দায়িত্ব পেয়ে খাল উদ্ধারে সক্রিয় ঢাকার দুই সিটি

প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৩০ | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৪৬

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পর রাজধানীর খালগুলো উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। দক্ষিণ সিটি মোট পাঁচটি খাল উদ্ধারে একযোগে কাজ করছে। ইব্রাহিমপুর ও রামচন্দ্রপুরসহ কয়েকটি খালে অভিযান চালাচ্ছে উত্তর সিটি। এরমধ্যে রামচন্দ্রপুর খালের বর্জ্য অপসারণেও কাজ শুরু হয়েছে। খালগুলো দখল করে রাখা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ।

গত ১ জানুয়ারি ২৬টি খালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে ওয়াসা। এর আগে প্রায় ৩২ বছর এই দায়িত্ব পালন করে ওয়াসা। সংস্থাটি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না অভিযোগ ওঠার পর মেয়রদের আগ্রহে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয় সিটি করপোরেশনের কাছে।

সোমবার থেকে খাল উদ্ধারে নেমেছে উত্তর সিটি। অভিযান শুরু করা হয় ইব্রাহিমপুর খালে। সেখানে দুই পাড়ে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

বুধবার ইব্রাহিমপুর বাজার খাল পাড়ের কালভার্টের দুই পাশে অবৈধভাবে  নির্মিত একটি তিনতলা ভবনসহ কয়েকটি টিনশেড দোকান উচ্ছেদ করেছে  ডিএনসিসি।

উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, তিনি ইব্রাহিমপুর খাল পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছেন, খালের প্রস্থ ৬০ ফুটের জায়গায় ১০ ফুট হয়ে গেছে।

একই সময়ে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয় উত্তর সিটির আওতাধীন রামচন্দ্রপুর খালে। খালের দুই পাড়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ স্থাপনা থাকলেও তা উচ্ছেদে এখনো কাজ শুরু হয়নি। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত তিন দিন খালের তলদেশ থেকে কেবল বর্জ্য উত্তোলনের কাজ চলছে।

খালের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনার বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইব্রাহিমপুর খালের মতোই দশা রামচন্দ্রপুরের। কিছু কিছু জায়গায় খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই। যেসব স্থানে পানির প্রবাহ আছে, খালের সে অংশেও দুই পাড়েই রয়েছে দখলদারিত্ব।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দাদের মতে, খালের মূল নকশা হাতে নিয়ে সিটি  করপোরেশন কাজ শুরু করলে খালের প্রস্থ আরও অনেক বাড়বে। খাল দখল করে এর উপর বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান তারা।

রামচন্দ্রপুর খাল ঘুরে দেখা গেছে, মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড ৫ নম্বর সড়কের পশ্চিম পাশে খালের প্রস্থ রয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ ফুট। বাকি অংশে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। খালের জায়গায় রয়েছে বস্তির অংশ, গোয়ালঘর, গোরস্তান এবং মসজিদ।

হাইজিংয়ে ৩ নম্বর সড়কের কালভার্টের পাশে মাটি ফেলে খাল ভরাট করা হয়েছে। সেখানে বসানো হয়েছে টং দোকান। ১ নম্বর সড়কে খালের অংশে মাটি দিয়ে ভরাট করে ক্যারাম খেলার আসর বসানো হয়েছে। ৬ ও ৭ নম্বর সড়কে খালের উপরে রয়েছে বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন ও বস্তি। খাল দখল করে গড়ে ওঠা একটি অংশ এখনো সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত নয়। এমনকি খালের উপর মাটি এবং ময়লা ফেলে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে।

খালের নবোদয় হাউজিং অংশের লোহার গেটের বিপরীতে নির্মাণসামগ্রী ফেলে প্রতিদিনই চলছে দখল। এরমধ্যে খালের তিন কাঠার বেশি জায়গা দখল করে সেখানে রিকশার গ্যারেজ ও তিনটি পাকা দোকান গড়ে তোলা হয়েছে।

রামচন্দ্রপুরের একটি অংশ বেড়িবাঁধ সড়কের পশ্চিম পাশে। সেখানে চলছে দখলদারদের রাজস্ব। খাল দখল করে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে বিশালাকার জায়গা। খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে পাকা, আধাপাকা এবং টিনের বসতবাড়ি। পাশের একটি এগ্রো ফার্মের সব বর্জ্য নিয়মিত ফেলা হচ্ছে খালে। খালের উত্তর অংশে রয়েছে মিনাবাজারের সম্পত্তি। দখলের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বেড়িবাঁধ থেকে মিনাবাজার হয়ে নবীনগর-চন্দ্রিমা হাউজিং পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারে খালের পানি চোখে পড়ে না।

দখলের আরেক রাজত্ব পাশের কাটাসুর খাল। খালের কাটাসুর অংশে দুই পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ স্থাপনা। মালিকানা জমির সামনে খাল থাকায় স্থাপনা মালিকরা খালের অনেকটা দখল করে ভবন নির্মাণ করেছেন। চাঁদ উদ্যান এলাকায় খাল দখল করে ভবন মালিকরা তৈরি করেছেন পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা। যা অন্যত্র ভাড়াও দেয়া হয়েছে। খালের এ অংশে  প্রায় দুই কিলোমিটারে পানিপ্রবাহ দৃশ্যমান নয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা খালটাকে খুব সুন্দরভাবে সাজাতে পারি যদি ভূমিদস্যুরা খালটা ছেড়ে দেয়। কারণ ভূমিদস্যুরা খালের অনেক জায়গা দখল করেছে এবং খাল দখল করে তারা তাদের ব্যক্তি মালিকানা জমির পরিমাণ বাড়িয়েছে। এখন খালের বর্জ্য অপসারণ চলমান থাকবে। উচ্ছেদের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ইব্রাহিমপুর খালের দখল উদ্ধারে ব্যাপকভাবে হাত দিয়েছি। সবগুলো খালই উদ্ধার করব। আমরা সিএস ম্যাপ ধরেই আগাবো।’ 

ইতিমধ্যে ওয়াকওয়ে নির্মাণ হয়ে গেছে, এসব ওয়াকওয়ের বাইরে অবৈধ স্থাপনা থাকলে তা উদ্ধার করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব অবৈধ স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হবে। আমরা সব খালেরই অবৈধ স্থাপনা পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করব।’ 

এদিকে দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার অনেকটা আগেই খাল নিয়ে কাজ শুরু করেছে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বাধীন ডিএসসিসি। আগামী মার্চের আগেই এই কাজগুলো শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে দক্ষিণ সিটি।

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং মুখপাত্র আবু নাছের ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জিরানী, মান্ডা ও শ্যামপুরে আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে। কালুনগর খালের পাশে একটা ছোট খাল ছিল। সেটির বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। ধানমন্ডি লেককে একটি খাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সেটির বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। সেটি হচ্ছে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল। ডিএনডি রোড সাইট খালের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। খালটি আমাদের কাছে ২০২৩ সালে হস্তান্তর করবে। কুতুবখালি খাল অনেক ছোট ছোট খালের সমন্বয়ে গঠিত। সেখানে সেনাবাহিনী উন্নয়ন কাজ চালাচ্ছে। বাকি চারটা খালে আমরা জুনের পর আমাদের কার্যক্রম শুরু করব।’

ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন বলেন, ‘ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে ডিএসসিসির মেয়র মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক শ্যামপুর, জিরানী ও মান্ডা খাল এবং পান্থপথ ও সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট থেকে বর্জ্য অপসারণ ও উত্তোলন করতে গিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি। পান্থপথ বক্স কালভার্ট থেকে বর্জ্য অপসারণ করতে গিয়ে কালভার্টের অভ্যন্তরে আমরা পাঁচ থেকে ১০ পুরুত্বের পচনশীল বর্জ্যের স্তর দেখতে পেয়েছি। এ কার্যক্রমটা বেশ জটিল ও দুরূহ। কিন্তু, তারপরও এই কার্যক্রম সম্পাদন করতে আমরা অব্যাহতভাবে প্রয়োজনীয় সব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করব।’

(ঢাকাটাইমস/০৬জানুয়ারি/কারই/জেবি)