স্বাধীনতা: অশ্রুর অস্ত্রে তোমাকে যায় না পাওয়া

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৩৭

নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

তোমাকে না পেয়ে আমিই হারিয়ে গেছি;

আমি কে, সেই পরিচয়ই গেছে মুছে,

নিজেকে খুঁজেছি ঘোরের ভূতের দেশে;

খুঁজবো কোথায়! সে দিশাও গেছে ঘুচে।

সাগর যেমন নোনা জলের সংসার;

আমারও তেমনি নোনা জলের চোখ,

অশ্রুকে আমি করেছি নিজের দোসর

দেখতে চেয়েছি তোমার উজল মুখ।

মায়ের আঁচলে মাথা গুঁজে রাখি স্নেহে,

ভাত না-জোটার আক্ষেপ নিষ্ফল;

সম্মোহনের চালান মগজে দেহে,

আমাকে বেঁধেছে গোলামির শৃঙ্খল।

কোন রাক্ষুসে দ্বিজাতিতত্ত্ব-নীতি

আমাকে রেখেছে গো-মেষের মতো পুষে,

দূরান্তের এক ভাইরূপি গিরগিটি

আমার শিরার রক্ত খেয়েছে চুষে।

আমিতো চেয়েছি আমার ঘামের দাম

আম-মানুষের রায়ের যোগ্য মান,

আর তক্ষুনি বারুদ বোমার হুংকার;

গর্জে উঠলো বুলেট মেশিনগান।

জ্বলে উঠেছিলো আগুনের ফুল-ফুলকি

একাত্তরের সে রাতে মায়ের চোখে,

মায়ের আঁচল বাতাসে উড়িয়ে বলে,

এই পতাকাই জড়িয়ে নে তোর বুকে।

যতো তুই বসে কাঁদবি মায়ের কোলে

ততো তোর পায়ে বাঁধা হবে জিঞ্জির,

তোর পরিচয় লেখা আছে তোর রক্তে

সেই রক্তে আগুন জ্বালালে; মুক্তি।     

অশ্রুর অস্ত্রে মেলেনা যুদ্ধজয়;

অশ্রু কেবল মর্ম বেদনা বাড়ায়,

অশ্রু মানেই আত্মবলের ক্ষয়;

নিজ পরিচয় সাহারার ঝড়ে হারায়।  

তোমাকে না পেয়ে কেঁদেছি যুগান্তর

অপেক্ষাকে উপেক্ষা করেছে সময়,

অবশেষে আমি ছেড়েছি নিজের ঘর

দেশ পাবো বলে হয়েছি দেশান্তর।

মুক্তিমন্ত্রে মননে জ্বেলেছি নেশা,

রক্তের আখরে এঁকেছি পথের দিশা,

সেই পথ ধরে তুমি এলে স্বাধীনতা

কাটলো আমার দু’যুগের দুর্দশা।

এখন আমি পেয়েছি আমার নাম,

আমার জমিনে চালাই আমারই লাঙল,

আমার ঘামে আমিই ফলাই ফসল,

পদ্মা মেঘনা যমুনা আমারই জল।

কোনো ঘুঘু আর যদি খেয়ে যায় ধান

আবার যদি বর্গীরা দেয় হানা,

স্বনামে বেনামে যেরূপে যখন পাবো

আমরাই ওদের ম‍ৃত্যুর পরোয়ানা।

‘অশ্রুর অস্ত্রে মেলেনা যুদ্ধজয়’

এই মন্ত্র মননে রয়েছে গাঁথা,

দমের অস্ত্রে দস্যু-দানব রুখে

রক্ত কণায় লিখে নেবো ‘স্বাধীনতা’।