ভ্যাট চালান দেয় না সিক্রেট রেসিপি

পণ্য কেনার পর ক্রেতার চাহিদামতো ভ্যাট চালান দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর অভিজাত রেস্তোরাঁ সিক্রেট রেসিপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তারা মূল্য পরিশোধের রসিদকেই ভ্যাট চালান বলে দাবি করে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে এবং পরিশোধিত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না বলে সন্দেহ করছেন ক্রেতারা।
ভ্যাট চালান চেয়েও না পাওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে কয়েকজন গ্রাহক বলেন, সিক্রেট রেসিপি থেকে অনলাইনে খাবার আনিয়ে যেমন তারা ভ্যাট চালান পাননি, তেমনি এই রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়ার পর মূল্যরসিদের সঙ্গে ভ্যাট চালান চেয়েও তারা তা পাননি। এ ব্যাপারে কাউন্টারের কর্মীরা জানান, আলাদা করে তাদের কাছে কোনো ভ্যাট চালান নেই।
আর প্রতিষ্ঠানটির এক্সিকিউটিভ রুহুল আমিন ঢাকাটাইমসকে জানান, ভ্যাট চালান দিতে গেলে তাদের সময় বেশি লাগে। তাই তারা মূল্য রসিদকেই ভ্যাট চালান হিসেবে দেন।
কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মোমিনের ভাষ্যমতে, ভ্যাট চালানের কপি সিক্রেট রেসিপির কাছে না থাকার কোনোই কারণ নেই। ক্রেতা চাইলে তারা ভ্যাট চালান দিতে বাধ্য।
রাজধানীর অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে একটি হলো সিক্রেট রেসিপি বাংলাদেশ। রাজধানীতে তাদের রয়েছে নয়টি রেস্তোরাঁ। এসব রেস্তোরাঁয় গ্রাহকদের ভিড় থাকে সব সময়। অনলাইনে চাহিদা জানানোর সুযোগ থাকায় অনেকে বাসায় বসে খাবারের চাহিদা জানান সিক্রেট রেসিপিতে।
নামী এ রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনলে মোট বিলের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধরা হয়। আইন অনুযায়ী এই ভ্যাট পরিশোধের চালান কপি দিতে হয় ক্রেতাকে। কিন্তু সিক্রেট রেসিপিতে ভ্যাট আদায়ের বিপরীতে ক্রেতাকে ভ্যাট চালান দিতে বরাবরই অপারগতা দেখান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। রাজস্ব বোর্ড বলছে, বিক্রেতা ভ্যাট চালান না দিলে ক্রেতার অধিকার রয়েছে পণ্যের মূল্য পরিশোধ না করার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মূল সংযোজন কর আইন ১৮৭-/২০১৯/8৪- ২০১২ (২০১২ সনের ৪৭ নং আইন) এর ধারা ১৩৫, ধারা ৪৯ ও ১২৭(খ) অনুযায়ী, ‘সরবরাহকারী সমন্বিত কর চালানপত্র ও উৎসে কর কর্তন সনদপত্র (ফরম মূসক-৬:৩) জারি না করলে, উৎসে কর কর্তনকারী সরবরাহকারীর নিকট হতে কোন সরবরাহ গ্রহণ করবে না এবং সরবরাহকারী উক্ত সরবরাহের বিপরীতে কোন মূল্য পরিশোধ করবে না।’
কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করেন, সিক্রেট রেসিপি বাংলাদেশ ভ্যাট চালানের বদলে তাদের হিসাব মেশিন থেকে বের হওয়া কাস্টমার কপি ক্রেতাকে গছিয়ে দেয়। এমনকি এই কাস্টমার কপিকেই তারা ভ্যাট চালান হিসেবে দাবি করছে। সচেতন ক্রেতারা এ ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করলেও প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট চালান দিতে রাজি নয়।
সিক্রেট রেসিপি বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যে বিলটা দেওয়া হয় সেখানে লেখা আছে মূসক। এটা (ভ্যাট চালান) যদি আমি কাস্টমারকে দিতে যাই তাহলে আমার অনেক সময় লাগে।’ তিনি দাবি করেন, ক্রেতাদের দেওয়া বিলের জন্য তাদের যে সফটওয়্যার রয়েছে, তা ব্যবহার করে তারা বিল তৈরি করেন। সেটিই তাদের ‘ভ্যাট চালান’ বা ‘ইনভয়েজ’।
এই পদ্ধতি কতটা আইনসম্মত এবং ক্রেতা ‘ভ্যাট চালান’ চাইলে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তা দিতে বাধ্য, সেটি দেওয়া হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিতে পারেননি রেস্টুরেন্টটির এই কর্মকর্তা। ঢাকা টাইমসের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সব কাস্টমারকে ভ্যাট চালান দিতে যাই, তাহলে প্রচুর চালান চালবে। আমরা আমাদের সফটওয়্যারটি অনুমোদনের জন্য এনবিআর-এ আবেদন করেছি। আমরা যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করব, সেই মেশিন থেকে যে কাস্টমার কপিটা বের হবে, সেটাই মূসক ৬.৩ হিসেবে গণ্য হবে।’
অনুমোদন পাওয়ার আগে মূসক চালান না দেওয়া কতটা বৈধ? জবাবে সিক্রেট রেসিপির এক্সিকিউটিভ রুহুল আমিনের বলেন, ‘সফটওয়্যারের জন্য এনবিআরে আবেদন করার পর আমরা একটা রিসিভ কপি নিয়ে এসেছি। এটা অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় আছে।’ ক্রেতাকে ভ্যাট চালান দেওয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা থাকার পরও তা না দওয়া আইন ভঙ্গ কি না জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
রেস্তোরাঁটির কর্মকর্তা অস্বীকার করলেও তাদের কাছে চালানের কপি আছে বলে ঢাকা টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মোমিন। তিনি বলেন, ‘চালানের কপি তাদের কাছে আছে, তারা যদি বলে তাদের কাছে নাই, তাহলে এটা ভুল। আপনি চাইলে তারা আপনাকে চালান দিতে বাধ্য। সেটা যে কয় টাকাই হোক।’
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মেশিনে পণ্যের দাম পরিশোধের রসিদকে ভ্যাট চালান বলে ক্রেতাকে জানানো ঠিক নয় বলে জানান এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা। বলেন, ‘নিজস্ব মেশিন থেকে বের হওয়া বিলের হিসাবের সঙ্গে ভ্যাটের হিসাবে কারসাজি করার সুযোগ রয়েছে। ভ্যাট ফাঁকির এই প্রবণতা বন্ধ করতেই ভ্যাট চালানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
ঢাকাটাইমস/৫জানুয়ারি/কারই/মোআ
সংবাদটি শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

ঢাকা রেঞ্জের ৯৬ থানায় কী হচ্ছে দেখা যাচ্ছে সেগুনবাগিচায়

জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে ‘পথ’ তৈরি করছে র্যাব

ঢাকা উত্তর সিটির আঞ্চলিক কার্যালয়ের বেদখলে সড়ক

শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে ফোনের পেছনে একাধিক প্রতারক চক্র

বিএনপিতে মহাসচিবকে ‘মহা-উপেক্ষা’!

এনআরবি ব্যাংকের আমিনুর ও দুই পরিচালক ছেলের অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক

দশ মাস গেলেও ময়নাতদন্তে আটকা মামলার তদন্ত

হঠাৎ কেন বিধ্বংসী মেজাজে সাঈদ খোকন?

দায়িত্ব পেয়ে খাল উদ্ধারে সক্রিয় ঢাকার দুই সিটি
