হাতুড়ে রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা দিয়ে কোনো কাজ হবে না

ফরহাদ মজহার
| আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:২৬ | প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:১৪

বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বাস্তবতাকে ভালোভাবে বোঝা , বাস্তবোচিত কাজের তত্ত্ব গড়ে তোলা এবং সামষ্টিক উদ্যোগ বেড়েছে। অর্থাৎ বাস্তব সমস্যার বাস্তব সমাধানের জন্য আগ্রহ কি আগের চেয়ে বেড়েছে? বোধ হয়। সেটা বুঝি আমার ইনবক্সে যে সব প্রশ্ন তাঁরা আমাকে করে থাকেন, সেখানে সচেতনতার মাত্রা আমাকে আকৃষ্ট করে। যেমন, চিন্তা পাঠচক্রে মার্কসের 'পুঁজি' যখন আমরা পড়ছিলাম সেখানে বেশ কয়েকজন প্রশ্ন করেছেন ভাই, মার্কসের অর্থশাস্ত্রেরও তো একটা পর্যালোচনা দরকার, তাই না।

মার্কস ইংল্যোন্ডে যে পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখে 'পুঁজি' লিখেছেন, পুঁজি কি আর সেই আগের অবস্থায় আছে? তাহলে? বিশেষত, একজন লিখেছেন, আপনি যখন বারবার 'পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নে'র কথা বলছেন, তখন গোলকায়নের কালপর্বে বিশ্বব্যাপী পুঁজির সংকট এবং অনিবার্য বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য দুনিয়ার শাসক শ্রেণির মরণপণ চেষ্টার আলোকে আমাদের তো পুরনো চিন্তার জগতে স্বেচ্ছা বন্দী হয়ে থাকলে চলবে না। নতুন ভাবে রাজনীতি নিয়ে ভাবতে হবে।

আলবৎ। একদম ঠিক। দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমরা মাঝ দরিয়ার কোনো দ্বীপে তো আর বাস করি না। বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতি একই সঙ্গে বিশ্ব ব্যবস্থার অন্তর্গত বিষয়। আঞ্চলিক হিসাব নিকাশেরও অধীন। বাংলাদেশের যে কোনো অর্জন কিম্বা ব্যর্থতার অনুরণণ সারা দুনিয়াতেই পড়বে। আমরা সম্পূর্ণ নতুন এক জগতে বাস করছি, সে সম্পর্কে আমাদের হুঁশিয়ার হতে হবে তাড়াতাড়ি। বাতিল, পুরনো কিম্বা হাতুড়ে রাজনৈতিক ধ্যান ধারণা দিয়ে কোনো কাজ হবে না।

কথাটা তুলছি এ কারণে তরুণদের মধ্যে নতুন ভাবে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হওয়ার তাগিদ বেড়েছে। যে জিজ্ঞাসা তরুণদে মধ্যে দেখি, সেই জজ্ঞাসার জবাব দেয়ার কঠিন কাজটা করতেই হবে। তাই না? তাদের প্রশ্নটা আমি গুছিয়ে পেশ করে রাখতে চাইছে, যাতে আগামিতে এসব নিয়ে আমরা লেখালিখি করতে পারি। যে সব কাজ অতি দ্রুত করা দরকার মনে হয়েছে তার একটা ছোট তালিকা দিচ্ছি। আমার উদ্দেশ্য যারা এই পোস্ট পড়ছেন তারাও ভাববেন এবং পরামর্শ দেবেন।

১. পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিকট বিপর্যয় কোভিড-১৯ এর মধ্য দিয়ে আরও ল্যাংটা হয়ে পড়েছে। সামনে ভয়ংকর বিপর্যয় ধেয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কাজ কার্ল মার্কস কিম্বা ক্লাসিকাল অর্থশাস্ত্রে পড়ে থাকা নয়। বরং দরকার অর্থশাস্ত্রের নতুন এবং মৌলিক পর্যালোচনার রাস্তাগুলো দ্রুত সাফ করা, যাতে নতুন বিপ্লবী চিন্তার দ্রুত উন্মেষ ঘটতে পারে।

২. টেকনোলজি বা কৃৎকৌশল কিভাবে আমাদের বদলে দিচ্ছে এবং বিবর্তনের অর্থে টেকনলজি একই সঙ্গে মানুষেরই বিবর্তন বা 'মিউটেশান' এই দিকটা আরো গভীরে বোঝার দরকার রয়েছে। অর্থাৎ একালে টেকনলজির বিচার ছাড়া 'মানুষ' এবং তার সম্ভাব্য কর্তাসত্তার চরিত্র আমরা বুঝব না। প্রতীকি ভাবে বলি, স্মার্ট ফোন হাতে যাকে এখন নিত্যদিন দেখি সে আসলে কে?

টেকনলজির মধ্যেই মানুষের কর্তা সত্তা নিষ্পন্ন হচ্ছে। এই নতুন মানুষকে চিনব কি করে? 'না চিনলে মানুষের মুক্তি, স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে বিস্তর বকোয়াজি করা যাবে, কিন্তু লাভের লাভ গুড়ে পিঁপড়া! আর কিছু হবে না। আমরা একই সঙ্গে স্বেচ্ছায় মেশিন বা গেজেটের দাসে পরিণত হয়েছি। হ্যাঁ, স্বেচ্ছায় সেটা ভীতিকর। এই দাসদের মুক্তি ঘটবে কি উপায়ে? নাকি 'নাজাত' বা 'মুক্তি' নামক রিলজিয়াস ধারণার মধ্যেই গভীর গোলমাল রয়ে গিয়েছে।

৩. 'সর্বহারা' কথাটা এখন আর শুধু অর্থনৈতিক ভাবে ভাবলে চলবে না। সর্বহারা পুঁজিতান্ত্রিক দুনিয়ায় এখনও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের এজেন্ট বটে, কিন্তু তার জ্ঞান এবং স্মৃতি শক্তি মেশিনের করায়ত্বে। অর্থাৎ জ্ঞান এবং স্মৃতির দিক থেকেও মানুষ সর্বহারায় পরিণত হয়েছে। এটা ভয়াবহ একটা পরিস্থিতি।

৪. 'দেশ', 'রাষ্ট্র', 'সার্বভৌমত্ব' ইত্যাদি পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের যুগে একান্তই পুঁজির বিচলন ও বিনিময়ের উপায়ে পর্যবসিত নতুনভাবে বিন্যস্ত স্ট্রাকচার মাত্র। প্রতিটি ধারণারই কঠোর পর্যালোচনা দরকার। আরও ভাবুন। আরও যোগ করুন।

লেখক: কবি, কলামিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী

ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :