বাগেরহাটে ঘোড়া দিঘীতে ৫২ সুন্ধি কচ্ছপ অবমুক্ত

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ২১:৪০

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বাগেরহাটের ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদের ঘোড়া দিঘীর মিষ্টি (সাধু) পানিতে ৫২টি সুন্ধি কচ্ছপ অবমুক্ত করেছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের। বুধবার বিকালে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মালিকানাধীন ষাটগম্বুজ মসজিদের ঘোড়া দিঘীতে এই কচ্ছপ অবমুক্ত করেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক।

হারিয়ে যেতে বসা মিষ্টি পানির বিরল প্রজাতির এই কচ্ছপ রক্ষায় সংরক্ষিত এলাকায় বনবিভাগের বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিট এই উদ্যোগ নিয়েছে।

বনবিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) নির্মল কুমার পাল, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ষাটগুম্বজ মসজিদ ও যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান যায়েদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গত সোমবার খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলা বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী নিরাপদ সরকারের দোকান থেকে বিক্রির সময় ৫৩টি সুন্ধি কচ্ছপ উদ্ধার করে বনবিভাগের বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিট (ডব্লিউসিসিইউ)।

এসময় কচ্ছপ বিক্রেতা নিরাপদ সরকারকে (৬৯) ভ্রাম্যমাণ আদালত ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মুরগির দোকানের আড়ালে কচ্ছপের ব্যবসা করছিলেন বলে অভিযোগ বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের।

বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ৩৪ (খ) ধারায় নিরাপদ সরকারকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলা বাজার থেকে বিক্রি করার সময় ৩৯টি সুন্ধি ও কড়ি কাইট্টা কচ্ছপ উদ্ধার করে বনবিভাগের বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিট। তারা এসময় দুজনকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করে। বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের আওতাধীন অপরাধ দমন বিভাগ ২৩ জেলার বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণি উদ্ধার ও পাচার রোধে কাজ করছে।

খুলনার বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) নির্মল কুমার পাল সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন ধরনের প্রাণি উদ্ধার ও পাচার রোধে বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিট কাজ করছে। গোপন সংবাদে আমরা মঙ্গলবার খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা বাজার থেকে ৫৩টি জীবিত কচ্ছপ উদ্ধার করি। বিভিন্ন সময়ই আমরা কচ্ছপ, অতিথি পাখি এবং বিলুপ্ত প্রায় নানা প্রজাতির প্রাণি উদ্ধার করছি এবং এগুলো আবার প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দিতে কাজ করছি। এই ধারাবাহিকতায় উদ্ধার কচ্ছপগুলোকে নিরাপদে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমরা ঘোড়া দিঘিতে কচ্ছপগুলোকে অবমুক্ত করা হল।

তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ কিন্তু একটা ওয়েট ল্যান্ড। এখানে প্রাকৃতিকভাবেই কচ্ছপ ছিল। তবে বিগত দিনগুলোতে যথেচ্ছাচার শিকারের কারণে এখন এগুলোর সংখ্যা কমে গেছে। বন্যপ্রাণি আইন অনুযায়ী এগুলো শিকার সম্পূর্ণ নিষেধ। এই ঐতিহাসিক দিঘিগুলোতে এছাড়ার মাধ্যমে যেমন কচ্ছপগুলো রক্ষা হবে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হবে একই সাথে এখানে আসা দর্শনার্থীদের বিনোদনের ও একটা সুযোগ হবে।

ষাটগম্বুজ মসজিদ সংলগ্ন বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ  বলেন, ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদের পাশের এই ঘোড়া দিঘিতে বনবিভাগ যে সুন্ধি কচ্ছপগুলো অবমুক্ত করেছে, তা একদিকে যেমন জীববৈচিত্র্য রক্ষা করবে একই সাথে দর্শনার্থীদের আগ্রহেরও নতুন মাত্রা যোগ করবে। আমরা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বাগেরহাট জাদুঘর এগুলো দেখভালের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক বলেন, এই কচ্ছপগুলো এখানে ছাড়ার মাধ্যমে প্রকৃতিতে এগুলো সংরক্ষণের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা একটি বার্তা দিতে চেয়েছি। নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট হওয়া থেকে বাঁচানো এবং প্রাকৃতির পরিবেশ রক্ষা জন্য প্রধানমন্ত্রী যে কথাটি বলেন তারই একটি অংশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ। সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট অঞ্চল হিসেবে এখানে যেন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকে যেজন্য আমরা সবসময় সোচ্ছার থাকব। বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে একযোগে কাজ করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আমরা কাজ করে যাব।

(ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/এলএ)