মিজানুর রহমান খান: এক সাগরের বিশালতা
প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২১, ২১:২৮
চলেই গেলেন মিজানুর রহমান খান। কয়েকদিনের বেঁচে ফেরার লড়াই সন্ধ্যায় থেমে গেল মৃত্যুদূতের আগমনে। তার বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করছি। নিরন্তর দোয়া যেন পরম করুণাময় তার আরশের ছাঁয়ায় ঠাঁই দেন তাকে। তার পরিবারকে এ শোক সইবার ধৈর্য্য দান করুন; এ দোয়াও করছি প্রাণভরে।
২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আমার পেশাগত জীবন শুরু হয় প্রথম আলোর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এবিসি রেডিওর সংবাদ বিভাগে। প্রায় ৩০জন সংবাদ কর্মীর কর্মচাঞ্চল্যে প্রতিদিন মুখর থাকত এবিসি রেডিও এফএম ৮৯.২। প্রতিষ্ঠানটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে সবার স্নেহ ও ভালোবাসায় প্রতিনিয়ত ধন্য হয়েছি। সংবাদ লেখা, সম্পাদনা করা, আপডেট করা, কখনও কখনও রিপোর্টারদের সঙ্গী হয়ে অভিজ্ঞতা বাড়ানো, পরে টুকটাক রিপোর্টিংয়ের জন্য বাইরে যাওয়া সবই সানন্দে করেছি। এটা ছিল আমার জন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত। কারণ আমার পড়াশোনা প্রত্নতত্ত্বে। ফলে সংবাদের হাতেখড়ি থেকে যতটুকু জানাশোনা তার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল এবিসি রেডিওতে।
এবিসির কাজেই একটা ইন্টারভিউ নেয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল মিজানুর রহমান খানের। সিইও সানাউল্লাহ লাভলু ভাইয়ের নির্দেশে, রিপোর্টার আমীন আল রশীদ ভাইয়ের ব্যবস্থাপনায় আমার উপর দায়িত্ব পড়লো সাক্ষাৎকার গ্রহণের। উনারাই কথা বলে দিলেন, প্রশ্নও বলে দিলেন। আমার কাজ শুধু তার কাছে যাওয়া এবং রেকর্ডারে ধারণ করে আনা।
গেলাম প্রথম আলোর অফিসে। উনার লেখার ভক্ত আমি আগে থেকেই ছিলাম। সম্পাদকীয় পাতায় দেশের অল্প যে কজন লেখকের লেখা পাওয়া মাত্র পড়ি, মিস করিনা তার মধ্যে উনি একজন। ফলে তার জ্ঞানের গভীরতা সম্পর্কে একটু আধটু ধারণা আগেই ছিল। কিন্তু তার রুমে প্রবেশ করা মাত্র আমার ধারণা বদলে গেলো। যেন এতদিন এককাপ পানি দেখে একটা সাগর সম্পর্কে ধারণা করেছি। সৈকতে না দাঁড়ালে কী আর সাগরের বিশালতা অনুভব করা যায়?
তার রুম ভর্তি বই আর বই। বইগুলো রুমের মেঝেতে এখানে ওখানে গাদা করা। কিছু আবার চেয়ারে রাখা। আলমারিতে রাখার জায়গা নেই। তাই আপাতত ওই সমাধান। রুমে বসার চেয়ারটার ওই অবস্থা দেখিয়ে বললেন, দেখেন তো বইগুলো ঠিকঠাক মত রাখার ব্যবস্থা করতে পারিনি। আমি বললাম, অসুবিধা নেই। আমি বইগুলো নীচে রাখি? অনুমতি দিলে বইগুলো নীচে রেখে বসলাম। উনার বক্তব্য রেকর্ড নিলাম। জানালাম তার লেখা পড়ি নিয়মিত। চায়ের আমন্ত্রণ দিলে বললাম এটা আগে পৌঁছাই। পরে একদিন হবে নিশ্চয়ই।
আমাকে অনেকে ভালো পাঠক কিংবা 'গ্রন্থকীট' বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করলে আমি সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করি কিংবা অস্বীকার করি। আমার চোখে তখন ভাসতে থাকে প্রথম আলো অফিসে মিজান ভাইয়ের রুমটাই।
চোখের সামনে ভাসছে তার হাস্যোজ্জল বিনয়ী মুখ। আইনের ছাত্র না হয়েও সংবিধান ও আইন বিষয়ে এতটা জানাশোনা দেশের সাংবাদিকদের মধ্যে আর দ্বিতীয়টি নেই নিঃসন্দেহে।
মৃত্যুর অমোঘ বিধান মেনে তার না ফেরার দেশে যাত্রাটা নির্বিঘ্ন হোক, শান্তিময় হোক অনন্ত জীবন এই প্রার্থনা করছি।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী