সুনামগঞ্জে জেলে শ্যামাচরণ হত্যায় এবার আদালতে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ২২:০৮

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় সুনই জলমহলে এক জেলেকে হত্যা, ঘরে আগুন ও হামলার ঘটনায় ৬৩ জনকে আসামি করে এবার আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। নিহতের ছেলে সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি চন্দন বর্মণ এই মামলার আবেদন করেন।

মামলার অভিযোগে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সাংসদের ছোট ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকন ও তার বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মোবারক হোসেন মাসুদসহ ৬৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে সুনই জলমহালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর শনিবার ধর্মপাশা থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হন চন্দন বর্মণ। বৃহস্পতিবার ধর্মপাশা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন তিনি।

সংঘর্ষে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রাতেই ২৩ জনকে আটক করে ধর্মপাশা থানা পুলিশ। কিন্তু তাদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় দুজনকে ছেড়ে দিয়ে ২১ জনকে শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় রবিবার রাতে থানার এসআই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে ৬০-৬৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন।

আদালতে মামলাটি দাখিল করার পর বিচারক মিছবাহ উদ্দিন আহমদ বাদীর জবানবন্দি শোনেন। এ ঘটনা নিয়ে থানায় আর কোনো মামলা হয়েছে কি না, বিচারক জানতে চান। একই ঘটনায় থানায় একটি মামলা চলমান থাকায় থানা থেকে আদালতে প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আদালতে দাখিল করা মামলাটি স্থগিত এবং থানা থেকে প্রতিবেদন আসার পর এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আদেশ দেয়া হয়। বিবাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুল হাই তালুকদার ও আরফান আলী এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী রুহুল আমিন তালুকদার জানান, আদালত থেকে আদেশের কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। আদেশের কপি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি।

শ্যামাচরণ বর্মণকে(৬৫) হত্যা, জলমহালে আগুন ও হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের করা মামলায় বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠায় ধর্মপাশা থানা পুলিশ।

আটকরা হলেন- জেলার ধর্মপাশা উপজেলার পাইকরহাটি ইউনিয়নের বেখইজুরা গ্রামের মিয়াজ হোসেনের ছেলে জুয়াদ মিয়া(৫৫), একই গ্রামের সজল খানের ছেলে রনি খান(৩৫) ও শেলবরশ গ্রামের স্বপন চৌধুরীর ছেলে তানিন চৌধুরী(২৫)।

ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের মনাই নদের সুনই জলমহালটি জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনাধীন। ১৪২২ সাল থেকে ১৪২৭ সাল পর্যন্ত ছয় বছরের জন্য এটি ইজারা পায় সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ যথারীতি জলমহালটির খাজনা পরিশোধ করেন। তিনি সমিতির সদস্যদের বসবাস ও অন্যান্য কাজের জন্য জলমহালের পাড়ে খলাঘরসহ চারটি ঘর নির্মাণ করেন।

একই সমিতির সভাপতি দাবি করে সুবল বর্মণ(৩০) ১৪২৭ সালের খাজনা সরকারি কোষাগারে জমা দেন। তিন মাস আগে তিনি তার লোকজন নিয়ে জলমহালটির পাড়ে দুটি ঘর নির্মাণ করেন। জলমহালটি নিয়ে একই সমিতির দুটি পক্ষের উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় আদালতের আদেশে এটি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দুপক্ষের লোকজন জলমহালটিতে হামলা চালিয়ে এক পক্ষ অন্য পক্ষের খলাঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় সেখানে থাকা ১৫-২০ মণ জাল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়াসহ দুপক্ষের ৩০ জন আহত হয়। এ সময় সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য ও সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণের বাবা শ্যমাচরণ বর্মণ(৬৫) নিহত হয়।

এ ঘটনায় ওই রাতে ধরমপাশা থানা–পুলিশ সন্দেহজনক ২৩ জনকে আটক করে। পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় রবিবার রাতে থানার এসআই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে ৬০-৬৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা করে।

পুলিশের মামলার পর থেকে চারটি গ্রামের পুরুষ সদস্যরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন। ফলে পুরুষশূণ্য হয়ে পড়েছে বেখইজুড়া, সুনই, কুষ্টিবাড়িসহ চারটি গ্রাম। এসব গ্রামে বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। নারীরা রয়েছেন উৎকণ্ঠায়। এর মধ্যে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে ডিবির সহায়তায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, আমি ঘটনার দিন সুনামগঞ্জে ছিলাম তা সবাই জানে। আমারও দাবি এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হোক। যারা এই ঘটনায় জড়িত ছিল না, তারা যেন কোনো অবস্থাতেই কোনো রকম হয়রানির শিকার না হয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত একটি পক্ষ ফায়দা নেয়ার জন্য এই ঘটনায় আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানান এই সংসদ সদস্য।

ধরমপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের করা মামলায় আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো ছাড়াও শুক্রবার রাতে যে ২১ জনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাদের মধ্যে চারজনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণ গ্রামবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অহেতুক কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।

(ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :