কুহুর সঙ্গে মিথ্যে বিকেল...

সজল মাহমুদ
| আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:৫৩ | প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:৫১

ল ক্লাসে দুয়েক একবার দেখা লেখক-কুহুর। এরপর বহুকাল দেখা নেই, কথা নেই। পরে ফেসবুকে কুহুকে খুঁজে পায় লেখক। প্রথম দিকে হাই হ্যালো। এরপর কুহুর ব্যস্ততায় আর আগায়নি। লেখক চাচ্ছিল অন্তত বন্ধুত্বটা হোক তাদের। কারণ কুহুর ব্যক্তিত্ব তাকে ভিষণ রকম টানে। মুগ্ধ করে। হয়ত পছন্দ ও করে। সুযোগের অভাবে যা বলা হয় নি কখনো.....

হঠাৎ ই ম্যাসেঞ্জারে টেক্সট করে কুহু। দেখা করতে পারবে কিনা? লেখক অবাক, এরকম হুট করে দেখা করা যায় নাকি? তার অ্যাসাইনমেন্ট আছে, সময় চায়। কুহু না রাজ। লেখক কথা দেয় কাজ শেষে দেখা করবে। কারণ তার কুহু যে তাকে ডেকেছে। পৌষের শীত বিকেল। থেমেছে নাগরিক পাখিদের খুনসুটি। মেঘেরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে বাড়ি ফেরারা। শহরের বাইরে নতুন গড়ে ওঠা কংক্রিটের জঙ্গলে কুহুর আবাস। সেখানেই যখন পৌঁছায় লেখক তখন গোধূলি গড়িয়ে সন্ধ্যা। ম্যাটম্যাটে আলো আকাশে। চারদিকটা কেমন যেন থমথমে। অস্বচ্ছ। ঘোলাটে। এরই মধ্যে ল্যাম্প পোস্টের ম্লান আলোয় ফুটপাত ধরে হেঁটে আসে কুহু। মনে হয় কোনো যুদ্ধ ক্ষেত্রে থেকে পালিয়ে আসা বিধস্ত সৈনিক। আলুথালু চুল। বাসি চোখমুখ। রাজ্যের ক্লান্তি তার কণ্ঠে। এরকম কুহুকে লেখক চেনে না। ভয় পায়! কি এমন হলো? আসব বলে এতো দেরি করে কেউ আসে, প্রশ্ন কুহুর? বলে, তার সদ্য প্রাক্তন বিয়ে করেছেন ১৭ ডিসেম্বর।

এক বছরের উষ্ণ প্রেম ছিল তাদের। এর আগে প্রায় বছর চারকের বন্ধুত্ব। সেসবের অনেক স্মৃতি অনেক আবেগ অনেক স্বপ্ন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে কুহুকে। মুক্তি চায়, নতুন করে ভাবতে চায় এ জন্য লেখককে তার ভিষণ প্রয়োজন... তবে তা হতে হবে সামাজিক স্বীকৃতির মাধ্যমে। এর আগে যিনি কথা দিয়েছিলেন তিনি এখন অতীত। তাই আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধতে চান লেখককে.. আপাতত কুহুর শুধু এটুকই চাওয়া। বিবর্ণ পৃথিবী থেকে পালাতে পালাতে কুহু ভিষণ ক্লান্ত। তাকে কি লেখক একটু লুকোবার জায়গায় দিবে? হতে পারে সেটা বারান্দায়...কিংবা লেখকের চিলেকোঠায়...

লেখক ভাবে, মনের মধ্যে ডুব দেয়। এর আগে এতো প্রবলভাবে কেউ ডাকেনি তাকে। জীবন তাকে শিখিয়েছে অনেক কিছু। লেখক জানে তার জন্য কেউ অপেক্ষায় নেই। যাপিত জীবনে হয় সেকেন্ড চয়েজ না হয় রিপ্লেসেবল ছিলেন। কারো জন্য ম্যান্ডেটোরি না। তোমাকে বা তোকে লাগবেই কিংবা তোমাকে ছাড়া চলবেই না। চলো এক সঙ্গে বুড়ো হই এই টাইপের দাবি নিয়ে কোনো বন্ধু বা কোনো মানুষ লেখকের কাছে আসেনি কখনো। কারো সেকেন্ড চয়েজ বা অপশনাল হিসাবে বেঁচে থাকাটা অতোটা সুখের না, সম্মানেরও না। তবুও বাঁচতে হয়। বাঁচে।

তবে কুহু একটু অন্যরকম।তার মধ্যে আলাদা একটা শিহরণ আছে। হলুদ বিকেল, গোধূলি,রাত, নক্ষত্র, আধফোটা ফুল, আধফোটা আলোর মধ্যে কুহু কেমন যেন বেমানান। বড্ড অগোছালো। কিঞ্চিৎ কাঠখোট্টা। যদিও নিখুঁত লেখকের বরাবরই অপছন্দ। অগোছালোর আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে। একটা ঢিলেঢালা ভাব আছে... কুহু যে চিলেকোঠা চায়। সেই চিলেকোঠার কবে জন্ম বা কে আবিষ্কার করেছিলো তা লেখক জানে না। তবে মানুষ চিরকাল চিলেকোঠাকে ব্যবহার করেছে যা কিছু গোপন যা কিছু পুরানো তা আগলে রাখতে। যেখানে আলো এসে পৌঁছায় না... তাই লেখক বেঁচে নিয়েছে চিলোকোঠা।

এর আগে লেখকের কাছে যে এসেছে তিনিই তাকে ছেড়ে চলে গেছো তার স্বপ্নের কাছে। এখন লেখকের বেঁচে থাকাটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। জল ছাড়া আর কিছুর সঙ্গে সীমান্ত নেই। মাঝে মাঝে দুয়েকজন পর্যটক ভুল করে বেড়াতে আসে হারানো প্রেমের স্মৃতি ভুলতে। কুহু ও তেমন নয়তো... গাঢ় প্রতিক্ষার মতো রাত বাড়ছে! উঁচু বিল্ডিং এর কার্নিশে আধখানা চাঁদ ঝুলে আছে। লেখককে ফিরতে হবে...... আচ্ছা ওই আধখানা চাঁদ কি কখনো ও পূর্ণ হবে কুহুর জীবনে?

লেখক: সাংবাদিক

ঢাকাটাইমস/৯জানুয়ারি/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :