ভ্যাকসিন নিয়ে সহজ পাঠের কথা

ড. পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
 | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:২০

কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে অযথা নানারকম গুজব ছড়ানো হচ্ছে, এবং একশ্রেণীর মিডিয়া তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে। যা মিডিয়ার স্বভাব। তার ওপর আছে আজকের সম্পূর্ণ অনিয়ন্ত্রিত বেসরকারি মিডিয়া ব্যাঙের ছাতার মতো। টাকা থাকলেই মিডিয়া করা যায় আজকাল। শিক্ষাও লাগেনা, এথিক্স বা ন্যায়নীতিও নয়। পটেটো চিপ্সের মতোই খবর ও গুজব কেবলমাত্র একটি পণ্য -- যার থেকে মুনাফা করাই একমাত্র উদ্দেশ্য। সে টিভিই বলুন, কাগজ বলুন, সিনেমা, অথবা সোশ্যাল মিডিয়া।

এখানে আমেরিকাতেও ভ্যাকসিন নিয়ে একটা শক্তিশালী চক্র গুজব ছড়িয়ে এসেছে এতদিন। এই ভ্যাকসিন নাকি একটা সরকারি ষড়যন্ত্র -- এর মাধ্যমে নাকি বিল গেটস-জাতীয় লোকেরা মাইক্রোচিপস মানুষের শরীরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, যাতে আমাদের ডিএনএ বদলে যায়, বা নানারকম রোগ সৃষ্টি হয়। বলাই বাহুল্য, এর পিছনে কোনো বিজ্ঞান নেই। শুধু আছে মানুষকে ভুল পথে চালিত করার খেলা। বিজ্ঞানকে অস্বীকার করার রাজনীতি। যা আমাদের দেশেও আমরা দেখে আসছি।

এর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। এই কাজের কয়েকটি পদক্ষেপ আছে। (১) বিজ্ঞানের দিকটা সহজ ভাষায় মানুষকে বোঝানো। (২) ভ্যাকসিন নেওয়া। এবং (৩) ঠিক মাস্ক পরার মতোই বা সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলার মতোই ভ্যাকসিনের সুফল কী কী হয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখানো।

এই তিনটি পদক্ষেপের বাইরেও এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে আমাদের অরাজনৈতিক এবং অলাভজনক সংগঠন প্রজন্মের পথের দুজন সদস্য। ইমরোজ রেজা ও তাঁর স্ত্রী শাহানাজ রেজা বিজ্ঞানীদের পরীক্ষামূলক ক্লিনিকাল ট্রায়ালে স্বেচ্ছায় ভ্যাকসিন নিয়েছেন সম্প্রতি, যা এই ভ্যাকসিন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আগে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। আমাদের দেশে বা এখানে আমেরিকায় এমন স্বেচ্ছাসেবী পাওয়া দুষ্কর। বিশেষ করে এই গুজব ছড়ানোর দিনে।

এই দম্পতি শুধু যে বিজ্ঞানের বার্তা বহন করে নিয়ে যাওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করেছেন, তাই নয়। তাঁরা আরো বেশি ঝুঁকি নিয়েছেন, কারণ, তাঁদের দুটি শিশুসন্তান আছে। কিন্তু এই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের বিষয়ে তাঁরা এতই নিশ্চিৎ ছিলেন যে এই কাজ করতে তাঁরা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নি। মানবসভ্যতার প্রগতির ইতিহাসে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো যদি এক একটা মাইলস্টোন হয় -- যেমন পোলিও ভ্যাকসিন অথবা রেডিও বা বিদ্যুৎ বা সংখ্যাতত্ত্ব, ঠিক তেমনি সেই আবিষ্কারগুলোর পিছনে এই সাহসী স্বেচ্ছাসেবীরাও এক একজন হিরো। আমি ইমরোজ ও শাহনাজকে বাহবা জানাই।

আমি ও আমার স্ত্রী দুজনেই বহুকাল বিজ্ঞানচর্চা করেছি -- ভারতে এবং আমেরিকায়। দুজনের দুটো পি এইচ ডি ডিগ্রি আছে। আমি সংক্রমণ ও বীজাণু নিয়েও গবেষণা করেছি একসময়ে, এবং আমার স্ত্রী করেছে মলিকুলার বায়োলজি ও জেনেটিক্স'এর কাজ। আমরা দুজনেই ভ্যাকসিন নিতে সবাইকে অনুরোধ করছি।

যেসব ছোটোখাটো ঘটনা ঘটছে, তা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ঘটছে -- যে বিষয়ে সতর্ক থাকা আবশ্যক। অথবা, জনসংখ্যার তুলনায় তা অতি নগণ্য। গুজব কোম্পানিগুলো ও ব্যাঙের ছাতা মিডিয়া তা বাড়িয়ে বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। কোনো ভ্যাকসিনই ১০০% মানুষকে ১০০% নিরাপত্তা দিতে পারবেনা। কিছু কিছু মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে। কিন্তু যদি ৯৫% বা ৯০% মানুষ এই সংক্রমণের হাত থেকে, মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচে, তাহলে তা এক বিশাল ব্যাপার। যে জরুরি ভিত্তিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ভ্যাকসিনগুলো আবিষ্কার করা হয়েছে হাজার পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে, তাকে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই।

আমাদের পরিবারের অনেকেই ফাইজার ও মডার্না কোম্পানির প্রতিষেধক নিয়েই নিয়েছে এখানে। আমরাও পেলেই নিয়ে নেবো। আপনারাও নিয়ে নিন। তারপরেও সমস্ত সাবধানতা মেনে চলতেই হবে। বিয়েবাড়ি বা ফুটবল মাঠে এখনো আগের মতো ভিড় করে যাওয়ার সময় আসেনি। অস্ট্রেলিয়াতে, নিউজিল্যান্ডে এসেছে। কোরিয়া, জাপানে, নরওয়ে, ফিনল্যাণ্ড, কিউবা, ভিয়েতনামে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশ, ভারত, আমেরিকায়, ইংল্যাণ্ডে আসেনি। আমরা অনেক পিছিয়ে।

ভ্যাকসিন বিজ্ঞান সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত। যারা একে উড়িয়ে দিচ্ছে, হয় তারা মূর্খ, নয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনীতি করছে।

প্রজন্মের পথ সংগঠনের পক্ষ থেকে

ড. পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

ব্রুকলিন, নিউইয়র্ক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :