সমন্বিত প্রচেষ্টায় ক্যানসার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে নারী ক্যানসার রোগীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের পরেই জরায়ুমুখের ক্যানসারের অবস্থান। তাই সঠিক পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, মূল্যায়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার আওতায় জাতীয় ক্যানসার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম এখন সময়ের দাবি।
শনিবার জরায়ুমুখের ক্যানসার সচেতনতা দিবসে ভার্চুয়াল আলোচনায় এ দাবি করেন বক্তারা।
দেশে ৫ম বারের মতো পালিত হচ্ছে জরায়ুমুখের ক্যানসার সচেতনতা দিবস। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় শনিবার ‘মার্চ ফর মাদার’ নামের মোর্চার উদ্যোগে এই দিবসটি পালিত হয়। এ ছাড়া পুরো জানুয়ারি মাস বিশ্বে জরায়ু মুখের ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসেবে উদযাপিত হয়।
এ বছরে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘এইচপিভি নামের দুষ্টু ভাইরাসকে জানুন’। দেশের নামিদামি স্ত্রীরোগ, ক্যানসার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই আলোচনায় অংশ নেন।
এতে বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার- আইএআরসি’র সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে নারী ক্যানসার রোগীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের পরেই জরায়ুমুখের ক্যানসারের অবস্থান। প্রতি বছর এই ক্যানসারে আট হাজার ৬৮ জন নারী নতুন করে এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যা নারী ক্যানসার রোগীর প্রায় ১২ ভাগ। এতে মারা যান ৫ হাজার ২১৪ জন।
আলোচনায় বক্তারা দুটি বিষয়ে জোর দিয়ে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। তা হলো- জরায়ুমুখের ক্যানসারের প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য জরুরি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। অন্যটির আমদানি বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। একাধিক কোম্পানির মাধ্যমে এই ভ্যাকসিন সহজলভ্য করতে হবে।
এছাড়াও সরকার আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা (GAVI) এর সহযোগিতায় গাজীপুর জেলার ৩৩ হাজার কিশোরীকে বিনামূল্যে এই ভ্যাক্সিন দিয়েছে যা সারাদেশে সম্প্রসারণের কথা ছিলো সেটা দৃশ্যমান করতে হবে।
বক্তারা বলেন, ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি যা প্রায় বিভিন্ন পর্যায়ের চার শতাধিক সরকারি হাসপাতালের ভায়া সেন্টারে চালু আছে, তা অসংগঠিত, হাসপাতালকেন্দ্রিক। একে সমাজভিত্তিক সংগঠিত রূপ না দিলে ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের এর আওতায় আনা সম্ভব হবে না। এর বাইরে সরকারি- বেসরকারি কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, এটা আশার কথা। তবে সঠিক পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, মূল্যায়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার আওতায় জাতীয় ক্যানসারের স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম এখন সময়ের দাবি, যা হবে সমাজভিত্তিক, সংগঠিত ও সম্পূর্ণ।
সভায় বক্তারা মত প্রকাশ করেন, কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়, চিকিৎসকসমাজ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্যান্য অংশীজন, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে সমন্বিত প্রচেষ্টায় ক্যানসারের পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি সম্ভব।
বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক টি এ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জননীর জন্য পদযাত্রার প্রধান সমন্বয়কারী ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে এইচপিভি ভাইরাসের সঙ্গে জরায়ুমুখসহ অন্যান্য ক্যান্সার ও নন-ক্যান্সার স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউর গাইনি অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা, জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের গাইনি অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রোকেয়া আনোয়ার ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি অনকোলজি ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা। কাশেফা খাতুন।
আলোচনায় অংশ নেন ওজিএসবির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রওশন আরা বেগম, বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী, কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবেরা খাতুন, ওআইডাব্লিউসির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনিষা সরকার, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শারমিন ইয়াসমিন, ক্যান্সার প্রতিরোধ ও গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মোসাররত সৌরভ, নারীপক্ষের প্রধান শিরিন হক, নাগরিক টিভির প্রধান প্রতিবেদক শাহনাজ শারমিন, রোটারি ক্লাব অব ঢাকা গোল্ডেন সিটির সভাপতি মাসুদ করিম ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রধান বজলুর রহমান।
(ঢাকাটাইমস/০৯জানুয়ারি/বিইউ)