মান-অভিমান করবে, অকারণে হাসতে হাসতে কার কোলে গড়িয়ে পড়বে, কে তার চুল পরম যত্নে বিলি কেটে দিবে, কে তার শ্যাম্পু করা চুলের গন্ধ শুকবে? মা ছাড়া কে এসব আদেখলাপনা করে? তাই রিকশার হুড উঠিয়ে, শক্ত করে ধরি। ড্রাইভারকে ধীরে-সুস্থে গাড়ি চালাতে বলি। একটু অসুস্থ হলে ভড়কে যাই। সন্তানকে আঁকড়ে, সন্তানের জন্য বেঁচে থাকার ইচ্ছাটার নামই ‘মা’।
লেখক: চিকিৎসক
ঢাকাটাইমস/৩জানুয়ারি/এসকেএস