টিকার সুষ্ঠু বণ্টন ও অগ্রাধিকার তালিকা তৈরির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ২০:১২ | প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:৫২

যত দ্রুত সম্ভব করোনার টিকা দেশে আসতে পারে বলে সরকারের ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে টিকার সুষ্ঠু বণ্টন এবং কাদের টিকা প্রয়োগ করা হবে সঠিকভাবে সেই অগ্রাধিকার তালিকা করার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজ্ঞানসম্মত ও গ্রহণযোগ্য তালিকা না হলে জনঅসন্তোষ তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তারা।

একইসঙ্গে শুধু ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকেই নয়, বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যখাতের বিশেষজ্ঞরা। এজন্য অন্যান্য দেশের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর তাগিদ দিয়েছেন তারা।

শনিবার বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কনফারেন্স রুমে ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে আয়োজিত এক সংলাপে বিশেষজ্ঞরা করোনার টিকা প্রয়োগ নিয়ে নিজেদের শঙ্কার কথা জানান। তারা বলছেন, সঠিকভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারা টিকা পাবেন সেটা করা সম্ভব হবে টিকা প্রয়োগ করায় কোনো সমস্যা হবে না।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কারা অগ্রাধিকার পাবেন সেজন্য তালিকা হচ্ছে। তবে টিকা নেয়ার জন্য অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

বাংলাদেশ ফার্মাকোলজিক্যাল সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, কোভিড ভ্যাকসিন আজীবন প্রতিরোধ নিশ্চিত করবে না। টিকা আবিষ্কারে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নিজেরা ভ্যাকসিন উৎপাদন করা যায় কি না সেটা এখনই ভাবতে হবে। তা না হলে ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে সরকারে বাজেটের বড় অংশ চলে যাবে এই খাতে।

বিশ্বের অনেক দেশে করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার টিকা নিয়ে আলোচনা হলেও বাংলাদেশ অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা নেয়ার বিষয়ে চুক্তি করেছে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে আপাতত এই টিকার তিন কোটি ডোজ দেশে আনার সব প্রস্তুতি এর মধ্যে সম্পন্ন করেছে সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই মাসের শেষের দিকে টিকা আসতে পারে।

সায়েদুর রহমান বলেন, ‘করোনার টিকা বর্তমানে বৈশ্বিক পণ্যে পরিণত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার বিষয়টি। বিষয়গুলো নিয়ে নানা প্রশ্ন, কৌতূহল, সংশয় বড় হয়ে উঠছে। ভ্যাকসিন কারা পাবে তা বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু বণ্টন করতে হবে, যাতে বিষয়টি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।’

টিকা বণ্টনে বিজ্ঞানসম্মত ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, টিকা কারা পাচ্ছে সেটি ন্যায়সংগত না হলে জনমনে চরম অসন্তোষ বাড়বে।

তারা বলেন, প্রথমে মাত্র দেড় কোটি মানুষকে ভ্যকসিন দেয়া হবে। আসলে কোন দেড় কোটিকে দেয়া হবে এই বিষয়টি যতটা বিজ্ঞান ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং আমাদের দেশের প্রত্যেকটি শ্রেণি মিলে এভাবে যদি জিনিসটা না ঘটে তাহলে কিন্তু মানুষের আস্থা এটার ওপর কমে যাবে। ফলে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে।

টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখতে যাদের টিকা দেয়া হবে তাদেরকে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, যেহেতু এখনো দেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি তাই যাদের টিকা দেয়া হবে তাদের কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। যাতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।

সেরাম ইনস্টিটিউট ছাড়াও টিকার বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের মত দিয়ে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে সংশয় আছে টিকা কার্যকর হবে কি না তা নিয়ে। তাই মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

আরেক স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, অনেক টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন আনা হলো কিন্তু পরে যদি লোকজন তা না নেয় তাহলে অনেক বড় ক্ষতি হবে। তাই কত মানুষ টিকা নিতে প্রস্তুত সেটা দেখতে হবে। এছাড়া এত ভ্যাকসিন সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা আছে কি না সেই চিন্তাও করতে হবে।

ব্যবসার কথা চিন্তা করবে না এমন বেসরকারি খাতকে টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে সংযুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সরকার সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। সেব্রিনা জানান, প্রথম মাসে ২৫ লাখ মানুষের টিকা দেয়া হবে, তাদের অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত করতে কাজ চলছে।

অনুষ্ঠানে বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ক্ষোভের সুরে বলেন, কাদের টিকা দেয়া হবে, কীভাবে দেয়া হবে তা নিয়ে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেইভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। অথচ বিএমএ, স্বাচিবের সদস্যরা দেশজুড়ে কাজ করছে। চাইলে তারাও সহযোগিতা করতে পারবে।

টিকা নিয়ে দেশে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে এমন মন্তব্য করে বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, এই মুহূর্তে জনপ্রত্যাশা হচ্ছে টিকা পাওয়া। কিন্ত সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে কারা টিকা আনছে-সে নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এখানে বাংলাদেশ সরকার কেন সরাসরি টিকা আনতে পারলো না-এটা আমাদের জানার দরকার ছিল। আর এটা না জানলে এই প্রশ্ন থাকবেই।

দেশে একাধিক সোর্স থেকে টিকা আনার বিষয়ে তিনি বলেন, মডার্না এবং ফাইজারও এ দেশে ভ্যাকসিন বিক্রি করতে চায়। অথচ আমরা বলছি, তাদের টিকার উপযোগী চেইন কোল্ড আমাদের নেই। কিন্তু আমরা কি সত্যি তা মূল্যায়ন করে দেখেছি সেটা আছে কি নেই?

তিনি বলেন, ৭০ থেকে ৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রার কতগুলো ফ্রিজ আমাদের রয়েছে সেটাও আমরা জানি না, মন্ত্রণালয়ের তথ্য আমাদেরকে সঠিকভাবে দিচ্ছে কী না...।

তিনি আরও বলেন, একইভাবে ভ্যাকসিনের দাম একেক দেশে একেকরকম। আমাদের বার্গেইন ক্ষমতা কি এত কম। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন দেওয়া ওষুধকে অনুমোদন দেই। কিন্তু অন্যদেরকে রেজিস্ট্রেশন দেই না, তাতো নয়।

তিনি বলেন, রাশিয়া এবং চীনের দরোজাটা বন্ধ করে রেখেছি।তারা যদি আমাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে আসে, তাদের নিতে পারি, তাতে করে আমাদের বার্গেনিং পাওয়ার বাড়ে। অপরদিকে, আমাদের দেশে আমরা কেন ভ্যাকসিন বানাতে সক্ষম নই প্রশ্ন করে তিনি বলেন, গ্লোব বায়োটেককে কেন এতদিন পর অনুমতি দেওয়া হলো, তারা তো তার আগের রিপোর্ট জমা দিয়েছে, রিপোর্ট দেখতে এতদিন সময় লাগে না। আমি মনে করি মহামারীতে সবার ভ্যাকসিন নেয়া উচিত। এরমধ্যে কারা বিনামূল্যে পাবে তাও পরিষ্কার করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৯জানুয়ারি/বিইউ/ডিএম/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :