প্রার্থীর মৃত্যুতে সৈয়দপুরে ভোট স্থগিত

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:৫৮ | প্রকাশিত : ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:২৮

নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির গ্রাম সরকারবিষয়ক সহ-সম্পাদক আমজাদ হোসেন সরকার ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকার বাংলাদেশ বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

তার মৃত্যুতে ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠেয় সৈয়দপুর পৌর নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে একদিকে যেমন দীর্ঘ ৩০ বছরের পৌর মেয়র আমজাদ হোসেনের বিয়োগে শোককাতর হয়ে পড়েছে সৈয়দপুরবাসী, তেমনি অন্যদিকে ভোট গ্রহণের মাত্র দুই দিন বাকি অবস্থায় স্থগিত হওয়ায় প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে নির্বাচন তথা ভোট নিয়ে নতুন করে হিসাব-নিকাশও শুরু হয়েছে রাজনীতির মাঠে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রবিউল আলম জানান, রিটার্নিং অফিসার ও নীলফামারী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফজলুল করিম মেয়র পদে নির্বাচন বাতিল করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। গণবিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবেন ভোট হবে কি হবে না।

এদিকে মরহুমের পারিবারিক সূত্রে জানানো হয়েছে যে, আজ বিকাল নাগাদ মরহুম আমজাদ হোসেন সরকারের লাশ সৈয়দপুরে আনা হবে এবং আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমআ পাটোয়ারীপাড়াস্থ তার প্রতিষ্ঠিত মকবুল হোসেন বিএম কলেজ প্রাঙ্গনে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। তার মৃত্যুতে সৈয়দপুরের সর্বস্তরের রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়ীক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর সাবেক মেয়র ও সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আখতার হোসেন বাদলের জানাজা শেষে বাড়ি ফেরার পথেই অসুস্থ হয়ে পড়েন মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে পরের দিনই ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টজনিত চিকিৎসা চলছিল। এমতাবস্থায় তার লান্সে পানি জমাসহ কিডনিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। এরপর ১০ দিন আগে তার আবারও করোনা পজিটিভ হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে বাংলাদেশ বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এক সপ্তাহ যাবত সেখানে তিনি নিবিড় পরিচর্চায় ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি হওয়ায় লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এ অবস্থায় তিনি বুধবার সকালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী, ছেলে ও ভাইসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আমজাদ হোসেন সরকার সৈয়দপুর তথা রংপুর বিভাগের রাজনীতিতে একজন অনবদ্য ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে এ অঞ্চলের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র জন্য তার অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ১৯৫৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের পাটোয়ারীপাড়াস্থ সরকার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মকবুল হোসেন সরকার। স্থানীয় বাঙ্গালীপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি সৈয়দপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। ছাত্রজীবনে ছাত্র মৈত্রীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে সেখানে ছাত্র রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। পড়াশোনা শেষে তিনি সৈয়দপুরে এসে ওয়ার্কাস পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত হোন এবং ১৯৯০ সালে সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে তিনি সৈয়দপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সালে পর পর দুইবার জয়ী হন। এরপর তিনি ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি আবারও সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২০১১ ও ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচিত হন। এ পদে দায়িত্বরত অবস্থায় চলতি দ্বিতীয় দফার পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে তিনি আবারও মেয়র পদে প্রার্থী হন। তবে এবার তিনি বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এতে তিনি নারিকেল গাছ প্রতীক প্রাপ্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছিলেন। কিন্তু তাফসিল ঘোষণার পর থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। যে কারণে নির্বাচনের কোন কার্যক্রমই তিনি উপস্থিত ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি মারা যাওয়ায় সৈয়দপুর পৌর নির্বাচন স্থগিত হলো।

(ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :