নতুন জীবনের খোঁজে এক মা
পৌষ মানেই কনকনে শীত। কথায় আছে পৌষ মাসে মোষ (মহিষ) কাঁপে। আর শীতের রাতে ঠান্ডায় খোলা আকাশের নিচে থাকলে অবস্থা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। ছোট্ট সন্তানকে এই শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে নিয়ে বসে আছেন এক মা। মায়ের সামনে ওজন মাপার যন্ত্র। পাশেই ছোট্ট ছেলে স্লেটে চক দিয়ে লিখছে অ আ ক খ, A B C D, ১ ২ ৩ ৪।
অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে কারওয়ান বাজারের ফুটপাতে দেখা মিলল মা মিতালী রাণী দাশ ও তার ছোট্ট ছেলে দীপের। দ্রুত পায়ে হেঁটে বাসায় ফেরার তাগাদা, তারপরেও একটু দাঁড়িয়ে দেখলাম। মা তার সন্তানকে হাত ধরে লেখা শেখাচ্ছেন ল্যাম্পপোস্টের আলোয়। দীপের হাতের লেখা দেখে চোখ আটকে গেল।
মন চাইল একটু কথা বলি। অনুমতি নিয়ে কথা বলতেই জানতে পারলাম দীপের মা ১৯৯১ সালে নরসিংদীর মনোহরদী ডিগ্রি কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তারপর আর পড়ালেখা হয়নি। বিয়ে হয়ে যায়। দীপ যখন ছয় মাস পেটে তখন তার স্বামী নিরুদ্দেশ হয়। আর কোনো খোঁজ মেলেনি। খোঁজ মেলেনি বলতে আর ফিরে আসেনি। স্বামী ওজন মাপার মেশিন থেকেই আয় রোজগার করতেন। এখন স্বামীর সেই ওজন মাপার যন্ত্র তিনি নিয়ে রাস্তার পাশে বসেন। কিন্তু মায়ের চোখে ছেলেকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন।
স্বামীর ভিটেই যাননি কেন? এমন কথায় জানালেন অনেক কথা। বললেন, যে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, যে আমার সন্তান পেটে জানা সত্ত্বেও আমাকে ফেলে পালিয়ে গেছে তাঁকে কেন খুঁজতে যাব? এসব কথা না বাড়িয়ে শুধু বললেন, আমার জীবনে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। ওসব কথা বলতে চাই না। আমরা তিন বোন। মাঝে মাঝে তাদের সাথে যোগাযোগ হয়।
দীপের বয়স জিজ্ঞাসা করায় একেবারে দিনক্ষণ তারিখ হিসাব করে বললেন। চার বছর দুই মাস বয়স। দীপকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে মা জানালেন, আমার দীপকে লেখাপড়া শিখিয়ে একজন বড় কৃষি কর্মকর্তা বানাতে চাই। কারণ দেশ কৃষিকাজে অনগ্রসর। কৃষির আধুনিকায়ন প্রয়োজন। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির উন্নয়ন প্রয়োজন।
দৈনিক কেমন আয় হয় জানতে চাওয়ায় বলেন, কোনোদিন একশ টাকা আবার কোনোদিন হয়ই না। অনেক রাত হইছে এখনো এক টাকাও ইনকাম হয় নাই আজ। একজন সাংবাদিক টিনের এক রুমের ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন পশ্চিম তেজতুরী পাড়ায়। সেখানে বিনা পয়সায় থাকি।
ছেলেকে নিয়ে এই মা জানান, আমার ছেলেকে শিক্ষিত করতে চাই। মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। কিন্তু আমার একার পক্ষে সম্ভব না। হালদা ফাউন্ডেশনকে বলেছি। এজন্য অন্যের সাহায্য লাগবে। কেউ যদি এগিয়ে আসে তাহলেই সম্ভব।
(ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/এসকেএস/জেবি)