সাক্ষাৎকারে আহমেদ রশিদ লালী

শক্তিশালী হয়েছে বলেই পুঁজিবাজারে আস্থা বেড়েছে

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ১২:৫১ | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:৫২

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ ও রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস

দীর্ঘদিন পর দেশের পুঁজিবাজার মন্দাবস্থা কাটিয়ে তার গতি ফিরে পেয়েছে। আশা করা হচ্ছে এই চলমান গতিশীলতা সামনের দিনেও বজায় থাকবে। পুঁজিবাজারের বর্তমান ইতিবাচক প্রবণতার পেছনে কী কী বিষয় অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে, এর ধারাবাহিকতা কীভাবে ধরে রাখা যাবে, ক্ষুদ্র ও বড় বিনিয়োগকারীদের করণীয় কী- এমন সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক আহমেদ রশিদ লালীর সাক্ষাৎকারে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ ও রহমান আজিজ

পুঁজিবাজারের বর্তমান ইতিবাচক ধারাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

২০১০ সালের ধসের পর আমরা কিন্তু গত দশ বছর ধরে, আজ এগারো বছর প্রায়, আমরা কোনো রকম বাজারের স্টাবিলিটি পাইনি। ফলে বাজার খুব ডিপ্রেস্ট একটা অবস্থায় ছিল। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে তো আরও ভয়াবহ অবস্থায় চলে গেল। ইনক্লুডিং ইনস্টিটিউশনের আওতায় যারা আছেন, সার্বিকভাবে সবার অবস্থা খারাপ। প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর অবস্থা খারাপ। ব্রোকারের অবস্থা খারাপ। স্টক এক্সচেঞ্জের অবস্থা খারাপ। একেবারে খারাপ অবস্থায় চলে গিয়েছিলাম আমরা। সেখান থেকে আবার মার্চ-মে পর্যন্ত একটা প্যানডেমিকের ধাক্কা এল। এই প্যানডেমিকের ধাক্কাটা আমাদের দুই মাস বন্ধ করে দিল। ফলে আরও সমস্যায় পড়ে গেল পুরো পুঁজিবাজার। সব স্টেক হোল্ডার।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় বাজার আবার প্রাণ ফিরে পেল। উনি যে ৬টা পয়েন্ট দিলেন, যেমন ২০০ কোটি টাকা করে প্রত্যেক ব্যাংকের বিনিয়োগ করতে হবে; ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করার নির্দেশ দিলেন যাতে তার নিচে শেয়ারদর না নামে। দুই মাস পর যখন বাজার আবার খুলল, তখন বাজারে এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর মধ্যে আর একটা কাজ হয়েছে, বিএসইসি নতুনভাবে পুর্নর্গঠিত হয়। নতুন চেয়ারম্যান একটা বিশাল কাজ করলেন, যা আমরা অনেক দিন ধরে চাইছিলাম। সেই কাজটা উনি করতে পেরেছেন সুন্দরভাবে। পুঁজিবাজারে আমরা যে সমন্বয়হীনতা দেখছিলাম, সেটা তিনি দূর করতে পেরেছিলেন।

পুঁজিবাজার নিয়ে আজকে বাংলাদেশ ব্যাংক খুব পজেটিভ। তারা পুঁজিবাজারের জন্য অনেক কাজ করছে। এটা সম্ভব হয়েছে বিএসইসির চেয়ারম্যানের তৎপরতার জন্য। ওনাদের (বাংলাদেশ ব্যাংক) সাথে তার একটা ভালো সম্পর্ক। পুঁজিবাজার নিয়ে ওনাদের বোঝাতে সক্ষম  হয়েছেন তিনি। পুঁজিবাজার যে দেশের একটা অর্থনীতির একটা স্তম্ভ, এটা থামিয়ে রেখে অন্য কোনো কিছু করা যাবে না- এই বিষয়টা বোঝাতে পেরেছেন তিনি।

দ্বিতীয় যে কাজটা হয়েছে, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সাথে একটা সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন চেয়ারম্যান। আর একটা কাজ করেছেন ডেট মার্কেটটাকে উনি সম্প্রসারিত করেছেন। উনি আসার পরে প্রায় আড়াই-তিন শ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন দিয়েছেন, যদিও এখনো এটা তালিকাভুক্ত হয়নি। পুঁজিবাজারে সেগুলো যখন তালিকাভুক্ত হয়ে যাবে, তখন পরিধিটা আরও বেড়ে যাবে পুঁজিবাজারের। পুঁজিবাজার বাড়ার সাথে সাথে ভলিউম বাড়বে। সব প্যারামিটার্স বাড়বে। ভালো হতে থাকবে।

তার সাথে যে কাজটা হয়েছে। সেটা হলো ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্ট কর্পোরেশন যেটা হয়েছে সিডিবিএল। ওইটার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তারপর এসএমই বোর্ড। এভাবে যে উনি কাজগুলো ৬-৭ মাসের মধ্যে করেছেন, এটা সত্যিই ধন্যবাদের দাবি রাখে। বাজারে সেটার প্রতিফলন ঘটছে, বাজারে সেটার একটা ইমপ্যাক্ট আসছে।

এসব ইতিবাচক ধারার ফলে বাজারের ওপর একটা আস্থা তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। বড় বিনিয়োগকারী যারা, হাই নেটওয়ার্কিং যারা, কর্পোরেট ইনভেস্টর যারা, এই সিচুয়েশনের ইনভেস্টর যারা, যারা সাইড লাইনে ছিলেন, বাজারের যারা কোনো কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না, তারা এখন কার্যক্রম শুরু করেছেন। এমনকি যে বিদেশিরা শেযার বিক্রি চলে গিয়েছিল, তারাও কিন্তু এখন অ্যাক্টিভিটি করার জন্য ইচ্ছাপোষণ করছেন। এই কাজগুলোর জন্য বাজারটা আমরা দেখছি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

আজকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জের চার-পাঁচ শ লিস্টেট কোম্পানি আছে। এই স্টক এক্সচেঞ্জগুলো কিন্তু এত দিন রিয়েল পুঁজিবাজার খুঁজে পায়নি। এখন আমরা একটা পটেনশিয়াল খুঁজে পাচ্ছি। আগামী দিনগুলোতে ২০২১ সালে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং পুঁজিবাজার আরও ভালো হবে। এখন পুজিবাজারে কারেকশন হবে, প্রফিট ট্রেডিং হবে, নানান জিনিস হবে। সুতরাং সেগুলো হতে হবে।

একটা জিনিস আমি বলি, আমাদেরকে বাজারের গতিতেই বাজারটাকে ছেড়ে দিতে হবে। বাজারকে যদি ইনটারেনশন করেন, ইনটারমিন করেন; বাজার অনেক বেড়ে গেছে, কোথায় যাচ্ছে- এমন আতঙ্ক-হতাশা ছড়ান,  তাহলে বাজার জীবনেও এগিয়ে যাবে না। যেটা বিগত ১০-১২ বছরে হয়েছে। সূচককে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সূচকটা একটু কন্ট্রোল করি, বাজারকে একটু ধরে রাখার চেষ্টা করি- এমন করলে আর যাই হোক পুঁজিবাজার হবে না। পুঁজিবাজার একটা স্তম্ভ। বাজারটাকে মনিটর করতে হবে। বাজারে যাতে কেউ ‘ব্যাড প্লে’ না করতে পারে, বাজারে কেউ যেন সুযোগ নিতে না পারে, সেটা দেখতে হবে। এ কাজ যারা করবে, তাদের ধরে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাহলে পুঁজিবাজারের আস্থার স্তরটা আরও বাড়বে।

বিনিয়োগের জন্য এখনকার অবস্থা ইতিবাচক কি না?

বিনিয়োগের পরিস্থিতি অবশ্যই ইতিবাচক। বিনিয়োগকারীরা কিন্তু অনেক সচেতন হয়েছেন। তারা এত হোঁচট খেয়েছেন যে এখন আমরা সবাই একটা পর্যায়ে বুঝি। একেবারে অবুঝের মতো না। তবে হ্যাঁ, এখনো কিছু কিছু জিনিস আছে। আমাদের বুঝতে হবে- কোন প্রাইসে আমাকে কিনতে হবে, কোনটা বেটার প্রাইস কেনার জন্য এবং কোন প্রাইসে বিক্রি করতে হবে। একটা গুজব এলো যে এই কোম্পানির এত দাম হবে, ওই কোম্পানির অত দাম হবে। এটা কেন হবে, এর কারণটা যতক্ষণ না আপনি জানেন, ততক্ষণ সেই কানকথা শোনার প্রয়োজন নেই। ভাবতে হবে কী কারণে এটা বাড়বে, কী কারণ থাকতে পারে, এটার গুডস, এটার ফিনানশিয়াল স্টেটসমেন্ট কাভার করে কি না- এই জিনিসগুলো দেখা উচিত। কাজেই আমাদের নিজেদের দেখে-বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। অন্যের কথা শুনে আমার টাকাটা বিনিয়োগ করে দিলাম পরে লোকসান হলো, সেটা তো আমারই লোকসান হলো। আমি তো তখন ওনাকে ধরতে পারব না যে ভাই আমার টাকা দাও। সুতরাং আমি চিন্তাভাবনা করে বিনিয়োগটা করব।

সাথে আমি আরও একটু বলতে চাই- আমরা যারা বিনিয়োগকারী আছি আমাদের কনফিডেন্স লেভেলটা আরও ভালো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ১০-১২টা আইপিও রিজেক্ট করেছে। তার মানে ওই সব আইপিওতে কারসাজি ছিল। আইপিও ছাড়ার জন্য যারা আবেদন করেছেন তাদের কাগজপত্রে কিছুটা দোষত্রুটি ছিল। যে কারণে বাতিল করেছে। আবার ভালো কিছু কোম্পানি এসেছে। রবির মতো মাল্টি ন্যাশনাল একটা জায়েন্ট কোম্পানি। টেলিকমের সেকেন্ড জায়েন্ট কোম্পানি। সুতরাং আমি বলব বাজারের জন্য, বিনিয়োগকারীদের জন্য যেটা ভালো হয় সেটা কিন্তু এসইসি ইতিমধ্যে করছে।

একজন বিনিয়োগকারীর কোন ধরনের জ্ঞান থাকা উচিত?

আমাদের দেখতে হবে বিগত পাঁচ বছরে যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছি তাদের পাঁচ বছরের ডিভিডেন্ট পে আউটের ইতিহাস। তারপর স্পন্সররা কেমন? এটার গ্রোথ রেট কেমন? কোম্পানি গ্রোথ করছে, নাকি স্থবির অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। কোম্পানির ফান্ড কোনো ডাইভার্সিং করছে কি না। বা ফিনান্সশিয়ালে কোনো ঘাপলা আছে কি না। সেটা অনেক ক্ষেত্রে দেখা বিনিয়োগকারীদের পক্ষে সম্ভব হয় না। অ্যাকাউন্টস স্টেটমেন্টে কোনো গোঁজামিল আছে কি না। সেটার জন্য আমি বলতে চাই। আপনার যে ব্রোকার সেই ব্রোকারের সঙ্গে একটু আলাপ করতে পারেন। কোম্পানির অ্যাকাউন্টস কেমন, প্রফিট্যাবিলিটি কেমন। ইপিএসটা অর্থাৎ আর্নিং পার শেয়ার কেমন। এই জিনিসগুলো দেখে বিনিয়োগে যেতে পারলে আশা করি ভালো হবে।

আপনার একটা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ না করে পোর্টফলিওটা ছড়িয়ে দিতে পারি। একটা জায়গায় যদি চারটা-পাঁচটা করতে পারি, তাহলে আমার রিস্ক ফ্যাক্টরটা অনেক কমে যেতে পারে। আমার রিস্ক ফ্যাক্টর কমে গেলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। তাহলে একটার সমস্যা অন্যগুলো দিয়ে কাভার করতে পারি।

বিনিয়োগকারীদের প্রতি ব্রোকারেজ হাউজগুলোর দায়িত্ব কী?

যারা নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন, তাদের বোঝাচ্ছি যে রিস্ক ফ্যাক্টরটা আছে। লাভ যেমন বেশি সেখানে, লোকসান হওয়ার রিস্কও আছে। তাদের মোটামুটিভাবে সচেতন করার চেষ্টা করছি। এটা আমাদের সাধারণ প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছে। এখানে একটা আইনগত বাধা আছে। আমরা পরামর্শ দিতে পারি না যে এই কোম্পানিটার শেয়ার আপনি কিনেন। তবে কেউ যদি আমাকে বলেন, ‘আমি অমুক কোম্পানিটার শেয়ার কিনতে চাই, আপনি এটার সম্পর্কে যে তথ্য জানেন সেটা আমাকে বলেন।’ তখন আমরা বলি। সব ব্রোকার হাউজ সেই পরামর্শ দেয়।

বিনিয়োগকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা সফল?

আমাদের বিআইসিএম আছে একটা। আর প্রশিক্ষণ দেয় সিকিউরিটিস এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। এই প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। অনেকগুলো প্রশিক্ষণ ফ্রিতে করানো হয়। অনেকগুলো প্রশিক্ষণ নিতে ফি দিতে হয়। আমার মনে হয় এসব প্রোগ্রামে যদি বিনিয়োগকারীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন, তাহলে বিনিয়োগকারীদের অনেক উপকার হবে। এরপর বলতে চাই বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েও কিন্তু ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। তার কারণ, আপনারা জেনে থাকবেন যে বাংলাদেশ এক্সচেঞ্জ কমিশন বুথ দেয়ার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুতরাং আমার কাছে মনে হয়, এ অবস্থায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে একটা সচেতনতা প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম করা উচিত।

আপনি কি মনে করেন পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার পথে হাঁটছে?

বাজারে ওঠানামা থাকবে সব সময়। তবে আমরা স্ট্যাবল বলি ওইটাকে, যেখানে বিশাল অংকের কারেকশন হয় না কিংবা যেখানে বাজারে বড় রকমের ধ্স হয় না। সেই অর্থেই আমরা স্ট্যাবল মার্কেট বলি।

আইপিও লটারি পদ্ধতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত আপনি কীভাবে দেখছেন?

লটারি না হলে কয়েকটা জিনিস থেকে হয়তো একটু বেরিয়ে আসা যাবে। যেমন ধরেন আমার কোম্পানির কথায় বলি, বারো শ জন আবেদন করে ১৩-১৪ জন পায়। কিন্তু সবারই তো একটা আকাঙক্ষা থাকে বাজারে বিনিয়োগ করি। প্রাইমারি মার্কেটে যারা নতুন আসেন, যারা প্রাইমারি মার্কেটের দিকে চেয়ে থাকেন, লটারিতে নাম না ওঠার ফলে তারা এই শেয়ারের লেনদেনের প্রথম দিন ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলে যেটা ২০ টাকা হওয়ার কথা সেটা ৮০ টাকা হয়ে বসে থাকে। কিন্তু সবাই যদি শেয়ারটা পেয়ে যায়, তাহলে প্রথম দিন যে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতা সেটা কিন্তু থাকে না। সেটা অনেকখানি লাঘব হয়। আইপিও হান্টার যাদের বলি, যারা শুধু আইপিওই করে, সেকেন্ডারি মার্কেটে আসে না, তাদের জন্য ভালো জিনিস এখানে আছে যে অন্তত ওনার বিশ হাজার টাকার ইনভেস্টমেন্ট থাকতে হবে সেকেন্ডারি মার্কেটে, তাহলে উনি আইপিওতে আবেদন করতে পারবেন। কাজেই শুধু আইপিও আবেদন করব আর সেকেন্ডারি মার্কেটে আমার অবদান থাকবে না, সেটা আর হবে না।  

দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করেন কি?

আমাদের দেশে ডেইলি ট্রেডার যারা, তাদের ৭০-৮০ শতাংশই ডেইলি ট্রেড করতে চায়। এবং করেও অনেক ক্ষেত্রে। আর ৫, ১০, ১৫ এমনকি ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি ইনভেস্টমেন্ট করে, এ রকম ২০ শতাংশের মতো আছে। এটা বিদেশে আবার উল্টো। বিদেশে ৮০ শতাংশই দীর্ঘমেয়াদি ইনভেস্টর, আর ২০ শতাংশ মাত্র ডেইলি ট্রেড করে যারা রিটেইলার।     

মাল্টিন্যাশনালসহ দেশের বড় কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ কি পর্যাপ্ত?

বাংলাদেশে আমাদের যে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো আছে, যেমন স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক। ইন্ডিয়াতে তারা লিস্টেড। অন্য সব দেশে তারা লিস্টেড। আমাদের দেশে তারা লিস্টেড না। আবার লিভার ব্রাদার্সও লিস্টিং হচ্ছে না, যেখানে সরকারের ৪২ শতাংশ শেয়ার আছে। কাজেই আমাদের লিস্টিং করার জন্য কিংবা তাদের বাজারমুখী করার জন্য চতুর্মুখী প্রয়াস লাগবে। সেটা কীভাবে? যেমন সরকারকে পলিসির কিছু ডাইরেকটিং দিতে হবে। তার সাথে কিছু সুযোগ দিতে হবে। আর স্টক এক্সেচেঞ্জের দুটাকেই মার্কেটিং করতে হবে। রবি এসেছে, ওয়ালটন এসেছে। শক্তিশালী মার্কেটিং হয়েছে বলেই তারা এসেছে। এছাড়া আমাদের বিএসইসিকে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। কিছু ছাড় দিতে হবে।

সামগ্রিক বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে বিএসইসি কতটা সক্রিয়?

বর্তমানে বিএসইসির নেতৃত্বে যারা আছেন, তারা কিন্তু বারবার একটা কথাই বলছেন, তারা বিনিয়োগবান্ধব এবং পুঁজিবাজারে যারা বিনিয়োগ করে সেই বিনিয়োগকারীদের জন্যই তারা কাজ করছেন। সেটা আমরাও দেখতে পাচ্ছি। বিনিয়োগকারীদের জন্য উনারা অনেক কাজ করছেন। যেমন বিনিয়োগকারীদের একটা দাবি ছিল যে মন্ম কোম্পানি নয়, ভালো কোম্পানির শেয়ার আনতে হবে। বিএসইসি ১২টা কোম্পানির আবেদন বাদ দিয়েছে, যেগুলো তারা মনে করেছে বাজারে আসা উচিত নয়। সুতরাং কিছু কাজ কিন্তু দেখা যাচ্ছে। বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের জন্য করছে। এই যে বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিওতে লটারি পদ্ধতি উঠিয়ে দিয়েছে, এগুলো তো বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে যাচ্ছে। তো এসব কাজ হচ্ছে। বিগত দিনে আমরা এমনটা দেখিনি, যেসব কোম্পানি দু-তিন বছর ডিভিডেন্ট দিচ্ছে না বা মনে হচ্ছে ফ্যাক্টরি চলছে না, সেখানে অবজার্ভার বসানোর। বর্তমান বিএসইসি সেটা করেছে।

করোনা পরবর্তী সময়ের অর্থনীতিকে চাঙা করতে পুঁজিবাজারের ভূমিকা কী?

আমার কাছে যেটা মনে হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব তাড়াতাড়ি রিভাইভ করেছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব তাড়াতাড়ি রিভাইভ করেছে। আমার মনে হয়, এর ধারাবাহিকতা চলবে। এক্সপার্টরা বলছেন, এপ্রিল মাস লেগে যেতে পারে। তবে আমার মনে হয়, অনেক আগেই চাকা পুরো ঘুরবে।

অনুলিখন: শেখ সাইফ।

(ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/মোআ)