দাদা-দাদির কবরের পাশে চিরঘুমে সেই স্কুলছাত্রী

প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ১১:০১

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে রাজধানীর কলাবাগানে বন্ধুর বাসায় গিয়ে বিকৃত যৌনাচারের ফলে অধিক রক্তক্ষরণে মারা যাওয়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ওই শিক্ষার্থীকে।

শনিবার সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কমলাপুরে জানাজা শেষে গোপালপুর কবরস্থানে দাদা-দাদির কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে গভীর রাতে ওই স্কুলছাত্রীর লাশ ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে নেয়া হয়। শেষবারের মতো তাকে দেখার জন্য ভোর থেকেই শত শত মানুষের ঢল নামে ওই বাড়িতে। লাশ দেখার সঙ্গে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেয়ের লাশ দেখে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন বাবা আল আমিন। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ওই এলাকার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে আসে।

সকাল ৭টা ৫ মিনিটে জানাজার জন্য লাশ নেয়া হয় গোপালপুর ঈদগাহ মাঠে। সেখানে ওই ছাত্রীর স্বজনরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। জানাজা অংশ নেয়া মানুষ বর্বরোচিত এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই স্কুলছাত্রীকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ডেকে লেক সার্কাস ডলফিন গলি পান্থপথ কলাবাগানের বাসায় নিয়ে যায় ফারদিন ইফতেখার দিহান। সেখানে ফাঁকা বাসায় মেয়েটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে দিহান। ধর্ষণের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে মেয়েটি অচেতন পড়ে। তখন বিবাদী ধর্ষণের বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য মেয়েটিকে নিয়ে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যায়। সেখানে মেয়েটির মৃত্যু হয়। সংবাদ পেয়ে কলাবাগান থানা পুলিশের একটি দল দ্রুত হাসপাতালে যায়।

খবর পেয়ে তরুণটির তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাদেরও আটক করে। পরে চারজনকে কলাবাগান থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ পরে স্কুলছাত্রীর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

এ ঘটনায় তানভীর ইফতেফার দিহানকে একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা আল আমিন আহম্মেদ। কলাবাগান থানা পুলিশ দিহানকে গ্রেপ্তার করেছে। ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দিহান ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। জবানবন্দি রেকর্ড করার পর ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।

এছাড়া গতকাল শুক্রবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে ওই স্কুলছাত্রীর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ফলে যৌন ও পায়ু পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা, তার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।’

ঢাকাটাইমস/৯জানুয়ারি/এমআর