জীবনের বলিদানে জীবনের জয়
করাতের খাঁজে খাঁজে যে জীবনের রক্তাক্ত শিহরণ,
সে জীবন ক্যামন জীবন?
শেয়াল ও শকুনের খাদ্য যে মড়ার জীবন,
সে জীবনকে জীবন দেয় কোন মতবাদ,
কোন মতাদর্শ, বিজ্ঞান, দর্শন?
রাতের দৈত্যের ঘায়ে দম টানে
যে জীবনের প্রতিটা জখমি সকাল,
অস্থির উদ্বোধনে যেখানে বাদ্য বাজায় নির্জীব কঙ্কাল,
সেখানে ক্যামন করে জীবনের শ্বাস হয় মৃত্যুর আড়াল?
যন্ত্রণার ছোবলে জিম্মি যে জীবন,
ডাঙ্গার বাঘের ভয়ে জলের কুমিরের কাছে
যে জীবনের ভাগ্য সমর্পণ,
জহর গেলার ভয়ে নিত্য সয় বিষাক্ত দংশন,
সে জীবনকে জীবন বলা কতোটা শোভন?
যেখানে পসরা সাজায় পতনের বিপণি বিতান;
জবরদখলি থাবার মাঝে যতোই উচ্চকিত
মুক্তির ক্ষীণকণ্ঠ স্লোগান,
সেখানে জীবন আনে উত্থানের কোন ফরমান?
কোন ধ্রুবতারা দেয় সোনাঝরা সকালের সন্ধান?
বাজপাখির নখরে ঝুলে আছে যে জীবন,
টিকটিকির কাটা লেজে যে জীবনের মোড়ক উন্মোচন,
হিজাবের ঘেরাটোপে বন্দী লিপস্টিকের যৌবনের মতো
যে জীবন আবডালে হয়ে যায় ফিকে,
কাকতাড়ুয়ার সঙ্গী হয় পেঁচা-চামচিকে;
সে জীবন আর কোন-সে জীবনের নতুন কাব্য লেখে?
হাতের মুঠোয় উবে গেলে কর্পূর-সুখ
প্রতিকূলে পেতে দেয়া সে মাঝির বুক
কোন কূলে ঠাই পায়?
মুক্তো হয়ে জ্বলবে কি সে-শিশির কণা
ফণীমনসার কাঁটায় কাঁটায় যার আদ্রতা শুকায়?
অকালেই মাঠে মারা গ্যাছে যে জীবন,
সে জীবনের জন্যে নেই সভ্যতার কোনো আকর্ষণ;
সে জীবনের জন্যে চাই যুতসই আরেক প্রবচন,
সে জীবনের জন্যে এখন আকুল আকুতি
মণি-কাঞ্চন যোগে চায় অকালবোধন।
বৃষ্টির জন্যে চাই দুরন্ত মেঘ,
প্রেমের জন্যে চাই অবাধ্য আবেগ,
চিতার আগুনে পুড়ে অঙ্ক-গণিত;
জীবনের জন্যে চায় স্বেদ ও শোণিত।
জীবনের স্পন্দন ছাড়া জীবনে পচন,
জীবনের বর্ম নয় আপ্ত বচন;
জীবনের বলিদানেই বিজয়ী জীবন।