লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌর নির্বাচনে পাপুলের ঘনিষ্ঠরা চান নৌকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:৫৯ | প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:৫৬

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন-প্রত্যাশীরা লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সদরের আংশিক) আসনের বিতর্কিত সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলের ঘনিষ্ঠজন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদেশে অর্থপাচার এবং জ্ঞাত আয় বর্হিভূর্ত সম্পদ অর্জনের দায়ে পাপুল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কুয়েতে মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে সে দেশেই কারান্তরীণ আছেন পাপুল।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশের অভিযোগ, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগ থেকে যে তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে তারা এক সময় বিতর্কিত সাংসদ পাপুলের সহচর বলে এলাকায় পরিচিত। দুর্নীতি দায়ে দুদক পাপুলের পাশাপাশি এই নেতাদেরও দুদক ডেকেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ থেকে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের জন্য তা ভালো হবে না। তাই তাদের ব্যাপারে দলীয় ইতিবাচক সিদ্ধান্তের আগে কেন্দ্রকে বিষয়টি যাচাই করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভোটাররা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার মেয়র পদে প্রার্থীর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে গত ৪ জানুয়ারি বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ গোলাম ফারুক পিংকু। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলার সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। এছাড়া পৌর আওয়ামী লীগ কমিটি ও নয়টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছয় প্রার্থীর মধ্যে একজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। পরে বাকি পাঁচজনের মধ্যে সমঝোতা না হওয়াতে সভায় উপস্থিত সবার সম্মতিতে জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা গোপন ব্যালেটের মাধ্যমে ভোট নেন।

তবে অভিযোগ উঠেছে, জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের তাৎক্ষণিক ভোট গ্রহণের বিষয়টি ছিলো লোক দেখানো। অর্থ বিনিময়ের মাধ্যমে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের পক্ষে সমর্থন নিয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের নেওয়া গোপন ব্যালেটের ভোটে সাবেক মেয়র রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান পেয়েছেন ২৮ ভোট, কাজী নাজমুল কাদের গুলজার ১৭ ভোট, হাজী ইসমাইল খোকন ১২ ভোট। তবে হারুনুর রশীদ ও গিয়াস উদ্দিন রুবেল কোনো ভোট পাননি। যারা ভোট পেয়েছেন, তাদের নিয়ে এলাকায় এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

অভিযোগ আছে, তাদের কারণে দীর্ঘ ১৮ বছর থেকে রায়পুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এমনকি সর্বশেষ পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ৮ বছর অতিবাহিত হলেও তাদের সিন্ডিকেটের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটির আলো দেখা যায়নি।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশ অভিযোগ করেছে, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক মেয়র রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী খোকনের আনারস প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। এ জন্য দলীয় প্রার্থী আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ পরাজিত হন। ১৯৯৮ সালে তিনি প্রথম মেয়র হন। পরবর্তী সময়ে তিনি এমপি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের সহচর হয়ে যান। তার কাছে পাপুলের বিপুল পরিমান অর্থ রক্ষিত আছে বলে অভিযোগ রযেছে।এসব অর্থের হিসাব চেয়ে ইতোমধ্যে দুদক তাকে চিঠি দিয়েছে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক মেয়র রফিকুল হায়দার বাবুল বলেন, ‘আমি একটি স্কুলের মিটিংয়ে আছি। পরে ফোন দিব।’

পাঠান ছাড়াও পৌর নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীর তালিকার রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী নাজমুল কাদের গুলজার। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কাজী জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহর আপন ভাই। কাজী জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহও পাপুলের অন্যতম সহযোগী। এ জন্য ইতোমধ্যে দুদক থেকে তাকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।

কাজী নাজমুল কাদের গুলজার পেশায় একজন দলিল লেখক। সেই সুবাদে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে তিনি দলিল লেখক সমিতির সভাপতি হয়েছেন। তার ভাই কাজী জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহ পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পাশাপাশি জাকের পার্টির আহ্বায়কের দায়িত্বেও আছেন। তাদের আরেক ছোট ভাই কাজী আরজুও পৌর কমিটির সদস্য। আর তার ভাই কাজী জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহর হাত ধরেই আলোচিত সংসদ সদস্য কাজী পাপুল রায়পুর পৌরসভায় আগমন করেন। যা আজ বিশ্বের কাছে কলঙ্কিত হয়ে আছে। বাকি বিল্লাহর পাপুলের কাণ্ডে জড়িত হয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এছাড়া দলের নামে চাঁদাবাজি, জমি দখল, লুটপাট, মসজিদের টাকা, সিএনজি চাঁদাবাজি করে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। যার কারণে দুদক থেকে সম্পদের বিবরণী জমার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাজী নাজমুল কাদের গুলজার নিজে দলিল লেখক সমিতির নামে মাসে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেন। তাই গুলজার পৌর মেয়র হলে তাদের অত্যাচার ও চাঁদাবাজিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ জনসমর্থনহীন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন অনেকেই।

কাজী নাজমুল কাদের গুলজারের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী ফোন রিসিভ করে বলেন, উনি বাসায় নেই। পরে যোগাযোগ করার জন্য বলব।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেক ব্যক্তির নাম ইসমাইল হোসেন খোকন। তিনি বর্তমান মেয়র। এছাড়া ১৮ বছর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী খোকনের পক্ষে কাজ করেন। তার কাছে আলোচিত সেই পাপুলের বিপুল পরিমান অর্থ রয়েছে। এ কারণে দুদক থেকে তাকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি ডাকাতিয়া নদী ইজারা দেওয়া এবং নদী দখল করে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাত করেছেন।

দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকে দলকে গতিহীন করে রেখেছেন। পৌর সভায় উন্নয়ন তো দূরের কথা, উল্টো পৌরকর ৭০ গুণ বৃদ্ধি করে আদালতে মামলায় হাজিরা দিচ্ছেন তিনি। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। ১৮ বছর সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকলে দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে তাকে পাওয়া যায় না। তাই তাকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দিলে তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান মেয়র ও রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন খোকন বলেন, ‘আমি এমপি পাপুল সাহেবের ঘনিষ্ঠ নই। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র এমপি হয়েছেন। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছি। বিদ্রোহীর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আদালতে আছি। পরে কথা বলব।’

তবে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ গোলাম ফারুক পিংকুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বর্ধিত সভায় ভোটের মাধ্যমে প্রার্থীদের তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এখন কেন্দ্র বিষয়টি দেখবে। কেন্দ্র যাকে দিবে তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন।’

দীর্ঘ ১৮ বছর থেকে দলীয় পূর্নাঙ্গ কমিটি না হওয়া অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক দিন থেকে কমিটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে করোনার জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি টাকা দিয়ে ভোট কিনে তা হলে তো কিছুর করার থাকে না।’

(ঢাকাটাইমস/১৭ জানুয়ারি/এইচএফ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যু

দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

জামালপুরে সাব-রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি, আওয়ামী লীগ নেতা কারাগারে 

টেকনাফের পাহাড় থেকে ধারাবাহিক অপহরণ, অস্ত্রসহ দুই অপহরণকারী আটক

তৃতীয় ধাপে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিবে সরকার: গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

দিনাজপুরে ছিনতাই হওয়া মালামালসহ চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার

বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে কাভার্ডভ্যান-লরি সংঘর্ষ, নিহত ১

দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবক নিহত

শ্রীপুরে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের আগুনে ৩ দোকান ভস্মীভূত

পাচারকারীর পায়ুপথে মিলল ৬টি স্বর্ণেরবার

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :