এনআরবি ব্যাংকের আমিনুর ও দুই পরিচালক ছেলের অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:৪৭ | প্রকাশিত : ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:২৫

এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের অংশীদার আমিনুর রশিদ খান। বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, দেশ ট্রেডিং করপোরেশনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেরও মালিক তিনি। দেশের বাইরে দুবাইতেও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে তার। দুই ছেলে নাফিহ রশিদ খান এবং নাভিদ রশিদ খানের বয়স ত্রিশ পেরিয়ে কয়েক বছর। কিন্তু এরই মধ্যে বাবার কল্যাণে দুজনই বনে গেছেন এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছে ফ্ল্যাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতি, অনিয়ম, কর ফাঁকি এবং বিদেশে হুন্ডি কারবারের মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্ত গড়েছেন আমিনুর রশিদ খান ও পরিবার।

মানিলন্ডারিং মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চলছে অভিযোগের সত্যতা খোঁজার চেষ্টা। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছের অভিযুক্তদের ব্যাপারে তথ্য চেয়েছে দুদক। তাদের নামে দেশে-বিদেশে কোনো চলতি বা সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাব, স্থায়ী আমানত, শেয়ার, লকারসহ অন্যান্য ব্যাংক হিসাব থাকলে বিবরণী চাওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থাকলে সে তথ্যও চেয়েছে দুদক।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আমিনুর রশিদ খান এবং তার দুই ছেলে নাফিহ রশিদ খান ও নাভিদ রশিদ খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে। ওই অর্থে তারা বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ার কেনার পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির নামে বিদেশে পাচার করেছেন।

সূত্র আরও জানায়, এনআরবি ব্যাংকের আরেক পরিচালক এম বদিউজ্জামানের ব্যবসায়ী অংশীদার আমিনুর রশিদ খান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান ছাড়াও দুই ছেলের নামে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সার, কীটনাশক ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানি করে। তবে এর আড়ালে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চালান (ইনভয়েস) অতিমূল্যায়নসহ নানা কৌশলে বিদেশে অর্থপাচার করেন বলে অভিযোগ।

অভিযোগ আছে, আমিনুর রশিদ খানের ছেলেদের যখন এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক করা হয় তখন তাদের একজনের বয়স ছিল ২৫ বছর। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ধারা ১৫ এর উপধারা ৬ (অ) অনুযায়ী ব্যাংকের পরিচালক হতে হলে কমপক্ষে ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সেই ধারা তো লঙ্ঘন হয়েছেই, এমনকি নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে পরিচালক হিসেবে অনুমোদন না করলেও অবৈধভাবে তাকে পরিচালক পদে বহাল রাখা হয়।

দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আমিনুর রশিদ খান সিঙ্গাপুরকেন্দ্রিক হুন্ডি ব্যবসায়ের অংশীদার এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক এম বদিউজ্জামান, তার স্ত্রী নাসরিন জামান ও মেয়ে তানিয়া জামান। এই চক্রের আরেক সহযোগী ইউরোপের হুন্ডি ব্যবসায়ী ইদ্রিস ফরায়জী। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ। এর মাধ্যমেই বিদেশে অবৈধ উপায়ে অর্থপাচার করা হয় বলে অভিযোগ আছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দেশে-বিদেশে আমিনুর রশিদ খান এবং তার ছেলের নামে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে দেশ ট্রেডিং করপোরেশন, বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জব্বার জুট মিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি লিমিটেড, হাইড্রোকার্বন, এম ইশরাত হিমাগার লিমিটেড। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছে জেনট্রেড এফজেডই (ইন্টারন্যাশনাল কমোডিটি ট্রেডিং) ইউএই, কমোডিটি ফাস্ট ডিএমসিসি (ইন্টারন্যাশনাল কমোডিটি ট্রেডিং) ইউএই, লোচ শিপিং ইন্টারমিডিয়ারি এফজেই (ইন্টারন্যাশনাল কমোডিটি ট্রেডিং) ইউএই।

আমিনুর রশিদ খান এবং তার দুই ছেলের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানের দায়িত্বে আছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধান চলছে। গোপনীয়তার স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাবে না।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :