ধর্ষণের পরিমাণ কম, এমন দেশকে অনুসরণ করতে হবে

ড. তানিয়া হক
 | প্রকাশিত : ১১ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:৩২

আমরা বহুবার সভা-সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠকে বলেছি, আলাপচারিতায় বলেছি, রিসার্চে বলেছি, লেখালিখির সময়ও লিখেছি। এ বিষয়ে প্রচুর লেখা এসেছে। এত কিছুর পরেও যখন ধর্ষিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের ছবি প্রকাশ করা হয়, তখন হতাশ হওয়া ছাড়া আর কী বলার থাকে!

সংবাদ মাধ্যমে মেয়েটির প্রকৃত নাম ও ছবি প্রকাশ করা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। এসব প্রকাশের মাধ্যমে গণমাধ্যম সমাজের কোন দিকটা সামনে আনতে চাইছে, আমার বোধগম্য হচ্ছে না। বরং যৌননির্যাতন এবং এ-সংক্রান্ত ঘটনার সামাজিক অনুঘটক, অবক্ষয়, জড়িত অভিযুক্তরা এসব ঘটনা পর্যন্ত কীভাবে আসছে তার ইতিহাস দেখা প্রয়োজন গণমাধ্যমের।

এ ছেলেটা আমাদের সমাজের, মেয়েটাও সমাজের। আমি দেখলাম ছেলেটার (কলাবাগানের ঘটনার অভিযুক্ত দীহান) বাবা-মা অবস্থাসম্পন্ন। ভদ্রঘরেরই হওয়া উচিত। একটা ছেলেসন্তান যখন এ ধরনের কাজ করে তখন তারা বাবা-মা খুব খারাপ মানুষ, এটা আমরা বলতে পারি না। তবে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করার জন্য বাবা-মায়ের দায়িত্বটা অনেক বড় একটা জায়গা। গণমাধ্যম কোনো ঘটনায় মেয়ের বাবা-মায়ের কাছে যান। আর কত? এটা তো থামানো যাচ্ছে না। আমাদের উচিত ছেলেটার আপাদমস্তক উন্মুক্ত করা।

আমরা বলছি এরা মানসিক রোগী। এরা যদি মানসিক রোগী হয় তাহলে মানসিক হাসপাতালে পাঠানা হোক। সুস্থ হয়ে তারপর সমাজে বসবাস করুক।

গণমাধ্যমের আর একটি বড় দায়িত্ব- এই ছেলেগুলো, যারা রেপ করে যাচ্ছে, তাদের ওপর স্টাডি করা। তারা কোন জায়গাটায় থেকে এ ধরনের ঘটনা শিখছে। একটা ছেলে কত দিন ধরে এ পর্যায়ে আসছে, এ ধরনের ঘটনায় জড়িত প্রতিটা ছেলের হিস্ট্রি বের করা দরকার। তাহলে আমরা মূল জায়গায় পৌছাতে পারব।

ধর্ষণের যে আইনটা হয়েছে, খুব ভাল হয়েছে। আমি বলব, এখন এটি বাস্তবায়ন করুন। কয়েকটি বাস্তবায়ন হলে যারা এসব কাজে জড়িত তারাই বলবে, এ কাজে আর যাব না জীবনেও।

বৃহস্পতিবার ঘটনায় পর মেয়ের মায়ের ইন্টারভিউ নেয়া হলো। ঘটনার বর্ণনা দেয়া হলো। ছেলে কোথায়? ছেলের বাবা-মা কোথায়? তারাও তো আছে।

তাদের ডেকে তাদের ওপেন করে দিলে তখন তারা সতর্ক হবে। এই ছেলেটাকে শাস্তি দেয়ার আগে তার আপাদমস্তক চিকিৎসা হওয়া দরকার। চিকিৎসা বলতে, সে কিভাবে এ অবস্থায় এসে পৌছাল? পকেটগুলো কোথায় কোথায়? কোথায় কি এমন কোলো ইস্যু রয়ে যাচ্ছে যা আমরা শনাক্ত করতে পারছি না? কারণ আমরা যখন আমরা কথা বলি, তখন আমরা বলি বাবা-মায়ের একটা দায়িত্ব আছে। কী দায়িত্ব আছে, সেটা আমরা বিস্তারিত বলি না। অনেক কিছু ধোঁয়াশা।

সমাজের সব ছেলে তো এ ধরনের কাজ করছে না। এই ছেলে যেহেতু করে তার মানে এই ছেলের কাহিনী ভিন্ন। ওই ভিন্ন কাহিনী আমাদের জানতে হবে। আমরা উপর্যুপরি কথা বলছি। ভেতরে প্রবেশ করিনি। নইলে এটিকে থামানো কঠিন।

ইউটিউবে অনেকে জঘন্য নাটক তৈরি করে ছেড়ে দিচ্ছি। আমাদের সাইবার ট্রিটমেন্ট এত জঘন্য কেন? যেকোনো মানুষ যেকোনো কিছু আপলোড করতে পারে। আপলোড কী করতে পারে, কী করতে পারে না, তার অবশ্যই একটা নিয়ম থাকা উচিত। তা নাহলে আমরা একটা অসভ্য সমাজ পাব। সভ্য সমাজ আর পাব না। আমরা যত দিন এ ধরনের অসভ্যতাতে টিকিয়ে রাখব, তত দিন উন্নয়ন টেকসই হবে না।

সব ছেলেমেয়ে যৌনশিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। এটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো ঘরেও প্রয়োজন। সাধারণত বাবা-মা এটা নিয়ে কথা বলছে লজ্জা পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তার সন্তানকে সেক্স এডুকেশন শেখাচ্ছে। কিন্তু একজন দরিদ্র মানুষ, যারা বস্তিতে বসবাস করে, তারা তার বাচ্চাকে কীভাবে শিখাবে? সে নিজেই তো জানে না। সুতরাং সেক্স এডুকেশনটা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা-সব স্থানে দরকার।

পৃথিবীর সব দেশে সমান হারে ধর্ষণ হচ্ছে না। আমেরিকা উন্নত দেশ হলেও সেখানে ধর্ষণের পরিমাণ ও হার বেশি। আবার বহু দেশে ধর্ষণের হার কম। যেসব দেশে ধর্ষণের পরিমাণ কম, তারা কী ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, তা আমলে নেয়া দরকার। ঢালাওভাবে কখনোই কথা বলা উচিত না। সবাই তো এক রকম না।

লেখক: অধ্যাপক, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :