চাঁদের আলো রাতের কালো ঘুচায়; রাত ঘুচায় না
ভরা পূর্ণিমা রাতে নদীর জল-তরঙ্গের ঠোঁটে ঠোঁটে
জোছনার ঝিলিমিলি লিপস্টিক দেখে বলি,
স্নিগ্ধ রূপালি আভায় আমাকেও রাঙিয়ে তোলো।
তন্বি জোছনা পরীরা গা হেলিয়ে দুলিয়ে বলে,
আভায় রাঙতে হলে আমাদের উৎসে যাও।
জল ফড়িঙের স্বচ্ছ ডানায় জোছনার
ঝিকিমিকি খেলা দেখে বলি,
ঝকমকে আদুরে আলোয় আমাকেও ভরিয়ে তোলো।
ডানার দ্যোতিরা বলে,
দ্যোতিময় হতে চাও তো আমাদের শেকড়ে যাও।
রজনীগন্ধার শুভ্র পরাগের গালে জোছনার চুমো দেখে বলি,
আমাকেও ধন্য করো রজত চুম্বনে।
ওর জবানীতে ফরমাস, মমতার চুমো যদি পেতে চাও,
আমার মূলের কাছে আকুতি জানাও।
ঢেউয়ের দোলায় দোলা সাগর সফেনে এলোকেশী জোছনাকে
সমুদ্র স্নান করতে দেখে বলি,
আমাকেও তোমার জলকেলির সঙ্গী করো।
সাগর গর্জনে ভেসে আসে সেই পুরানো তাগিদ,
আমার সঙ্গে নাইতে চাও তো আগে যাও আমার আঁতুড়ঘরে।
লাল পাহাড়ের বুকের পাঁজরে
জোছনাকে অনুরাগের আলিঙ্গনে সুখ নিতে দেখে বলি,
আমাকেও বুকে জড়াও উষ্ণ অনুরাগে।
জবাব শুনতে পাই, তা হলে আগে যাও আমার সূতিকাগারে।
মেঘের সঙ্গে জোছনার লুকোচুরি খেলা দেখে বলি,
আমাকেও তোমার খেলার সঙ্গি করে নাও।
রূপোলি ফ্রকের ঝালর দুলিয়ে ফুটফুটে জোছনা-খুকো
আধো আধো আদুরে বোলে বলে,
খেলার সঙ্গি যদি হতে চাও, চাঁদ-মা’র কাছে চলে যাও।
রূপোলি আলোর সাগর মায়াবী চাঁদের কাছে আরজ করি,
আলোয় আলোয় ভরে দাও আদিগন্ত জনপদ
ঘুঁটঘুঁটে আঁধার গুহা ধন্য হোক তোমার কিরণের আশীর্বাদে
আলোর দুর্ভিক্ষ থেকে রাতকে উদ্ধার করো পরম মুগ্ধতায়,
হে অতিক্রান্ত শতাব্দীর চাঁদমামা!
রাতের কালি ঘুচানো চাঁদের ফালি
মুচকি হাসির আভা ছড়িয়ে বলে,
চাঁদের মোহিনী আলোর সম্মোহনে উদ্বেল হয়ে
মানুষ ভুলে যায় সেই চরম সত্য;
ধার করা আলোর কাছেই যে চাঁদের একান্ত আনুগত্য।
সত্যিকারের আলো যদি চাও,
যার ধার করা আলোয় চাঁদের রূপালি রূপ
সেই আদি নিদানের উৎস ভাণ্ডারে যাও;
রাতের গর্ভ থেকে যদি দিনের শিশুর প্রসব চাও
তবে সূর্যের উদয় চাও।
চাঁদের আলো রাতের কালো ঘুচালেও, রাত ঘুচায় না,
সূর্যের আলো মেঘের কালোতে লুকালেও
দিনকে গুঁটিয়ে অকালীন রাত জোটায় না।