কবিতা
যে জীবনকে জীবন বলতে মানা
যে জীবনভর তাড়া করে কেবল মৃত্যুর পরোয়ানা;
সেই জীবনকে জীবন বলতে সভ্য সমাজে মানা।
যে প্রেমের মাঝে সন্দেহ বাতিক দমে দমে দেয় হানা;
সেই প্রেমটাকে প্রেম বলতে রাধা-শ্যামের আছে মানা।
যে সুখ কেবল পদে পদে চায় স্বস্তির নজরানা;
সেই সুখটাকে সুখ বলতে শান্তির আছে মানা।
যে ভিটার মাঝে ঘুঘু চড়ে চড়ে খোঁজে শস্যের দানা;
সে ভিটির উপর বাস্তু বানাতে আছে জ্ঞানীদের মানা।
যেই আকাশে মেলে শ্যেন-শকুনেরা চক্রব্যূহের ডানা;
সে আকাশে আশার ঘুড্ডি উড়াতে আছে আকাশের মানা।
যেই তল্লাটে দাপটে বেড়ায় দস্যু ও দলকানা;
সেই জনপদে মুক্তমনের মতামত দিতে মানা।
যেই রাজ্যেতে চতুর শেয়াল গড়ে তোলে আস্তানা;
সে অঞ্চলে পাকা শিকারিরও বুদ্ধির চাষ মানা।
যেই পুকুরের জলের দখল নিয়েছে কচুরিপানা;
সেই ডোবাটাকে সরোবর বলা কবির জন্যে মানা।
যে চোরাগলি গলির আঁধারে লুকায় নিজের ঠিকানা;
সেই গলিটার মঞ্জিল খোঁজায় রাজপথের আছে মানা।
শ্রমিকের ঘামের জ্বালানীর বলে চলে যেই কারখানা,
পুঁজিবাদের এই যাঁতাকলে পড়া অধিকারের আছে মানা।
ভেদরেখা টেনে মানুষে মানুষে গড়ে যে ভেদের সীমানা,
দেশে দেশে সেই প্রাণীদের এখন মানুষ বলতে মানা।
হাসির অপরাধে যে মুলুকে হয় দণ্ড বা জরিমানা,
সে আজব দেশে বসতি গড়তে বিজ্ঞজনের মানা।