ব্লুমবার্গের রিপোর্টে করোনা মোকাবিলায় শীর্ষে বাংলাদেশ

এই অগ্রগতি ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ

মোতাহার হোসেন
| আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:২০ | প্রকাশিত : ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:১৭

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে পুরো বিশ্ব আতঙ্কিত এক বছর ধরে। এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে এক অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মরছে রোগে, আক্রান্ত হচ্ছে বিপুল মানুষ। বিশে^র কোনো কোনো রাষ্ট্রে করোনা ভ্যাকসিন সীমিত সংখ্যক এলেও এর কার্যকরিতা নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ তথা মোকাবিলা করতে সমর্থ হয়েছে এমন শীর্ষ ২০ দেশের তালিকাসহ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ। মরণব্যাধি করোনা নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের জন্য সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে আর্থ-সামাজিক উন্নতিসহ বসবাস উপযোগী নিরাপদ শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। এই খবর নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য, বাংলাদেশের জন্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের জন্য আশাজনক।

অবশ্য বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব, ক্যারিশমেটিক লিডারশিপ, প্রজ্ঞা, দেশপ্রেম, মানবপ্রেম সর্বোপরি সময় উপযোগী পদক্ষেপ বিশেষ করে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার চাকা সচল রাখতে ‘অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ’ ইতবাচক ভূমিকা রেখেছে। করোনার শুরুতে প্রথম কিস্তিতে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, দ্বিতীয় কিস্তিতে আরও ৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজেই দেশের মানুষকে করোনা থেকে সুরক্ষা, চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষের জীবিকার চাকা সচল এবং শিল্পাকারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজনে এই বরাদ্দ আর বাড়ানো হবে মর্মেও ঘোষণা করেছেন তিনি।

মূলত, মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের কারণেই ঘুরে দাঁড়ায় দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। আর এর ফলে বিশ্বব্যাংক,আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ইতোপূর্বে তাদের রিপোর্টে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। এ পর্যায়ে জিডিপি, রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয়সহ অর্থনীতির সব সূচকে ইতিবাচক পরিসংখ্যান আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রদত্ত রিপোর্টে তার প্রমাণ। কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক এই অগ্রগতি ধরে রাখাই এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা ব্লুমবাগের প্রকাশিত রিপোর্টে বৈশি^ক করোনা পরিস্থিতি সহনশীল ও নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম শীর্ষ ২০ দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। এরপর পর্যায়ক্রমে তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ডেনমার্ক, কানাডা, ভিয়েতনাম, হংকং, থাইল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইসরায়েল, রাশিয়া ও নেদারল্যান্ডসের পর বাংলাদেশ এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালির মতো শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোও সদ্য প্রকাশিত এ তালিকায় বাংলাদেশের পেছনে অবস্থান করছে। এমনকি প্রতিবেশী ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশের ওপরে রয়েছে বাংলাদেশ।

‘কোভিড সহনশীলতা র‌্যাঙ্কিং' শীর্ষক তালিকা অনুসারে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সব দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের পর পর্যায়ক্রমে রয়েছে মিসর, চীন ও ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্সসহ অন্য দেশগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার মাইনাস (ঋণাত্মক)। ব্লুমবার্গ বলছে, আক্রান্ত ও মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণেও বাংলাদেশ সফল। অবশ্য করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জিডিপি ধরে রাখার ঘটনাকে বাংলাদেশের সরকারের সাফল্য বলে মনে করেন দেশের বিশেষজ্ঞরাও। তাদের অভিমত, করোনা পরিস্থিতির শুরুতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে যায়। কর্মসংস্থান বন্ধ থাকায় অনেকে আর্থিক সংকটে পড়েছিল। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ ছুটি বাতিল করেন। তার ওই সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে পুনরায় অফিস-আদালত চালু হয়। মানুষ কাজে ফেরে। একই সঙ্গে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনাসহ স্বল্প সুদে ঋণদানের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হয়। এ জন্যই জিডিপি প্রবৃদ্ধির সূচকে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ৫৩টি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ। প্রতি লাখে আক্রান্ত, এক মাসে মৃত্যু, সামগ্রিক মৃত্যুহার, পজিটিভ পরীক্ষার হার, কভিড ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সক্ষমতা, লকডাউন পরিস্থিতি, করোনাকালে জনগণের চলাচল, জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং মানব উন্নয়ন সূচক- এগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয় ই র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে। এতে ৮৫ দশমিক ৬ স্কোর করে শীর্ষস্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। এরপর পর্যায়ক্রমে তাইওয়ান ৮২ দশমিক ৪, অস্ট্রেলিয়া ৮১, নরওয়ে ৭৭, সিঙ্গাপুর ৭৬ দশমিক ২, ফিনল্যান্ড ৭৫ দশমিক ৮, জাপান ৭৪ দশমিক ৫, দক্ষিণ কোরিয়া ৭৩ দশমিক ৩, চীন ৭২, ডেনমার্ক ৭০ দশমিক ৮, কানাডা ৭০, ভিয়েতনাম ৬৯ দশমিক ৭, হংকং ৬৮ দশমিক ৫, থাইল্যান্ড ৬৮ দশমিক ৫, আয়ারল্যান্ড ৬৭ দশমিক ৩, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৬৫ দশমিক ৬, ইসরায়েল ৬২ দশমিক ৪, রাশিয়া ৬১ দশমিক ৭, নেদারল্যান্ডস ৬১ দশমিক ৩ এবং বাংলাদেশের স্কোর ৫৯ দশমিক ২। একই স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের পরই রয়েছে জার্মানি। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ৫১ দশমিক ২ স্কোর নিয়ে ৩৭তম স্থানে অবস্থান করছে। ৩০তম স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের স্কোর ৫৪ দশমিক ৬, ফ্রান্স ৫২ দশমিক ৪ স্কোর নিয়ে ৩৪ নম্বরে অবস্থান করছে। ৪৫ দশমিক ৮ স্কোর নিয়ে ৪৯তম স্থানে রয়েছে ইতালি। ৫০ দশমিক ৬ স্কোর নিয়ে প্রতিবেশী ভারত রয়েছে ৩৯তম স্থানে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকে শীর্ষে থাকা নিউজিল্যান্ডে এক মাসে প্রতি লাখে ২ জন করে আক্রান্ত হয়েছে। এক মাসে নিউজিল্যান্ডে করোনায় একজনও মারা যায়নি। ১০ লাখে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। দেশটিতে কোভিড প্রতিরোধী টিকা প্রাপ্তির সম্ভাবনা ২৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ। লকডাউন পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটির স্কোর ২২। জনগণের চলাচলে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস মাইনাস ৬ দশমিক ১ শতাংশ, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ৮৩ এবং মানব উন্নয়ন সূচকে স্কোর শূন্য দশমিক ৯৩ পেয়েছে নিউজিল্যান্ড।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা তাইওয়ানের স্কোর ৮২ দশমিক ৪। এক মাসে দেশটিতে করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি এবং প্রতি ১০ লাখে মৃত্যু শূন্য। করোনা পজিটিভ হার শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। দেশটিতে কোভিড টিকা প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা ২৬ দশমিক ২ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি শূন্য শতাংশ, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ৭৯ এবং মানব উন্নয়ন সূচক শূন্য দশমিক ৯১ রয়েছে দেশটির।

তৃতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৮১। দেশটিতে এক মাসে প্রতি লাখে একজন করোনায় আক্রান্ত। এক মাসে মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ এবং প্রতি ১০ লাখে মৃত্যু ৩৬ জন। নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ হার শূন্য শতাংশ। কভিড টিকা প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা ২২৯ দশমিক ৯ শতাংশ।

শীর্ষ ২০-এ থাকা বাংলাদেশে এক মাসে প্রতি লাখে ৩৪ জন করে করোনায় আক্রান্ত। এক মাসে প্রাণহানি ১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং প্রতি ১০ লাখে মৃত্যু ৪৪ জন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১০ দশমিক ২ শতাংশ। কঠোর লকডাউনে স্কোর ৮০। জনগণের চলাচলে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। জিপিডি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্কোর ৫৪। মানব উন্নয়ন সূচকে স্কোর শূন্য দশমিক ৭৮।

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এক মাসে প্রতি লাখে ১ হাজার ৭৩৪ জন আক্রান্ত। এক মাসে প্রাণহানি ১ দশমিক ১ শতাংশ এবং প্রতি ১০ লাখে মৃত্যু ৯৫৫ জন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। কোভিড টিকা প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা ১৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ। কঠোর লকডাউনে স্কোর ৭২। জনগণের চলাচলে মাইনাস ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। ডিজিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস মাইনাস ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্কোর ৮২। মানব উন্নয়ন সূচক শূন্য দশমিক ৯৩।

৩৯তম স্থানে থাকা প্রতিবেশী ভারতে এক মাসে প্রতি লাখে ৬৯ জন আক্রান্ত। এক মাসে প্রাণহানির হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রতি ১০ লাখে মৃত্যু ১০৫ জন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ। কোভিড টিকা প্রাপ্তির সম্ভব্যতা ৮৫ দশমিক ৪ শতাংশ। লকডাউনে স্কোর ৬৯। জনগণের চলাচল মাইনাস ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস মাইনাস ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্কোর ৪৭। মানব উন্নয়ন সূচকে স্কোর শূন্য দশমিক ৬৫।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনেও শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। রিপোর্টে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে এই হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ (বাস্তবে এই হার ৬ শতাংশের বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে)। এরপর মিসরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, চীনে ১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্য দেশগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার মাইনাসে রয়েছে।

আরও জোরালো পদক্ষেপের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

করোনা নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের এই ধারা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী অনেক সূচকে বাংলাদেশ প্রভাবশালী দেশগুলোর তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে আক্রান্ত ও মৃত্যুহারের পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। এ জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সাধারণ ছুটি প্রত্যাহার না করলে পরিস্থিতি হয়তো অন্য রকম হতে পারত। কারণ টানা তিন মাস ছুটির কারণে দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষ জীবন-জীবিকার সংকটে পড়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ছুটি বাতিল করে সবকিছু খুলে দেন। এরপর ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরাতে প্রণোদনা ও খাতভিত্তিক ঋণ সুবিধা প্রদান করেন। এতে গতি ফেরে অর্থনীতিতে। কিন্তু বড় দেশগুলো তা না করায় তাদের অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় পড়েছে। সুতরাং এ সাফল্য সরকারের। এ সাফল্য ধরে রেখে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। তাছাড়া ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন প্রমাণ করে, করোনা মোকাবিলায় আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ শুরু থেকে সঠিক পথেই ছিল। সেটি না হলে পরিস্থিতি অন্য রকম থাকত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি প্রাণঘাতী বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মোকাবিলা করছে। একই সঙ্গে অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক রাখছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভালো না হলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতো। সাধারণ ছুটি প্রত্যাহার করলে সবকিছু স্বাভাবিক করা সম্ভব হতো না। অবশ্য সরকারি মহল বলে আসছেন, সব মানুষ যখন ঘরবন্দি ছিলেন, তখন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালে থেকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছেন। আক্রান্তদের সুস্থ করে তারা মৃত্যুহার কমিয়ে এনেছেন। সুতরাং করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার মূল কৃতিত্ব তাদের প্রাপ্য। প্রত্যাশা করছি, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন। দরিদ্র, দিনমজুর, অসহায় মানুষের সহায়তায় সরকারি ত্রাণ, অর্থসহয়াতা অব্যাহত রাখা হবে আগামী দিনেও। আশা করছি করোনা প্রতিরোধী টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না। সরকারি ভাষ্যমতে, জানুয়ারির শেষ অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চলে আসবে। এরপর টিকার জোট গ্যাভি থেকে আরও টিকা আসবে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটির মতো টিকা হাতে পাওয়া যাবে। এসব সত্ত্বেও বেসরকারি খাতে টিকা আমদানির বিষয়ে চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনা রাখা দরকার। আমাদের প্রত্যাশা শুধু করোনা নিয়ন্ত্রণ নয়, মানুষের জীবিকা তথা অর্থনীতির চাকা সচল ও গতিশীল রাখতে সব রকম প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে বিগত দিনের মতোই। কারণ করোনা নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক এই অগ্রগতি ধরে রাখাই হবে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

লেখক: সাংবাদিক। সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জা জার্নালিস্ট ফোরাম।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :