শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে ফোনের পেছনে একাধিক প্রতারক চক্র

বোরহান উদ্দিন ও আশিক আহমেদ
| আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ১২:২৮ | প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:২৭

এক গ্রুপের কাজ ছিল রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাব ও নীলক্ষেতের বইয়ের দোকান থেকে টেলিফোন ইনডেক্স সংগ্রহ। আরেক গ্রুপ এসব ইনডেক্স থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে চাঁদা চেয়ে করত ফোন। নির্ধারিত নম্বরে চাঁদার টাকা পাঠানোর পর সংগ্রহ করত আরেকটি গ্রুপ। এভাবেই দিনের পর দিন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করে আসছিল একাধিক চক্র। চাঁদা না দিলে গুম-খুনের হুমকি দিত এরা।

কিন্তু যাদের নামে চাঁদাবাজি করা হতো তাদের কারো ব্যাপারেই সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এমনকি অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে ফোনকারীদের সঙ্গে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কোনো ধরনের যোগাযোগের তথ্যও মিলে না। অথচ দিনের পর দিন এভাবেই নীরব চাঁদাবাজি করত একাধিক চক্র।

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি এই প্রতারক চক্রের। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এদের সন্ধানে নামে ডিএমপির গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। পুলিশের জালে আটক হয় ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সেভেনস্টার গ্রুপের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করে আসা চক্রের ছয় সদস্য।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি উপ কমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন। তিনি জানান, গত ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বেল্লাল খান, রাকিব খান টিটুল, মো. আবদুল হান্নান, মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. সোহাগ এবং খোরশেদ আলম। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইল, সিমকার্ড ও নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, এই গ্রুপটি মাদারীপুর নারায়ণগঞ্জ ও বরিশাল কেন্দ্রিক কাজ করে। তাদের একটি গ্রুপ ঢাকায় রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও চাঁদাবাজি আইনে ছয়টি মামলাও রয়েছে।

২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার শীর্ষ ২৩ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করে। এদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা দেয়া হয় সেই সময়। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন জাতীয় সংসদে ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম প্রকাশ করেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে আত্মগোপনে যেতে থাকে এরা। অনেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। যদিও কে কোন দেশে অবস্থান করছে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।

জানা গেছে, দেশের ৬৫ সন্ত্রাসী বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের নানা দেশে পালিয়ে যায়। তাদের বিষয়ে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত প্রকৃত অবস্থান জানা সম্ভব হয়নি। তবে মাঝেমধ্যেই দেশের বিভিন্ন সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।

এদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিদেশে অবস্থান করলেও তাদের সহযোগীরা নানা সময়ে নানা অজুহাতে ব্যবসায়ী-গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে চাঁদা চেয়ে ফোন করে থাকে। এসব নিয়ে অনেকে আতঙ্কের কারণে চুপচাপ থাকলেও কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্মরণাপন্ন হয়ে থাকেন। সেভেন স্টার গ্রুপের নামে চাঁদাবাজির শিকার হওয়ার পর কক্সবাজারের এক ব্যবসায়ী পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পর এদের গ্রেপ্তার করা হয়।

যেভাবে চাঁদাবাজি করত ‘প্রতারকরা’

কীভাবে নিরীহ ব্যবসায়ীদের বোকা বানিয়ে এরা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদাবাজি করত সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেয় পুলিশ। পুলিশের ভাষ্যমতে, এই চক্রের একটি গ্রুপ ঢাকার নীলক্ষেতের পুরাতন বইয়ের দোকান, অফিসার্স ক্লাবসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে টেলিফোন ইনডেক্স সংগ্রহ করে দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে সরবরাহ করত। দ্বিতীয় গ্রুপটি সংগ্রহ করা নম্বরে ফোন করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে একাধিক হিসাব নম্বর, বিকাশে এবং নগদের নম্বর দিয়ে চাঁদার টাকা চায়্ তৃতীয় গ্রুপটি পরে ওই চাঁদার টাকা সংগ্রহ করে।

পুলিশ কর্মকর্তা ওয়ালিদ হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে কক্সবাজারের এক ব্যবসায়ীকে মোবাইল ফোনে টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দিলে তাকে ও তার ছেলেকে হত্যা-গুম করবে বলে হুমকি দেয়। ভয় পেয়ে তিনি প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দিতে থাকেন। ওই চক্রটি তার কাছে আরও বড় অংকের টাকা দাবি করলে তিনি অভিযোগ করেন। পরে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এরা কীভাবে বিকাশ কিংবা নগদের হিসাব নম্বর খোলে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘এরা বিভিন্ন নিরীহ লোকদের ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে হিসাব খোলে।’

(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/ডিএম/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :